দীপশুভ্র সান্যাল, জলপাইগুড়ি
একচিলতে ঘরে ছোট ছোট গ্রামসভা। কখনও মাটির উঠানেও হচ্ছে আলাপ। এবারের পঞ্চায়েত ভোট প্রতিরোধের পঞ্চায়েত, বলছেন বামফ্রন্ট নেতা কর্মীরা। আর কথার মাঝে চলছে গানও।
জলপাইগুড়ির এলাকায় এলাকায় এভাবেই চলছে প্রচার। ভাওয়াইয়ার সুরে গেয়ে উঠেছেন চৈতন্য দেবরায়- ‘আপন করে নাও সবাইকে, স্বজন করে নাও।’ (দেখুন ভিডিও)
প্রায় অন্ধকার ঘরে মোমবাতি জ্বালিয়ে কখনও হচ্ছে ছোট্ট সভা। আসছে আবাস দুর্নীতি, একশো দিনের কাজের বকেয়া মজুরি, পঞ্চায়েতে গরমিলের খতিয়ান। কংগ্রেস প্রার্থীও আছেন যেখানে, প্রচারে তাঁদের কথাও বলছেন বামপন্থীরা। সিপিআই(এম) জলপাইগুড়ি জেলা সম্পাদক সলিল আচার্য বলছেন, ‘‘এবারের ভোট ২০১৮’র মতো হবে না। মানুষই সাড়া দিয়েছেন, এগিয়ে এসেছেন। গণতন্ত্র ফেরাতে হবে।’’
একই সুর সিপিআই(এম) ময়নাগুড়ি এরিয়া সম্পাদক অপূর্ব রায়ের কথায়। তিনি বলছেন, ‘‘যেভাবে কাছে পেয়েছি জনতাকে আমরা নিশ্চিত এবারের ভোট হবে প্রতিরোধে ভোট। গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার ভোট। আত্মবিশ্বাসী কারণ মানুষ ভরসা দিচ্ছেন। আর তরুণ প্রজন্ম এগিয়ে আসছেন। স্বচ্ছ, দুর্নীতিমুক্ত পঞ্চায়েত দিতে পারে বামপন্থীরা, এই ভরসা এসেছে।’’
দুর্নীতি এতটাই আর সঙ্গে ক্ষোভ এমনই বাড়ছে যে একটি পঞ্চায়েতের প্রধানকে গ্রেপ্তার করতে হয়েছে পুলিশকে। অপূর্ব রায় আরও জানাচ্ছেন, লুটের চোটে নাম বাদ পড়ছে প্রকল্প থেকে, যেটুকু কাজ হচ্ছে তার মান অত্যন্ত খারাপ। ফল ভুগতে হচ্ছে গ্রামবাসীদের (দেখুন ভিডিও)।
এলাকায় বিজেপি রয়েছে, বামপন্থীদের আসন ছেড়ে দিয়ে সমঝোতার টোপ দিয়েছে। তাতে লাভ হয়নি। দু’দলের বিরুদ্ধেই লড়াই, প্রচারে স্পষ্ট বলছে লাল ঝান্ডা কাঁধে কর্মীরা।
প্রচার কেবল গ্রামে চলছে না। জলপাইগুড়ি শহরের মধ্যেও চলছে, গ্রাম থেকে আসা মানুষের মধ্যে প্রচার। বৃহস্পতিবার যেমন আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিভিন্ন গ্রামাঞ্চল থেকে জলপাইগুড়ি শহরে আসা মানুষের মধ্যে লিফলেটে প্রচার করল পশ্চিমবঙ্গ বস্তি উন্নয়ন সমিতি।
বামপন্থী প্রার্থীদের বিপুল ভোটে জয়যুক্ত করার আহ্বান জানিয়ে লিফলেট বিলি করা হয় পশ্চিমবঙ্গ বস্তি উন্নয়ন সমিতি দক্ষিণ শহর কমিটির পক্ষ থেকে। পশ্চিমবঙ্গ বস্তি উন্নয়ন সমিতির শহর দক্ষিণ কমিটির সম্পাদক শুভঙ্কর চ্যাটার্জী জানান গ্রামের বহু মানুষ প্রতিদিন কাজের তাগিদে জলপাইগুড়ি শহরে আসেন গ্রামে ১০০ দিনের কাজ নেই আবাস যোজনার ঘরের টাকা চুরি করে নিজেদের আত্মীয়দের মধ্যে ঘর বিলিবন্টন করেছে তৃণমূলের নেতারা। পানীয় জলের চরম সংকট, রাস্তাঘাটের বেহাল দশা। পঞ্চায়েতে গরিবের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য বামপন্থীদের জয়ী করার কথা বলা হচ্ছে।’’
প্রচার চলছে চা বাগানে শ্রমিক বস্তিতে। করলা নদীর পাড়ে সদর ব্লকের অরবিন্দ গ্রাম পঞ্চায়েতের করলা ভ্যালি চা বাগানে সিপিআই(এম) প্রার্থী রুবিনা মুণ্ডা ছাত্রী। বাড়ি বাড়ি ঘুরে চলছে প্রচার।
চা শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে চলছে টানা লড়াই। যৌথ সংগ্রামে নেতৃত্ব দিচ্ছে লাল ঝান্ডা। উঠে আসছে সে কথাও। দখল করা পঞ্চায়েত লুটের যন্ত্র হয়েছে, বহু জায়গায় গ্রামবাসীরাও এই মর্মে জানাচ্ছেন ক্ষোভ। বামফ্রন্ট সরকারের সময় চা শ্রমিকের রেশন, কোয়ার্টার, ছাতা, গামবুট ছিল। সে সবের পাট উঠে গিয়েছে। বাগান থেকে দালাল তাড়ানোর ডাক দিয়েছে লাল ঝাণ্ডা।
Comments :0