রাজ্যের শাসক ও বিরোধী দলের মধ্যে প্রতিযোগিতা চলছে, কে কত বেশি সাম্প্রদায়িক হতে পারে। কে কত বড় হিন্দু, কে কত বেশি মুসলমানের মসীহা— এনিয়েই তরজায় ব্যস্ত তারা। আর ঘটা করে তা নিয়ে ধুন্ধুমার আলোচনাসভা বসানো হচ্ছে সন্ধ্যার প্রাইম টাইম টেলিভিশন শোগুলিতে। দেশে-রাজ্যে আর কোনও সমস্যাই নেই— যুবদের হাত ভর্তি কাজ, মানুষের পেট ভর্তি খাবার, কৃষকের গোলায় সমৃদ্ধির ছড়াছড়ি, শ্রমিকের পকেট ভর্তি মজুরি, ছাত্র-ছাত্রীদের অঢেল পড়ার সুযোগ– যেন এমন এক সুখের রাজ্যের বাসিন্দা বঙ্গবাসী! আকাশে বাতাসে কোকিলের ডাক, মনে বসন্তের ফুরফুরে বাতাস– আহা কি আনন্দ আকাশে বাতাসে! মুখ্যমন্ত্রী আর বিধানসভায় বিরোধী দলের বক্তৃতায় তাই আর কিছুই নেই। ভাষণে কাজে শুধু প্রমাণ করে ফেলো, কে কত বড় হিন্দু, তাহলেই নির্বাচনে কেল্লাফতে। আচ্ছা, যে চাষি আলু-সবজির দাম না পেয়ে, রাস্তায় আলু-সবজি ফেলে বিক্ষোভ দেখাচ্ছে, সেই বিক্ষোভের ধর্ম কি? বন্ধ কারখানার শ্রমিকের পেটের আগুন-খিদের ধর্ম কি? ১৪/১৫ ঘণ্টা রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে যে গিগ শ্রমিক সাইকেল-বাইক ছুটিয়ে মাসের শেষে ১৫ হাজার টাকা নিয়ে বাড়ি ফিরতে পারছে না, তার জীবন-যন্ত্রণার ধর্ম কি? যে যুবক স্নাতক হয়েও বাপ-মা-স্ত্রী-সন্তান ফেলে ভিন রাজ্যে রুটির সন্ধানে চলে গেছে, তার মনখারাপের ধর্ম কি? যে খেতমজুর মাথার উপর গনগনে সূর্যকে সাক্ষী রেখে কাজ করে, রোদে পোড়া শরীরটা নিয়ে বাড়ি ফেরার সময়ে বাচ্চাকে ঈদ বা পুজোয় একটা নতুন জামা কিনে দিতে পারে না, তার চোখের জলের ধর্ম কি? কে বলবে এদের কথা!
সরকার লুটে ব্যস্ত আর জেলযাত্রা বাঁচাতে তৃণমূল ত্যাগী অধুনা বিজেপি হওয়া বিরোধী দলের নেতা আরএসএস’র আস্থাভাজন হওয়ার জন্য বিদ্বেষ-হিংসা-ঘৃণা ছড়াতেই ব্যস্ত। রাজ্যের বেকার যুবক কাজ না পেয়ে তৃণমূলের সিন্ডিকেট বাহিনী বা তোলাবাজদের দলে নাম লিখিয়ে, নিজেদের লোকের গুলি খেয়ে রোজই মরছে। সন্তানহারা বাপ-মায়ের আছাড়ি বিছাড়ি কান্না এই দু’দলের নেতাদের বিচলিত করে না। ওরা জানে, বেকার যুবকদের দীর্ঘ সারি আছে, আবার তাদের মধ্যে কাউকে ডেকে হাতে বোমা-পিস্তল তুলে তোলাবাজিতে নামিয়ে দেবে। আবার কোনও দল হাতে গদা-ত্রিশূল ধরিয়ে বিদ্বেষ-হিংসা-দাঙ্গায় নামিয়ে দেবে হাতে কিছু টাকা গুঁজে দিয়ে। যদি মরে যায় তাহলে দীর্ঘ বেকারের লাইন থেকে নতুন কাউকে তুলে আনতে অসুবিধা হবে না। যুব-মানস তোলাবাজি-মাস্তানি-দাঙ্গা-ঘৃণা-নেশায় ডুবে থাকুক, তাহলে দুই শাসকেরই সুবিধা। কেউ প্রশ্ন তুলবে না– কেন এত বেকার? কেন কল কারখানা হচ্ছে না? কেন চাষির ফসলের দাম লুটে নিয়ে যাচ্ছে ফড়ে-দালালরা? কেন ১০০ দিনের কাজ পাচ্ছে না রাজ্যের মানুষ? কেন ১২/১৪ ঘণ্টা কাজের সময়? কেন এত কম মজুরি? কেন প্রতিদিন লাফিয়ে বাড়ছে জিনিসের দাম? কেন স্কুল-কলেজে ভর্তিতে তোলাবাজির টাকা দিতে হয়? কেন শিক্ষক নিয়োগ হয় না? কেন চাকরি-বালি-কয়লা-পাথর সব লুট চলছে? কেন মহিলাদের কোনও নিরাপত্তা নেই? কেন আর জি করে পড়ুয়া চিকিৎসককে মারা হলো, আর খুনিদের আড়াল করতে নেমে পড়লেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী? কেনই বা কেন্দ্রীয় এজেন্সি সিবিআই-ইডি’র তদন্তে ঢিলে দিয়ে রাজ্যের দুর্নীতির মাথাদের আড়াল করতে মরিয়া চেষ্টা করছে? এসব প্রশ্ন তুলবে কে? এই অরাজকতা-নৈরাজ্য-লুটের রাজত্বই চলবে? এভাবেই প্রজন্মের পর প্রজন্মকে শেষ করে দেওয়ার ষড়যন্ত্র চলতেই থাকবে? না, তা হয় না। রুখে দাঁড়াতেই হবে শ্রমিক-কৃষক-খেতমজুর-ছাত্র-যুব সহ সাধারণ মানুষেকেই।
Stand up
রুখে দাঁড়ান

×
Comments :0