jhontu ali

বহু মানুষের চোখের জলে শেষ বিদায় ঝণ্টু আলিকে

রাজ্য জেলা

বাড়ির সামনে স্থান সংকুলান না হওয়ায় কনভয় বাড়ি পর্যন্ত ঢুকতে পারেনি। জওয়ানদের কাঁধে চেপেই বাড়ির রাস্তা থেকে ঈদগার উদ্দেশ্যে রওনা দেয় বীর ঝণ্টু আলি শেখের কফিনবন্দি দেহ। শেষ শ্রদ্ধা জানানোর জন্য সেই কফিনের পিছনে তখন প্রবহমান জনস্রোত, শোকস্তব্ধ গ্রামবাসীদের হাহাকার গোটা এলাকা জুড়ে।  
শনিবার দুপুরে তেহট্টের পাথরঘাটার নিজ বাড়িতে শেষবারের মতো ফিরলেন ভারতীয় সেনাবাহিনীর এলিট স্পেশাল ফোর্স ইউনিটের প্যারা কমান্ডার নদীয়াবাসী ঝণ্টু আলি শেখ। ১৯৯৮ সালে সেনাবাহিনীতে যোগ দেন তিনি। পহেলগামে নিরাপরাধ পর্যটকদের ওপর সন্ত্রাসবাদীদের হাতে নিহত ভারতীয়দের নৃশংস হত্যার প্রেক্ষিতে উধমপুরে বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই তীব্র গুলির লড়াই বাঁধে। সন্ত্রাসবাদীদের গুলিতে শহীদ হন তিনি।
শুক্রবার রাতেই দমদম বিমানবন্দরে এসে পৌঁছায় তাঁর কফিনবন্দি দেহ। এদিন সকালে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে বারাকপুরে শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের পর ১২ নম্বর জাতীয় সড়ক হয়ে কৃষ্ণনগর করিমপুর রাজ্য সড়ক ধরে, মালিয়াপোতা থেকে পাথরঘাটায় মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় জেলা প্রশাসনিক কর্তা এবং সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে। কৃষ্ণনগর থেকে পাথরঘাটা পর্যন্ত রাস্তার দু’ধারে অসংখ্য মানুষ তাঁর সম্মানার্থে  ব্যানার, পোস্টার নিয়ে জমায়েত হন। 
পুত্রহারা মা শোকে বাক্‌রুদ্ধ, পিতা সবুর আলি কান্নায় ভেঙে পড়েছেন। স্ত্রী শাহানারা পারভিন বারে বারে জ্ঞান হারিয়ে ফেলছেন। পিতাহারা পুত্র-কন্যা বারবার চিৎকার করে বলছে, ‘আমার আব্বুকে এনে দাও’। সারা গ্রাম শোকস্তব্ধ। 
সেনা জওয়ান, জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, পরিবারের সকল আপনজন সহ দলমত নির্বিশেষে সমাজে সর্বস্তরের গুণীজনেরা ঝণ্টু আলি শেখকে মাল্যদান করে শেষ শ্রদ্ধা জানান। সেখান থেকে সেনাবাহিনীর কাঁধে চেপেই কফিনবন্দি বীর জওয়ানকে শেষবারের মতো নিজ বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। সেখানেও শ্রদ্ধা জানান অগণিত মানুষ। শেষ শ্রদ্ধাজ্ঞাপন পর্ব মাঝে সেখানেই কাফন পর্ব সম্পন্ন করা হয়। সামাজিক ক্রিয়া কর্মশেষে পুনরায় শেষ সম্মান জ্ঞাপনের মঞ্চে নিয়ে আসা হয় কফিনবন্দি দেহকে। দেশ রক্ষার লড়াইয়ে শপথ পাঠ করার পর সকলের চোখের জলকে শামিল করে তাঁকে সমাহিত করা হয়। প্রয়াত ঝণ্টু আলি শেখের বাড়িতে তাঁর মরদেহে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে উপস্থিত ছিলেন সিপিআই(এম) নেত্রী রমা বিশ্বাস, শতরূপ ঘোষ, এসএম সাদি, রঞ্জিত মণ্ডল, মানস মণ্ডল, সুবোধ বিশ্বাস, সলিল কর, কৌশিক দত্ত, রুদ্র প্রসাদ মুখার্জি সহ ইন্দাস শেখ, ফরিদ আলি শেখ সহ অন্যান্য নেতৃত্ব ও কর্মীরা। সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে, মৌলবাদের বিরুদ্ধে সর্বস্তরের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তাঁরা। 
সন্ত্রাসবাদীদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে প্রাণ দেন সেনাবাহিনীর কর্মরত নদীয়ার এই বীর সন্তান ডিওয়াইএফআই’র প্রাক্তন কর্মী। কৃষক পরিবারের সন্তান ঝণ্টু আলি শেখ। তাঁর গোটা পরিবার বামপন্থী প্রগতিশীল ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ও সমর্থক। শুক্রবার ‘আওয়াজ’ রাজ্য কমিটির এক প্রতিনিধিদল নদীয়ার পাথরঘাটার বাড়িতে শোকার্ত পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন ও সমবেদনা জানান এবং সর্বোতভাবে পাশে থাকার আশ্বাস দেন। প্রতিনিধিদলে ছিলেন ‘আওয়াজ’ রাজ্য সম্পাদক রুহুল আমিন গাজী সহ নুরুল ইসলাম, সেলিনা খাতুন, গোলাম রাব্বি, শাহনাজ শেখ, বদরুজা খান প্রমুখ। এছাড়া পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ইমরান শেখ, কর্মাধ্যক্ষ ফরিদ আলি শেখ, পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য পারুল খাতুন ও অন্যান্য নেতৃত্ব উপস্থিত ছিলেন। জাতপাত ও ধর্মের ভেদাভেদের লড়াই ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে দলমত নির্বিশেষে সর্বস্তরের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তাঁরা।

Comments :0

Login to leave a comment