Mamata on Egra

এনআইএ তদন্তে আপত্তি নেই, আগ বাড়িয়ে জানালেন মমতা

রাজ্য

সিআইডি’র হাতে তদন্তভার তুলে দিয়েও এগরা বিস্ফোরণকাণ্ডে আগ বাড়িয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অধীন এনআইএ’কে দিয়ে তদন্তে আপত্তি নেই বলে জানিয়ে রাখলেন মমতা ব্যানার্জি!
  ইডি, সিবিআই, ইনকাম ট্যাক্স থেকে এনআইএ নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে মমতা ব্যানার্জির আপত্তি নতুন কিছু নয়। বিজেপি শাসিত রাজ্যে কোনও ঘটনা ঘটলে, কেন সেই রাজ্য ইডি, সিবিআই, এনআইএ যাচ্ছে না, নবান্ন থেকে সেই প্রশ্ন তুলতেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু মঙ্গলবার মমতা ব্যানার্জি স্বতঃস্ফূর্তভাবে এগরার বিস্ফোরণকাণ্ডে ১০ জনের মৃত্যুর পর নবান্ন থেকে জানিয়েছেন,‘‘ এনআইএ নিয়ে আমাদের আপত্তি নেই। ’’
একইসঙ্গে ১০ জনের মৃত্যুতে বিস্ফোরণকে লঘু করার জন্য ‘ঘটনা’র পরিবর্তে ‘দুর্ঘটনা’ বলে দাবি করেছেন মমতা ব্যানার্জি। ঘটনার সঙ্গে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা জড়িত নয় বলে দাবি করেও মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য,‘‘এটা তো আইনশৃঙ্খলার সঙ্গে যুক্ত বিষয় নয়। এটা বেআইনি বাজি কারখানায় দুর্ঘটনা।’’ 
  এনআইএ তদন্তে সায় দিয়ে মমতা ব্যানার্জি এদিন দলের পঞ্চায়েতকে বিজেপি’র হাতে তুলে দিতেও বাদ রাখেননি। এগরা ১ নং ব্লকের সাহারা গ্রাম পঞ্চায়েতের খালিকুল গ্রামে এদিন বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। ১৪ জন সদস্যের এই পঞ্চায়েতে এককভাবে তৃণমূল ২০১৯ সালে ১০টি আসনে জয়ী হয়েছিল। একজন বিজেপি ও ২ জন নির্দল সদস্য জয়লাভ করেন। শুরুতে শান্তিলতা দাস ছিলেন প্রধান। চার মাস আগে দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে অনাস্থা ভোটে শান্তিলতা দাস পরাস্ত হয়ে প্রধান হিসাবে জয়ী হন স্বপন দণ্ডপাট। তিনি তৃণমূলের এগরা ব্লকের দলের কো-অর্ডিনেটর। তৃণমূলেরই দখলে থাকা এই পঞ্চায়েত। কিন্তু নবান্ন থেকে এদিন মমতা ব্যানার্জি বলেছেন,‘‘ এই গ্রাম পঞ্চায়েতে নির্দলকে প্রধান করে বিজেপি পঞ্চায়েতটা দখল করেছে। আমাদের দলের কেউ জড়িত নয়।’’ নিরঙ্কুশ ক্ষমতা নিয়ে থাকা নিজের দলের পঞ্চায়েতকে বিজেপি’র দাবি করে মমতা ব্যানার্জি এনআইএ তদন্তে আগ বাড়িয়ে সায় দিয়ে রাখছেন বলে অনেকের ধারণা।  
    মুখ্যমন্ত্রীর এনআইএ প্রীতিকে কটাক্ষ করে এদিন সিপিআই(এম) নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেছেন,‘‘বাসন্তী, মিনাখাঁ, ভূপতিনগরের পর এবার এগরা। সিআইডি’র হাতে তদন্তভার তুলে দেওয়ার আগেই রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি জানিয়ে দিয়েছে, ওখানে বাজি কারখানা ছিল। ফলে এনআইএ’কে স্বাগত জানিয়ে রাখলেন মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্যটা কি ক্রমশ সিবিআই, ইডি, এনআইএ মারফত কেন্দ্রের হাতে তুলে দিতে চাইছেন মমতা ব্যানার্জি!’’ 
  ঘটনা হলো, এদিনই রাজ্য বিজেপি’র সভাপতি সুকান্ত মজুমদার ও রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীও একযোগে এগরার বিস্ফোরণকাণ্ডে এনআইএ তদন্ত দাবি করেছেন। আগেও ‌অনেক ঘটনায় বিজেপি এরকম দাবি জানালে সেই দাবি সরকার কার্যত এতদিন উপেক্ষা করেই এসেছে। কিন্তু এবার সেই ঘটনার ব্যতিক্রম ঘটেছে। তার থেকেও গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা, বিজেপি নেতাদের দাবিতে সায় দিয়ে আগামী সপ্তাহে নীতি আয়োগের বৈঠকে যোগ দিতে মুখ্যমন্ত্রী দিল্লি যাচ্ছেন। দিল্লি যাওয়ার প্রাক্কালেই আগ বাড়িয়ে বিস্ফোরণকাণ্ডে মুখ্যমন্ত্রীর এনআইএ তদন্তে আপত্তি না করা তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক মহল। 
  আর পাঁচটা বোমা বিস্ফোরণের ঘটনার পর মমতা ব্যানার্জির মুখে এদিনও শোনা গেছে ‘বাজি কারখানার’ তত্ত্ব। তাঁর মুখে থেকে বারেবারে শোনা গেছে, ওখানে বেআইনি বাজি কারখানা ছিল। এই ঘটনায় সরকার ও দলের কেউ জড়িত নয় জানিয়েও এদিনই সরিয়ে দেওয়া হয়েছে এগরা থানার ওসি’কে। রাজ্যে একের পর বিস্ফোরণের ঘটনায় সামনে চলে আসছে আইনশৃঙ্খলার কঙ্কালসার চেহারা। আইনশৃঙ্খলার অবনতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে ঘটনাস্থলে গিয়ে আক্রান্ত হতে হচ্ছে পুলিশকেও। কালিয়াগঞ্জ, বীরভূমের সদাইপুরের পর এদিন এগরাতেও ঘটনাস্থলে যাওয়ার পর পুলিশকে আক্রান্ত হতে দেখা গেছে। আর নবান্ন থেকে মমতা ব্যানার্জি বলেছেন, ‘‘সিপিএম, কংগ্রেস, বিজেপি মিলে প্রতিদিন মিটিং মিছিলে বলে দেয়, পুলিশ পেটাও। পুলিশকে মারধর করার জন্য উৎসাহ দেয়।’’ কালিয়াগঞ্জের ঘটনার পরও পুলিশের ওপর আক্রমণ যারা করছে তাদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেছিলেন মমতা ব্যানার্জি। কিন্তু তারপরেও পুলিশ যে আর আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করতে পারছে না তা প্রমাণ হয়ে গেল এগরার ঘটনার পরও। এমনকি গ্রামবাসীদের ক্ষোভের মুখে পড়ে এলাকার বিধায়ক পর্যন্ত গ্রামে ঢুকতে পারেনি। তার জন্য আক্ষেপ করে নবান্ন থেকে মমতা ব্যানার্জিকে বলতে শোনা গেছে, ‘‘ আমাদের লোককে ঢুকতে দেবে না কেন?’’ সরকার ও দলের আধিপত্যে যে ফাটল ধরেছে তা মেনে নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।

Comments :0

Login to leave a comment