Mamata banerjee

ভোটে তেমন হিংসা হয়নি দাবি মমতার

রাজ্য

বিডিও, পুলিশের সাহায্যে পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূলের নির্লজ্জ ছাপ্পা, ভোট লুটকে ‘বিপুল জয়’ বলে শুক্রবার অভিহিত করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। বিরোধীদের মেরে, গণনা কেন্দ্র থেকে বের করে দিয়ে, মহিলা প্রার্থীদের গায়ে মদ ঢেলে জয় হাসিল করেছে তৃণমূল। এই দুষ্কর্ম করা দলের নেতা, কর্মীদের এদিন ‘জয়ের জন্য’ অভিনন্দনও জানিয়েছেন তিনি। পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময়ে রাজ্যে তৃণমূলের হামলা, খুনের ঘটনাগুলিকে ‘বিক্ষিপ্ত ঘটনা’ও তিনি বলেছেন। এই সব উল্লেখের পরে এদিন, ধর্মতলায় দলীয় সভার মঞ্চ থেকে তৃণমূল নেত্রী বলেছেন,‘‘সিপিএম-র মত নয়। আমাদের ভালো পঞ্চায়েত চালাতে হবে।’’
রাজ্য জানে তৃণমূলের পঞ্চায়েত মানে চুরি, লুটের পঞ্চায়েত।
  এদিন মমতা ব্যানার্জি পঞ্চায়েত নির্বাচনে বেলাগাম হাঙ্গামাকে ‘বিক্ষিপ্ত ঘটনা’ বোঝাতে তিনটি জায়গার উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন,‘‘৩টি ঘটনা ঘটেছে। ভাঙড়ে হাঙড়রা গোলমাল করেছে।’’ তৃণমূলের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ভাঙড়ে আইএসএফ, বামফ্রন্ট কর্মী, সমর্থকরা রুখে দাঁড়িয়ে ছিলেন। মমতা ব্যানার্জি সেই লড়াকু মানুষকে ‘হাঙড়’ আখ্যা দিয়েছেন। তিনি আরও বলেছেন,‘‘ডোমকলে কিছু হয়েছে। ওখানে আমরা জিতিনি। হেরেছি। গন্ডগোল করে জিতেছে।’’ ডোমকলেও তৃণমূলের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে বামফ্রন্ট, কংগ্রেস কর্মী, সমর্থকরা লড়েছেন। সেখানে তৃণমূল হেরেছে। কিন্তু না জিতলে হাঙ্গামার দায় কী করে এড়িয়ে যাওয়া যায়, তা শোনালেন তৃণমূল নেত্রী। এছাড়া বলেছেন,‘‘চোপড়ায় কিছু হয়েছে। আর কোচবিহারে ১জন খুন হয়েছে।’’ কোচবিহারে ১জন নয়, ৩জন খুন হয়েছেন। চোপড়ার ঘটনা বিস্তারিত বলেননি মমতা ব্যানার্জি। কারণ, চোপড়ায় তৃণমূলের বিধায়কের দলবল মাথায় গুলি করে সিপিআই(এম) কর্মী, ছাত্র কমরেড মনসুর আলমকে খুন করেছে। সেখানে মুখ্যমন্ত্রীর দল বিরোধীদের কাউকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাও করতে দেয়নি।
  মুর্শিদাবাদের প্রসঙ্গ তোলেননি মমতা ব্যানার্জি। যদিও শুধু মুর্শিদাবাদে নির্বাচন পর্বে তৃণমূলের সন্ত্রাসে ১২জনের মৃত্যু হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ২জন সিপিআই(এম) কর্মী। 
  এদিন বামফ্রন্ট সরকারের সময়কালে পঞ্চায়েত ভোটে মৃত্যুর পরিসংখ্যান বলতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী শুরুই করলেন,‘‘সিপিএম’র আমাকে নিয়ে বরাবর অ্যালার্জি আছে।’’ এটি আসলে পঞ্চায়েত নির্বাচন সংক্রান্ত নয়। পাটনায় ২৬টি দলের বৈঠকের আগে, গত ২৬ জুন নয়াদিল্লিতে সিপিআই(এম)’র সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি জানিয়ে দিয়েছিলেন,‘‘ওরা(তৃণমূল) বিজেপি হটাতে মুখে গণতন্ত্রের কথা বলে। আবার সেই তৃণমূলই পশ্চিমবঙ্গে গণতন্ত্রকে উপেক্ষা করে হিংসার রাজনীতি করছে। তৃণমূল গণতন্ত্রের টুঁটি চেপে ধরছে পশ্চিমবঙ্গে। এটা মোটেই মেনে নেওয়া হবে না।’’ গত ১৭ জুলাই, বেঙ্গালুরুতে বৈঠকের আগের দিনও ইয়েচুরি স্পষ্ট জানিয়ে দেন যে, রাজ্যে তৃণমূলের সঙ্গে পার্টির কোনও বোঝাপড়া হবে না। পার্টির রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমও ইতিমধ্যে জানিয়ে দিয়েছেন যে, বিজেপি-কে হটাতে রাজ্যে তৃণমূলের সঙ্গে প্রতি ইঞ্চিতে লড়াই হবে।
  মমতা ব্যানার্জি সেই প্রসঙ্গেই ‘অ্যালার্জির’ কথা তোলেন। তবে তিনিও যে সিপিআই(এম)’র সঙ্গে কোনও বোঝাপড়ায় যেতে রাজি নন, তাও স্পষ্টই বুঝিয়েছেন। এদিন তাই পশ্চিমবঙ্গে বামফ্রন্ট সরকারের প্রসঙ্গ তুলেছেন। ফিরহাদ হাকিম, অভিষেক ব্যানার্জিরা ‘৩৪ বছর সিপিএম’র শাসনের বিরুদ্ধে’ তাদের লড়াইয়ের কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন। মমতা ব্যানার্জি বলেছেন,‘‘বুদ্ধদেববাবুর আমলে ২০০৩-এ পঞ্চায়েত নির্বাচনে ৮৯জন খুন হয়েছিলেন। ২০০৮-এ নির্বাচনের দিন ৩৯জন। এবার পঞ্চায়েত নির্বাচনের দিন ১৫জন খুন হয়েছে। সব মিলিয়ে ২৯জন খুন হয়েছে। তার মধ্যে ১৮জন তৃণমূলের। তৃণমূল কী তৃণমূলকে খুন করবে? সিপিএম’র ৩জন খুন হয়েছে। বিজেপি’র ৩জন খুন হয়েছে। বাদবাকি আদার্স। এর মধ্যে পুরনো শত্রুতাজনিত কারণেও খুন আছে।’’
নিহতরা ‘আদার্স’-র মত তুচ্ছতাচ্ছিল্যের বিষয় হতে পারেন মুখ্যমন্ত্রীর কাছে। তৃণমূলের হামলাকে লঘু করতে তৃণমূলের হামলাকে ‘শত্রুতাজনিত কারণ’ বলতেও বাধেনি মুখ্যমন্ত্রীর।
  তবে তাঁর দেওয়া তথ্যগুলি ভুল। পঞ্চায়েত নির্বাচন প্রক্রিয়া চলাকালীন রাজ্যে ২৯ নয়, ৫২জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন কয়েকশো। নির্বাচনের দিনই খুন হয়েছেন ১৬জন। সেদিনের ঘটনায় আহত ১জনের পরে মৃত্যু হয়েছে হাসপাতালে। মনোনয়ন থেকে গণনা পর্যন্ত শাসক তৃণমূল ও পুলিশের হামলায় সিপিআই(এম)-র ৬জন, আইএসএফ’র ৪জন, কংগ্রেসের অন্তত ৮জনের মৃত্যু হয়েছে। 
  তাছাড়া তৃণমূলের ১৮জন খুন হয়েছেন। তবে অধিকাংশই দলীয় গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কারণে। তার উদাহরণ ক্যানিং, বাসন্তীসহ রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় আছে। তবে ভোটে নিহতদের পরিবারকে ২লক্ষ টাকা এবং স্পেশাল হোমগার্ডের চাকরি দেওয়ার ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। 
 এদিন মমতা ব্যানার্জি ঘোষণা করেছেন যে, আগামী ২ অক্টোবর তৃণমূল দিল্লিতে যাবে। একশো দিনের কাজের প্রকল্পের টাকার দাবিতে। তবে সেখানে মিছিল হবে, নাকি অবস্থান, সভা— তা জানাননি মমতা ব্যানার্জি। এদিনের সভায় মুখ্যমন্ত্রীর ভাইপো অভিষেক ব্যানার্জি ভাষণে বলেছিলেন যে, ৫ আগস্ট প্রতি বুথে বিজেপি নেতাদের বাড়ি ঘেরাও হবে। কিন্তু বুথে দলের অত লোক নেই বুঝে মমতা ব্যানার্জি কর্মসূচিটি বদলে দেন। বলেন,‘‘এই কর্মসূচি যা অভিষেক বলেছিল, তা বুথে হবে না। ব্লকওয়াইজ হবে। একশো মিটার ছেড়ে। নাহলে বলবে অবরুদ্ধ করেছি।’’ স্বাভাবিক প্রশ্ন উঠেছে, ব্লকভিত্তিক বিজেপি নেতার বাড়ি ঘেরাও কী করে হবে? 
  মমতা ব্যানার্জি এদিন আরও বলেন,‘‘একশো দিনের প্রকল্প রাজ্যের টাকায় চলবে। আমরা অন্তত ৫০দিন কাজ দিতে পারি। এর নাম হবে ‘খেলা হবে’। ২১লক্ষ বাড়ির ব্যবস্থাও আমরা করব।’’
  সভায় বিজেপি সম্পর্কে তৃণমূল নেত্রী বলেন,‘‘আমরা ‘ইন্ডিয়া’ নামে একটা জোট করতে পেরেছি। ইনক্লুসিভ জোট। ‘ইন্ডিয়া’ জিতুক। আমাদের চেয়ার লাগবে না। আমরা কিছু চাই না। আমরা ঝান্ডা নিয়ে ‘ইন্ডিয়া’র পাশে থাকব।’’
 যদিও ‘ইন্ডিয়া’ কোনও জোট নয়। তবে এদিন মমতা ব্যানার্জি দাবি করে বসেননি যে, বিজেপি-বিরোধী দলগুলির মঞ্চের এই ‘ইন্ডিয়া’ নামটি তাঁর দেওয়া! সেকথা তাঁর অনুগত মিডিয়া অবশ্য ফলাও করে প্রচার করেছিল।
 মণিপুরের ঘটনায় এদিন মমতা ব্যানার্জি বলেন,‘‘আমার অরবিন্দের (দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল) সঙ্গে কথাও হয়েছে। আমরা মুখ্যমন্ত্রীরা ওখানে গিয়ে মানুষের সঙ্গে কথা বলতে চাই। সকলে রাজি থাকলে আমরা ‘ইন্ডিয়া’র মুখ্যমন্ত্রীরা মণিপুরে যাবো।’’
 এদিন বিজেপি’র বিধায়ক মুকুল রায় ধর্মতলায় তৃণমূলের সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন।

 


 
 

Comments :0

Login to leave a comment