প্রবীর দাস- বসিরহাট
অষ্টাদশ লোকসভা নির্বাচনের পঞ্চম দফার ভোট হতে চলেছে ২০ মে। ওই দিন বনগাঁ লোকসভা নির্বাচন। হাতে সময় আর মাত্র ১০দিন। বামফ্রন্ট সমর্থিত জাতীয় কংগ্রেস প্রার্থী প্রদীপ বিশ্বাস বনগাঁ মহকুমার এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুটে চলেছেন বিরামহীনভাবে। আসন পুনর্বিন্যাসের কারণে স্বরূপনগর বিধানসভা বর্তমানে বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্রের অধীন। আগে ছিল বসিরহাট লোকসভার অধীন। এই স্বরূপনগরে এবার ভোটার সংখ্যা ২ লক্ষ ৫০ হাজার ৩৬৭। যার মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লক্ষ ২৭ হাজার ৮২৬ এবং মহিলা ১ লক্ষ ২২ হাজার ৫৩৯ জন। বুধবার এই স্বরূপনগর বিধানসভা এলাকায় একপ্রস্থ নির্বাচনী প্রচার সারলেন জাতীয় কংগ্রেস প্রার্থী প্রদীপ বিশ্বাস। বুধবার সকালে তিনি বামফ্রন্ট ও কংগ্রেস কর্মীদের নিয়ে বাকড়া গোকুলপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের গোকুলপুর বাজার,বাবু রাস্তা,বাকড়া, বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া কৈজুরী কলবাজার, জোড়াবটতলা, সায়েস্তানগর বাজারে প্রচার সারলেন। কথা বললেন পথচলতি মানুষ, বাজার গঞ্জ এলাকায় সাধারণ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে। দুপুরে সাময়িক বিশ্রাম নিয়ে রামচন্দ্রপুর, মাসিয়া, আটলিয়ায় প্রচার শেষ করেন। প্রচারের ফাঁকে ফাঁকে কংগ্রেস প্রার্থী জানালেন বনগাঁ মহকুমার কিছু সমস্যার কথা। প্রার্থী নিজে মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষ। বললেন ধর্মীয় আবেগ তৈরি করে বিজেপি এবং তৃণমূল এবার আর খুব বেশি সুবিধা করতে পারবে না। মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষ ওদের চালাকি ধরে ফেলেছে। জয়ের ব্যাপারে অনেকটাই আশাবাদী। বললেন সে কথাও। বিশেষ করে ইছামতি নদী সংস্কার নিয়ে বিজেপি এবং তৃণমূলের ভাওতাবাজির জবাব দেবে বনগাঁ মহকুমার মানুষ। তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন বনগাঁর মানুষ তাঁকে সাংসদ নির্বাচিত করলে তাঁর প্রধানতম কাজ হবে ইছামতি নদী সংস্কার। বনগাঁ মহকুমা মূলত কৃষি প্রধান। কৃষকের জীবনের দৈনন্দিন নানা সমস্যা আছে। সবটাই আলোচনা করে সাধারণ মানুষের মতামতের ভিত্তিতেই আমি সংসদে লড়াই করবো। জানিয়ে দিলেন সেকথাও। এদিনের প্রচারে ফাঁকে সিপিআই(এম) নেতা হামালউদ্দিন আহমেদ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ অভিযোগ আনলেন বর্তমান সাংসদ শান্তনু ঠাকুরের বিরুদ্ধে। কী সেই অভিযোগ? তিনি জানালেন, বিজেপি সাংসদ শান্তনু ঠাকুর এম পি ল্যাডে বছরে ৫ কোটি টাকা হিসাবে ৫ বছরে ২৫ কোটি টাকা পেয়েছেন। তার একটি অংশ হিসাবে স্বরূপনগরের জন্য কমবেশি সাড়ে ৩ কোটি টাকার কি কাজ করেছেন? তিনি তার শ্বেতপত্র প্রকাশের দাবি তুললেন। বললেন, ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ইছামতি নদী সংস্কার করা হবে। ঢাকঢোল পিটিয়ে শান্তনু ঠাকুর তেঁতুলিয়ায় এসে তাঁর উদ্বোধন করলেন। কি দেখলাম আমরা? ইছামতি নদী সংস্কার হবে তার জন্য তেঁতুলিয়ায় ইছামতি নদীর পাড়ে তাবু টাঙানো হলো। মেশিন পত্র এলো। কতটা কী কাজ হলো কেউ জানতে পারলো না। এক সপ্তাহ পর সব উধাও। জনগণের করের ৫ কোটি টাকা গায়েব হয়ে গেল। তার জবাব চাইছে স্বরূপনগরের মানুষ। নির্বাচন এলেই বিজেপি তৃণমূলের প্রতিশ্রুতি ফুলঝুড়ি ছোটে। যতটুকু যা কিছু কাজ স্বরূপনগরে হয়েছে তা বাম আমলে। ২০১১ সালের ১১ ফেব্রুয়ারী তরনীপুরে ইছামতি নদীর উপর কংক্রিটের সেতু নির্মাণের জন্য তৎকালীন অর্থমন্ত্রী অসীম দাশগুপ্ত ১২ কোটি ৯৭ লক্ষ ৯৩ হাজার টাকা দিলেন। শিলান্যাস হয়ে গেল। নির্বাচন এসে পড়ায় সেতু তৈরির কাজ থমকে যায়। নির্বাচনে বামফ্রন্ট সরকারের পরাজয় হলো। কংক্রিটের সেতু আজও হলো না। সেই টাকার কোন হদিশ তৃণমূল দিতে পারলো না। লোকসভা নির্বাচন এলে বিজেপি বলে আমরা এই সেতু নির্মাণ করবো। বিধানসভা নির্বাচন এলে তৃণমূল বলে আমরা এই সেতু নির্মাণ করবো। ১৩বছর কেটে গেল সেতু আর হলো না। এই সেতু নির্মাণ হলে স্বরূপনগরের সাথে বনগাঁ মহকুমা, নদীয়া ছাড়িয়ে উত্তরবঙ্গের সাথে যোগাযোগ গড়ে উঠতো। বিশেষ করে বানিজ্যিক যোগাযোগ উন্নত হতো। স্বরূপনগর ব্লকের তিন গ্রাম পঞ্চায়েত বিচ্ছিন্ন দ্বীপ হয়ে আছে। তেঁতুল মির্জাপুর, সগুনা এবং চারঘাট। প্রশাসনিক যাবতীয় কাজ সারতে কান বেড় দিয়ে নাক ধরার মতো ঘুরে আসতে হয়। তিনটি ব্রিজ করবে বলে কথা দিয়েছিল তৃণমূল। আজও হলো না। সোনাই নদীর উপর কাঠের ভাঙা সেতু পড়ে আছে। জীবন হাতে করে যাতায়াত করতে হয় বয়ারঘাটা এলাকার মানুষের। ২০১১সালের নির্বাচনে তৃণমূল প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল মার্কেটিং হাব, কোল্ড স্টোরেজ তৈরি করবে। করলো না। ভোট এলে নতুন নতুন প্রতিশ্রুতি আর নির্বিচারে ভোট লুট ছাড়া এই ১৩ বছরে তৃণমূল কিছুই করে নি। স্বরূপনগরের মানুষ তৈরি আছে। নির্বিঘ্নে ভোট হলে তার জবাব বিজেপি এবং তৃণমূল দুজনেই পেয়ে যাবে।
Lok Sabha Election 2024
নির্বাচিত হলে সংস্কার করবো ইছামতি বলছেন বনগাঁর কংগ্রেস প্রার্থী
×
Comments :0