দেশের অর্থনীতির উজ্জ্বল ভবিষ্যতের ছবি এঁকে ভোট ময়দানে যতই বাগাড়ম্বর করা হোক না কেন বাস্তবটা যে মোটেই তেমন নয় সেটা বোঝা গেছে জাতীয় পরিসংখ্যান অফিসের তথ্য থেকেই। সদ্য প্রকাশিত সেই রিপোর্টে চলতি অর্থবর্ষের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকের (জুলাই-সেপ্টেম্বর) বৃদ্ধির হার এক ঝটকায় অনেকটাই কমে ৫.৪শতাংশ হয়েছে। এমন অপ্রত্যাশিত ধাক্কায় রীতিমতো বিচলিত শাসক কর্তারা। বৃদ্ধির এমন নিম্নহার বিরোধীদের বক্তব্যকে বৈধতা দিচ্ছে। দেশে যে বিনিয়োগ হচ্ছে না, কর্মসংস্থান বাড়ছে না, মানুষের আয় বাড়ছে না, তাদের ক্রয়ক্ষমতা কমছে সেটা প্রমাণ করে দিয়েছে জিডিপি বৃদ্ধির হারের সরকার প্রকাশিত তথ্য। অর্থনীতির এমন অধোগতিতে উদ্বেগ ছড়িয়েছে শিল্প মহলেও। তাদের তরফ থেকে প্রবল চাপ বাড়ছে সুদের হার কমানোর জন্য। বণিক মহলে সুদের হার বেশি থাকায় শিল্পে বিনিয়োগ বাড়ছে না। তেমনি বাজারে ক্রয় চাহিদাও বাড়ছে না। এই অবস্থায় যদি সুদের হার না কমে তাহলে অর্থনীতির আরও পতন অনিবার্য হবে।
কর্পোরেট মহলের চাপের সঙ্গে সুর মিলিয়ে সরকারি কর্তারাও সুদের হার কমানোর জন্য রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ওপর চাপ বাড়াতে শুরু করেছে। মন্ত্রী পীযূষ গোয়েল তো এক ধাপ এগিয়ে ভোগ্য পণ্যের মূল্যসূচকের তালিকা থেকে খাদ্যপণ্য বাদ দেবার সওয়াল করেছেন। সুদের হার কমানোর জন্য ঘুরিয়ে মত দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনও। বিশ্বের সর্বত্রই সুদের হার নির্ধারিত হয় প্রধানত মূল্যবৃদ্ধির হারের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে। মূল্যবৃদ্ধির হার যদি ঊর্ধ্বমুখী হয় তখন রিজার্ভ ব্যাঙ্ককে সুদের হার বাড়িয়ে বাজারে নগদ টাকার জোগানে লাগাম টানতে হয়। তা না হলে মূল্যবৃদ্ধির গতি আরও বেড়ে যায়। সেজন্য সব কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কই নিজ নিজ দেশে মূল্যবৃদ্ধির একটি সহনশীল হার নির্দিষ্ট করে। এর বেশি হলে সুদের হার বাড়বে এবং কম হলে সুদের হার কমানো হবে। ভারতে এই হার ৪শতাংশ। অর্থাৎ মূল্যবৃদ্ধির হার ৪শতাংশের বেশি হলেই কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক সতর্ক হয় এবং ৬ শতাংশ হলে বা ২শতাংশ হলে পদক্ষেপ নেয়।
মোদী জমানায় বরাবরই মূল্যবৃদ্ধির হার উচ্চ। আসলে শিল্পপতি-ব্যবসায়ী বান্ধব এই সরকার বানিয়াদের মুনাফার স্বার্থে মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে কোনও ব্যবস্থা নেয় না। বরং মূল্যবৃদ্ধির সুযোগ বাড়িয়ে দেয়। ফলে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের পক্ষে সুদের হার কমানো কঠিন হয়ে পড়ে। এই অবস্থায় মন্ত্রী পীযূষ গোয়েল প্রস্তাব দিয়েছেন ভোগ্যপণ্যের তালিকা থেকে খাদ্যপণ্য বাদ দিয়ে মূল্যসূচক তৈরি করতে। তাতে মূল্যবৃদ্ধির হার অনেকটা কম দেখাবে। কারণ ভোগ্যপণ্যের মধ্যে খাদ্যপণ্যের মূল্য সর্বাধিক হারে বাড়ে। আবার দেশের দরিদ্র, নিম্নবিত্তরা তাদের আয়ের বেশিটাই খরচ করে খাদ্যের পেছনে। অর্থাৎ মোদী সরকার চাইছে দেশের সংখ্যা গরিষ্ঠ মানুষের প্রধান ভোগ্যপণ্যকে মূল্যবৃদ্ধির সূচক থেকে বাদ দিয়ে বড়লোকদের ভোগ্যপণ্যের ভিত্তিতে মূল্যবৃদ্ধির নির্ধারণ করতে। তাতে দেশের বেশিরভাগ নিম্ন আয় ও দরিদ্র মানুষ মূল্যবৃদ্ধির যন্ত্রণায় জর্জরিত হলেও অর্থনীতির তথ্য পরিসংখ্যানে তা প্রতিফলিত হবে না। ফলত সেই সঙ্কট নিরসনে সরকারি কোনও পদক্ষেপও থাকবে না।
Economy India
মন্দার আশঙ্কা সুদ বৃদ্ধির চাপ
×
Comments :0