Editorial

ছেলে খেলা

সম্পাদকীয় বিভাগ

Editorial


মমতা ব্যানার্জির সরকার এবং রাজ্য নির্বাচন কমিশনের দুই গালে কষিয়ে থাপ্পড় মেরে দেশের সর্বোচ্চ আদালত রাজ্যে ফেরত পাঠিয়ে বলে দিয়েছে কলকাতা হা‍‌ই কোর্ট যেমন যেমন বলেছে সেইমতো কাজ করতে। নির্বাচন কমিশনকে এটাও স্মরণ করিয়ে দিয়েছে অবাধ, শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষভাবে নির্বাচন করানোই কমিশনের কাজ। কেন কেন্দ্রীয় বাহিনী আসবে, কোথা থেকে বাহিনী আসবে, কেন্দ্রীয় বাহিনী না ভিন্‌ রাজ্যের বাহিনী সেসব নিয়ে মাথা ঘামানোর প্রয়োজন নেই। তেমনি রাজ্য সরকারের উদ্দেশ্যে বলেছে কেন্দ্রীয় বাহিনীর খরচ জোগাবে কেন্দ্রীয় সরকার তাহলে কেন্দ্রীয় বাহিনীতে রাজ্যের আপত্তি কেন।
আসলে মমতা ব্যানার্জির সরকার যেকোন নির্বাচনেই কেন্দ্রীয় বাহিনীর ঘোরতর বিরোধী। দলদাস রাজ্য পুলিশকে দিয়ে দলের প্রয়োজন অনুযায়ী সব কিছু করানো যায়। কিন্তু কেন্দ্রীয় বাহিনীকে দিয়ে সেটা সম্ভব নয়। তাই কেন্দ্রীয় বাহিনী ঠেকাতে তিনি সর্বশক্তি নিয়োগ করেন। ২০১৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচন অবাধ, শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষভাবে করার লক্ষ্যে তৎকালীন নির্বাচন কমিশনার মীরা পান্ডে তুমুল লড়াই চালিয়েছিলেন রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে। শাসক দলের চরিত্র তিনি জানতেন। তারা যে অবাধ ও শান্তিপূর্ণ ভোট হতে দেবে না, সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে, হিংসা ছড়িয়ে পঞ্চায়েত দখলের সর্বাত্মক অভিযান চালাবে সেটাও তাঁর জানা ছিল। এটাও তিনি জানতেন রাজ্য পুলিশ শাসক দলের পরিকল্পনা অনুযায়ী ভূমিকা পালন করবে। তাই তিনি কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে ভোট করার পক্ষে জোরালো অবস্থান নেন। কিন্তু রাজ্য সরকার কোন অবস্থাতেই কেন্দ্রীয় বাহিনী আনতে দেবে না। নির্বাচন কমিশন হাইকোর্টে যায় রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের জন্য। হাইকোর্ট পেরিয়ে মামলা গড়ায় সুপ্রিম কোর্টে। সুপ্রিম কোর্ট কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে ভোট করার পক্ষে রায় দেয়।
২০১৮ সালে নির্বাচন কমিশনার ছিলেন এক মেরুদণ্ডহীন অনুগত। ফলে সরকার যখন যেমন চেয়েছে তিনি তেমনভাবেই নিজেকে সঁপে দিয়েছেন। ফলে কেন্দ্রীয় বাহিনী আনার ব্যবস্থা হয়নি। নির্বাচন কেমন হয়েছে সকলেরই জানা। ভারতের ইতিহাসে এমন যথেচ্ছ নিকৃষ্ট নির্বাচন কোথাও হয়নি। নির্বাচনের নামে প্রহসন হয়েছে। হিংসার আগুনে গণতন্ত্র পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। মানুষের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে। ভোট গ্রহণের প্রয়োজন হয়নি বেশিরভাগ জায়গায় শাসকের জয় সুনিশ্চিত হয়েছে এমনিতেই।
এবারে নির্বাচনে কমিশনের হয়ে এসেছেন মুখ্যমন্ত্রীর একান্ত অনুগত জোহুজুরে এক আমলা। স্বাভাবিকভাবেই পরিস্থিতি যাই হোক তিনি কেন্দ্রীয় বাহিনী চাইবেন না। কারণ সরকার বা শাসক দল থেকে তাকে যা বলে দেওয়া হবে তার বাইরে তিনি এক চুলও সরতে পারবেন না। কিন্তু অশান্তি-অরাজকতার অবস্থা বিবেচনা করে কেন্দ্রীয় বাহিনীর দাবিতে মামলা হয় হাইকোর্টে। দু’দফায় রায় দিয়ে হাইকোর্ট কেন্দ্রীয় বাহিনী আনার কথা বলে এবং সব জেলায় মোতায়েনের নির্দেশ দেয়। কিন্তু রাজ্য সরকার কোনও অবস্থাতেই কেন্দ্রীয় বাহিনী আনতে দেবে না। হাজার বায়নাক্কা আর অজুহাত খাড়া করে, নির্বোধ যুক্তি দেখিয়ে সুপ্রিম কোর্টে দৌড়ায় কেন্দ্রীয় বাহিনী আটকাতে। পেছন পেছন লেজুড় হিসেবে নির্বাচনকেও কেন্দ্রীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে নামতে বলে। যথারীতি ঘাড়ধাক্কা খেয়ে ফিরে আসতে হয়।
কিন্তু শিক্ষা তাদের হয়নি। উচ্চ ও সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশের প্রতি সম্মান ও মর্যাদা প্রদর্শন থেকে সরে গিয়ে তারা নিয়ম রক্ষার জন্য প্রতীকী হিসেবে কেন্দ্রীয় বাহিনী আনার উদ্যোগ নেয়। অর্থাৎ যে মূল উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যকে সামনে রেখে কেন্দ্রীয় বাহিনী আনা ও তাদের ব্যবহার করার কথা আদালতের রায়ের মধ্য দিয়ে ফুটে উঠেছে তাকেই অবজ্ঞা করা হচ্ছে। গুটিকতক কেন্দ্রীয় বাহিনী এনে সব জেলায় দু’চার জন করে পাঠানো হবে নিয়ম রক্ষার খাতিরে। তাতে আসল উদ্দেশ্য কিছুই সফল হবে না। যথারীতি রাজ্যপুলিশ শাসক দলের হয়ে ভোট লুটে সাহায্য করবে। এই বিষয়টা আদালতের কড়া নজরে থাকা উচিত। নিয়ম রক্ষা নয়, প্রকৃত উদ্দেশ্য সাধনে যেন পর্যাপ্ত বাহিনী আসে এবং তাদের সঠিকভাবে ব্যবহার করা হয় তা নিশ্চিত করা উচিত।

Comments :0

Login to leave a comment