বামপন্থী তো বটেই, নাগরিক সমাজের প্রতিবাদী, মুখর লোকজনদেরও ভয় পায় আরএসএস-বিজেপি। ক্ষমতা দখল অথবা ক্ষমতা রক্ষার প্রশ্নে এরা বিজেপি’র সামনে বড়সড় চ্যালেঞ্জ। সংখ্যার বিচারে, সাংগঠনিক শক্তির বিচারে প্রতিবাদী মানুষরা নিতান্তই দুর্বল হলেও তাদের বক্তব্যের যথার্থতা এবং যুক্তির বিন্যাস এতটাই শক্তিশালী যে শাসক বিজেপি’র ভয় সেখানেই। বিজেপি মনে করছে এই মানুষরা শিক্ষায়, চেতনায়, বুদ্ধিমত্তায় ও যুক্তিতে সমাজে যথেষ্ট প্রভাবশালী। তাই এরা যুব সমাজকে প্রভাবিত করার যথেষ্ট ক্ষমতা রাখে। বিজেপি’র ধর্মান্ধতার রাজনীতি, অন্ধ বিশ্বাস, প্রচারের আধিক্যে মিথ্যার নির্মাণ, সামান্য সাফল্যকে অতিরঞ্জিত প্রচারের জোরে বাড়িয়ে দেখানো ইত্যাদির বিরুদ্ধে প্রকৃত তথ্য ও বাস্তব নির্ভর যুক্তি অত্যন্ত জোরালো ও ধারালো হয়ে ওঠে। তাই এমন লোকজনদের নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি হয়ে পড়েছে। সেই লক্ষ্যেই মহারাষ্ট্রে বিজেপি জোট সরকার তৈরি করেছে ‘মহারাষ্ট্র স্পেশাল পাবলিক সিকিউরিটি অ্যাক্ট’। সন্দেহ নেই নামে জননিরাপত্তা হলেও আইনটির আসল উদ্দেশ্য বিজেপি’র নিরাপত্তা।
আরবান নকশাল, টুকরে টুকরে গ্যাঙ, বামপন্থী উগ্রপন্থা ইত্যাদি শব্দবন্ধের আড়ালে এক অস্বচ্ছ বাতাবরণ তৈরি করে বিজেপি-আরএসএস বিরোধী এবং বিজেপি সরকার বিরোধী মতামতকে দমন করার একটা সুপরিকল্পিত ছক কষা হয়েছে। বিরোধিতা সহ্য করতে পারে না স্বৈরাচারীরা। তারা নিজেদের মতামত জোর করে চাপাতে চায়। তাদের মতামতের বিরোধিতা হলে যুক্তি দিয়ে তারা মোকাবিলা করা ক্ষমতা তাদের। যে যুক্তি তারা হাজির করে তা সর্বার্থেই অন্তঃসার শূন্য। এই অবস্থায় বিরুদ্ধ মত, সমালোচনা, বিরোধিতাকে ঠান্ডা করতে হলে তাদের হাতে এমন আইনি অস্ত্র দরকার যাকে ব্যবহার করে সব বিরোধী সব সমালোচকদের মুখ বন্ধ করে দেওয়া যায়। তার জন্যই নতুন আইন। তেমনি নতুন আইনে অপরাধের সংখ্যা স্বচ্ছ ও স্পষ্ট হলে প্রতিবাদীদের জেলে পুরে রাখা সহজ হবে না। তাই শহুরে নকশাল, টুকরে টুকরে গ্যাঙ, উগ্রপন্থী বাম ইত্যাদি নানা অস্বচ্ছ শব্দবন্ধ হাজির করা হয়েছে যাতে অস্বচ্ছতার আড়ালে সরকার বিরোধীদের ধরে জেলে পোরা যায়। তাহলে বিরোধিতার স্বর স্তব্ধ হয়ে যাবে। বিজেপি’র চোখে তাদের বিরোধিতাই দেশবিরোধিতা। সমস্ত বিরুদ্ধ শক্তিকে, সমালোচকদের, বিরুদ্ধ মতামতের লোকদের দেশবিরোধী বলে দাগিয়ে দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি পদক্ষেপ নেবার জন্যই এমন আইন। এমন দেশবিরোধী, সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ দমনে ইতিমধ্যে ভয়ঙ্কর এমসিওসিএ এবং ইউএপিএ আইন আছে। কিন্তু এই আইনে সরকারবিরোধী তথা বিজেপি বিরোধীদের দোষী সাব্যস্ত করা কঠিন। তাই মহারাষ্ট্রে নতুন আইন আনা হয়েছে। সেখানে অপরাধের ব্যাখ্যা অস্বচ্ছ রেখে টার্গেট করা বিরোধী বা সমালোচকদের আইনি জটিলতায় বন্দি করার সুযোগ তৈরি করা হয়েছে। এ ধরনের আইন আরও চার রাজ্যে তৈরি হচ্ছে। বোঝাই যাচ্ছে বিজেপি ধাপে ধাপে গণতান্ত্রিক পরিসরকে ছোট করতে করতে একেবারে নির্মূল করে দিতে চাইছে। গণতন্ত্র উধাও হলে স্বৈরাচারের, স্বেচ্ছাচারের সুদিন আসবে। বহুত্ব ধ্বংস করে আধিপত্যবাদী হিন্দুত্ব কায়েম হবে যেখানে অতিকায় কর্পোরেটদের সীমাহীন লুঠতরাজ আর কোনও বাধা থাকবে না।
editorial
বিরোধিতা স্তব্ধ করার আইন

×
Comments :0