Gaza

খুশির ঈদ থেকে অনেক দূরে গাজা, হাহাকার খাবারের জন্য

আন্তর্জাতিক

ঈদের খাবার, বাড়ি নিয়ে যাওবার সময় পড়ে গিয়েছে রাস্তায় কুড়িয়ে তুলছে প্যালেস্তিনীয় কিশোর।

কোথাও ঈদ শুরু হয়ে গিয়েছে, কোথাও রাত পোহালে ঈদ। কিন্তু উৎসবের আনন্দ থেকে বহু যোজন দূরে গাজা। এই ভূখণ্ডে বসবাসকারী ২০ লক্ষেরও বেশি প্যালেস্তিনীয় ইজরায়েলের বিভৎস বোমা বর্ষণে ধুঁকছেন, তাঁরা হাহাকার করছেন একটু খাবারের জন্য। গাজা ভূখণ্ডে খাদ্য, জ্বালানি, ওষুধ সহ জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় সব সামগ্রীর সরবরাহকে টানা চার সপ্তাহ অবরুদ্ধ করে রেখেছে ইজরায়েল। প্যালেস্তাইনে গণহত্যার অভিযানের ১৭ মাসের মধ্যে ইজরায়েলের এই অবরোধই দীর্ঘতম। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, এক সপ্তাহের মধ্যে গাজার সমস্ত বেকারিতে রুটির উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাবে ময়দার অভাবে। রাষ্ট্রসঙ্ঘের পক্ষ থেকে এই সঙ্কটের কথা জানিয়ে বলা হয়েছে, ইতিমধ্যেই ত্রাণ বণ্টনকারী সংস্থাগুলি ইজরায়েলী আক্রমণে বিধ্বস্ত গাজায় পরিবার প্রতি খাবার দেওয়ার পরিমাণ কমিয়ে করেছে অর্ধেক। বাজারগুলি খা খা করছে সবজির অভাবে। ত্রাণ বণ্টনে যুক্ত কর্মীরাও ইজরায়েলী বোমাবর্ষণের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত প্যালেস্তিনীয়দের কাছে অনেক সময়ে পৌঁছাতে পারছেন না।
রাষ্ট্রসঙ্ঘ আরও বলেছে, গাজায় বসবাসকারী প্যালেস্তিনীয়দের মধ্যে অনাহার ও অপুষ্টি প্রবল মাত্রায় বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ইজরায়েল নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী সরবরাহে অবরোধ তুলে না নিলে গোটা অঞ্চল শীঘ্রই খাদ্যশূন্য হয়ে পড়বে। কারণ, ইজরায়েলী বোমাবর্ষণে গাজার স্থানীয় খাদ্য উৎপাদন ব্যবস্থা প্রায় সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। গাজার বাসিন্দারা ইতিমধ্যেই জেনেছেন খাবার ফুরিয়ে আসার কথা। উত্তর গাজার জাবালিয়ায় রাষ্ট্রসঙ্ঘের ত্রাণ বণ্টনের একটি কেন্দ্রের সামনে দাঁড়িয়ে তিন সন্তানের মা শোরোক শামলাক খাবার নিতে গিয়ে সাংবাদিকদের বলেছেন, একবারে এক মাসের খাবার দেওয়া হয় তাঁদের। আগে এক মাসের জন্য যা দেওয়া হতো, এখন দেওয়া হচ্ছে তার অর্ধেক। তাই খাওয়া কমিয়ে দিয়েছেন তাঁরা। এই খাবারের উপরে ভরসা করে বেঁচে আছেন তাঁরা। এটুকুও যদি বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে খাবার কোথায় পাবেন তাঁরা! শামলাকদের আশঙ্কা বাড়িয়ে দিয়ে রাষ্ট্রসঙ্ঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির তরফে জানানো হয়েছে, বেকারিগুলোতে রুটি বানানোর জন্য যা ময়দা মজুত আছে, তাতে খুব বেশি হলে মঙ্গলবার পর্যন্ত দিনে ৮ লক্ষ মানুষের জন্য রুটি উৎপাদন করা যাবে। আর গাজার বাসিন্দাদের খাবার দেওয়া যাবে আর সপ্তাহ দুয়েক। তারপরে দেওয়ার জন্য তাদের কাছে পড়ে থাকবে বিস্কুট, তাও সাড়ে ৪১ হাজার জন পাবেন। 
গাজায় ত্রাণ বণ্টনে যুক্ত অক্সফাম ইন্টারন্যাশনালের প্রতিনিধি ক্লিমেন্স লাগোয়ারদত জানিয়েছেন, তুলনায় মজুত একটু বেশি রয়েছে জ্বালানি ও ওষুধ। আরও কয়েক সপ্তাহ সেগুলি দেওয়া যাবে। তবে ইতিমধ্যেই হাসপাতালগুলিতে অ্যান্টিবায়োটিক ও পেইনকিলার দেওয়া হচ্ছে খুব হিসেব করে। জ্বালানি কমে আসায় তার ব্যবহারেও রাশ টানা হয়েছে। তিনি আরও জানিয়েছেন, অবরোধের পাশাপাশি ইজরায়েলের এলোপাতাড়ি বোমাবর্ষণে ত্রাণ বণ্টনের কাজে ‍বিরাট সমস্যা তৈরি হয়েছে। ত্রাণ বণ্টনকারীরাও আক্রান্ত হচ্ছেন। ফলে বেশ কিছু ত্রাণ সংস্থা পানীয় জলের বোতল, শিশুদের জন্য পুষ্টিকর খাবার ও অন্যান্য সামগ্রীর সরবরাহ বন্ধও করে দিয়েছে। প্রসঙ্গত, বন্দিমুক্তির নয়া শর্ত মানার জন্য হামাসকে বাধ্য করতে গত ২ মার্চ গাজায় অবরোধ শুরু করেছে ইজরায়েল। সেই থেকে তাজা খাবার গাজায় ঢোকেনি বললেই চলে। সবজি, ফল, ডিম, মাংস প্রভৃতি উধাও বাজার থেকে। যেটুকু যা পাওয়া যাচ্ছে, জোগানের অভাবে তারও দাম বেড়েছে চড়চড়িয়ে। বাজারে কখনও দেখা মিললে বিক্রেতা এক ‍‌কিলো পেঁয়াজের দাম চাইছেন ১৪ ডলার, এক কিলো টমেটোর দাম চাইছেন ৬ ডলার। রান্নার গ্যাসের দাম বেড়ে হয়েছে ৩০ গুন। ফলে বহু পরিবার কাঠ পুড়িয়ে রান্নার ব্যবস্থায় ফিরতে বাধ্য হয়েছে। বহু পরিবার স্রেফ ত্রাণ শিবিরের রান্না করা খাবারের উপর ভরসা করে দিন গুজরান করছে। তাই ত্রাণ শিবিগুলিতে রান্না করা খাবারের পরিমাণ বাড়াতে হয়েছে। ফেব্রুয়ারির তুলনায় মার্চে তা বেড়েছে ২৫ শতাংশ। রাষ্ট্রসঙ্ঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির তরফে জানানো হয়েছে, এখন রোজ প্রায় সাড়ে ৯ লক্ষ প্লেট খাবার রান্না করা হচ্ছে।
সব মিলিয়ে গাজার প্যালেস্তিনীয়রা নিদারুন দুর্দশায় দিন কাটাচ্ছেন। কোনও রকমে তাঁরা বেঁচে থাকার চেষ্টা করছেন, সাংবাদিকদের বলেছেন আদেল আল-শায়ের। ইজরায়েলী গণহত্যায় নিজের পরিবার ও আত্মীয়-স্বজন মিলিয়ে ২০ জনকে হারিয়েছেন তিনি। ঈদের কথা বলতে গিয়ে হাউহাউ করে কেঁদে উঠেছেন তিনি। বলেছেন, ‘‘ঈদ আর কোথায়! আমরা প্রিয়জনদের হারিয়েছি, হারিয়েছি আমাদের ছোট ছোট সন্তানদের। আমাদের জীবন শেষ, ভবিষ্যৎ শেষ। আমরা স্কুল হারিয়েছে, ছাত্রছাত্রীদের হারিয়েছি। আমাদের সব শেষ হয়ে গিয়েছে। এ আমাদের যন্ত্রণার ঈদ।’’ 
 

Comments :0

Login to leave a comment