SITARAM YECHURY

রাজ্যে বাড়বে বাম-কংগ্রেস, বলছেন ইয়েচুরি

রাজ্য লোকসভা ২০২৪

বৃহস্পতিবার কলকাতায় মুজফ্‌ফর আহমদ ভবনে সাংবাদিক সম্মেলনে সীতারাম ইয়েচুরি।

দেশে বিজেপি’র নীতির বিরুদ্ধে একমাত্র ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চই লড়াই করছে। লোকসভা নির্বাচনের প্রথম চার দফায় দেশের সর্বত্র ‘ইন্ডিয়া’-র গ্রহণযোগ্যতা বেড়ে চলার লক্ষণ দেখা গিয়েছে। বাকি তিন পর্বেও এই প্রবণতা বজায় থাকবে। পশ্চিমবঙ্গেও এই প্রবণতা দেখা গিয়েছে বামফ্রন্ট এবং কংগ্রেসের পক্ষে। এবারের নির্বাচনে বাম-কংগ্রেসের পক্ষে লক্ষ্যণীয় পরিবর্তন আসবে। রাজ্যে রাজনীতিতে ত্রিপাক্ষিক লড়াই দেখা যাবে। 
বৃহস্পতিবার কলকাতায় সাংবাদিক সম্মেলনে এই বোঝাপড়া জানিয়েছেন সিপিআই(এম) সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। রাজ্যে নির্বাচনী প্রচারে রয়েছেন তিনি। এদিন মুজফ্‌ফর আহমদ ভবনে সাংবাদিক সম্মেলন করেছেন। তিনি বলেছেন, নরেন্দ্র মোদী বুঝে গিয়েছেন যে আর ফিরবেন না। তাই বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন।
মমতা ব্যানার্জি এবং তৃণমূলের সিএএ সংক্রান্ত অবস্থানে প্রশ্ন তোলেন ইয়েচুরি। ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চ সম্পর্কে মমতা ব্যানার্জির বক্তব্যেও প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন তিনি। 
ইয়েচুরি বলেছেন, ‘‘সারা দেশে বিজেপি’র নীতির বিরুদ্ধে একমাত্র ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চই লড়াই করছে।’’ তিনি বলেন, ‘‘লোকসভা ভোটের প্রথম দফা থেকে বিজেপি-বিরোধী মানসিকতা বাড়তে দেখা যাচ্ছে। প্রথম চার দফায় ‘ইন্ডিয়া’-র গ্রহণযোগ্যতা সর্বত্র বাড়তে দেখা গিয়েছে।’’ 
বাকি তিন পর্বেও এই প্রবণতা বজায় থাকবে জানিয়ে ইয়েচুরি রাজ্যে বামফ্রন্ট এবং কংগ্রেসের সম্ভাবনায় জোর দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘‘এবার পশ্চিমবঙ্গেও গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আসবে। বাম ধর্মনিরপেক্ষ শক্তির পক্ষে লক্ষ্যণীয় পরিবর্তন হবে। রাজ্যে ত্রিপাক্ষিক লড়াই দেখা যাবে। তার লক্ষণ টের পাওয়া যাচ্ছে।’’
ইয়েচুরি বলেন, ‘‘সিএএ প্রসঙ্গে তৃণমূলের বোঝাপড়া বুঝতে পারছি না। সংসদে এই বিলের সময় তো তাদের সাংসদরা অনেকে থাকেননি। এখন তৃণমূল বলছে যে এনআরসি না হলে সিএএ-কে সমর্থন দেওয়া হবে। কিন্তু এনআরসি ছাড়া সিএএ তো হতেই পারে না। রাজ্যে এসে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহই তো বলেছিলেন ‘ক্রনোলজি সমঝিয়ে’। সেখানেই তো বলা হয়েছে আগে সিএএ হবে তার পর এনআরসি।’’ 
ইয়েচুরি ‘ইন্ডিয়া’-র অবস্থান স্পষ্ট করে বলেন, ‘‘সিএএ প্রথমবার সংবিধান ভেঙে ধর্মের সঙ্গে নাগরিকত্বকে যুক্ত করেছে। সংবিধানে নাগরিকত্বের জন্য  ধর্মের কোনও সম্পর্ক নেই, নাস্তিকও হতে পারেন নাগরিক। তৃণমূল নিঃশর্ত ভাবে কার্যকর করার কথা বলছে। তা মানে দাঁড়ায়, মুসলিমদের বাদ দিয়ে নাগরিকত্ব দেওয়ার এই শর্তকে মেনে নিচ্ছে।’’ 
ইয়েচুরি বামপন্থীদের অবস্থান স্পষ্ট করেন। তিনি বলেন, ‘‘কেরালায় আমাদের সরকার পরিষ্কার বলেছে সিএএ হবে না। এটি কেন্দ্রীয় আইন। কিন্তু বাস্তবায়িত করতে হবে রাজ্য সরকারকে। কেরালায় প্রথম বিধানসভায় প্রস্তাব পাশ করে এই আইন এবং তার বিধির বিরোধিতা করা হয়েছে।’’ 
ইয়েচুরি বলেন, ‘‘এনআরসি আসবেই না যদি সিএএ না থাকে। চাইলে মোদী সরকার বিনা সিএএ-তে নাগরিকত্ব দিতে পারত। এখন কয়েকজনকে নাগরিকত্ব দেওয়া হয়েছে বলে ঘোষণা করেছে। সংখ্যা যা-ই বলুক সরকার প্রকাশিত ছবিতে কিন্তু ৬ জনকে নাগরিকত্বের শংসাপত্র দিতে দেখা যাচ্ছে। এই পুরোটাই করা হচ্ছে ঠিক নির্বাচনের সময়ে। পাঁচ বছর কেটে যাওয়ার পর!’’ 
মমতা ব্যানর্জির ভাষয়ে ‘ইন্ডিয়া’ প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য নিয়ে প্রশ্ন করা হয় ইয়েচুরিকে। তিনি বলেন, ‘‘একবার বলছেন ‘ইন্ডিয়া’-তে আছেন, ইন্ডিয়া তৈরি করেছেন। এখন বলছেন ‘ইন্ডিয়া সরকার গড়লে বাইরে থেকে সমর্থন করবেন। তার মানে বলছেন অতীতের মতো তিনি এই সরকারে থাকবেন না। একদিকে বোঝাচ্ছেন ‘ইন্ডিয়া’-র বিরোধী নন। কারণ তা বললে প্রতিক্রিয়া পড়বে। আরেকদিকে বোঝাচ্ছেন তিনি ‘ইন্ডিয়া’তে থাকছেন না।’’ 
ইয়েচুরি বলেন, ‘‘আজ মোদী বুঝে গেছেন ফিরবেন না। তাই এত বেপরোয়া। লোকসভা ভোটের নির্বাচনী আচরণবিধি জারি হলে কেন্দ্রীয় স্তরে নিয়োগ স্থগিত থাকে। অথচ আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগ হলো আচরণবিধি জারি হওয়ার পর। আরেক কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রাজীব গান্ধী সেন্টার ফর ইয়ুথ ডেভেলপমেন্টে ডিরেক্টর, পুদুচেরি কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়েও উপাচার্য নিয়োগ করা হলো।’’ 
ইয়েচুরির ব্যাখ্যা, ‘‘এরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে, বুঝছে ক্ষমতা হারাবে। হিন্দুত্বে এজেন্ডা নামিয়ে দিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কবজায় আনা জরুরি এদের। তাই আচরণ বিধি ভেঙে নিয়োগ হচ্ছে। আর কমিশনও কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না। ফিরে আসার ভরসা নিজেদেরই নেই।’’

Comments :0

Login to leave a comment