ধর্মনিরপেক্ষতা, গণতন্ত্রকে রক্ষা করতে হলে সংবিধানকে বাঁচাতে হবে। বাংলাদেশের ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে দেখুন, ওখানে হাসিনা-ইউনুস পারেনি, এখানে মোদী-মমতাও পারবে না। বামপন্থার পুনর্জাগরণ ঘটিয়েই একাজ আমাদের করতে হবে। কালনায়, ৫২জন শহীদের রক্তেভেজা ভূমিতে এই প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন সিপিআই (এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। শুক্রবার কালনা নতুন বাসস্ট্যান্ডে পার্টির পূর্ব বর্ধমান জেলা ২৬তম সম্মেলন উপলক্ষে আয়োজিত এক বিরাট সমাবেশে এই আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, "কৃষক, ক্ষেতমজুর, শ্রমিক, ছাত্র-যুব-মহিলা সহ সমস্ত অংশের আন্দোলনকে এক সুতোয় গাঁথার জন্যই আমরা সম্মেলন করছি। আক্রান্ত, অসহায় মানুষরে পাশে দাঁড়াতে আমাদের সংগঠনকে আড়মোড়া ভেঙে এগিয়ে আসতে হবে। সম্মেলন থেকে সেই শপথই আমরা নেবো।"
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন পার্টির পূর্ব বর্ধমান জেলার সম্পাদক সৈয়দ হোসেন। উপস্থিত ছিলেন পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আভাস রায়চৌধুরী, রাজ্য কমিটির সদস্য অমল হালদার এবং অচিন্ত্য মল্লিক। ছিলেন জেলার গণআন্দোলনের নেতৃবৃন্দ। ৫২ জন শহীদের পরিবারকে সংবর্ধনা জানান নেতৃবৃন্দ। সৈয়দ হোসেন এই প্রসঙ্গে বলেন, "১৯৬৭-৬৯সালে কালনা অঞ্চলে জোতদার-জমিদারদের বিরুদ্ধে কৃষক-ক্ষেতমজুরদের যে তীব্র আন্দোলন গড়ে উঠেছিল, তাতে আতঙ্কিত হয়েই সন্ত্রাস নামিয়ে আনা হয়েছিল শাসক শ্রেণির পক্ষ থেকে। সেই কারণে শুধু কালনাতেই আধা ফ্যাসিবাদী সন্ত্রাসের সময় খুন হন ৪২জন সিপিআই (এম) নেতাকর্মী।"
সৈয়দ হোসেন বলেন, ওরা বামপন্থীদের নিশ্চিহ্ন করার পথ নিয়েছিল। কিন্তু আজও কালনার বিভিন্ন প্রান্তে ওই জোতদার-জমিদারদের পাঁচমহলা-সাতমহলা কিছু বাড়ির চিহ্ন পাওয়া যাবে, যা আগাছা বা জঙ্গলে পরিপূর্ণ হয়ে গেছে। তিনি বলেন, এখন মানুষে মানুষে বিভাজনের নামে নতুন কায়দায় আক্রমণ নামিয়ে আনা হচ্ছে। মানুষের ওপর নেমে আসা আক্রমণকে মোকাবিলা করার লক্ষ্যেই সংগঠনকে বিকশিত করতে চাই আমরা। সম্মেলন থেকে সেই বার্তা নিয়েই আমরা এগোতে চাইছি।"
মানুষের মধ্যে যেভাবে বিভাজন নামিয়ে আনা হচ্ছে, তার তীব্র সমালোচনা করে এদিন সেলিম সমাবেশে বলেন, "বাংলাদেশের ঘটনাকে কেন্দ্র করে নতুনভাবে ধর্মীয় বিভাজন সৃষ্টি করা হচ্ছে। দেশের নামে দ্বেষ ছড়ানো হচ্ছে, বিদেশের নামে বিদ্বেষ সৃষ্টি করা হচ্ছে। বাংলাদেশে যে কটি কমিউনিস্ট পার্টির কর্মী আছেন, তাঁরাও বলছেন, ধর্মের নামে হানাহানি বন্ধ করো, সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা চাই। সংখ্যালঘু কোন ধর্মের হয় না, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ইহুদীদের যখন নিধন করা হচ্ছিল, তখন কমিউনিস্টরা তার বিরোধিতা করেছিল। এখন প্যালেস্তাইনে যখন গণহত্যা করা হচ্ছে, তার বিরুদ্ধেও আমরা সোচ্চার হয়েছি। তৃণমূল সরকারের আমলে যেভাবে সর্বক্ষেত্রে দুর্নীতিতন্ত্র গড়ে উঠেছে। তৃণমূলের বিকল্প হিসেবে বিজেপি’কে বেছে নেওয়ার কথা মিডিয়াতে প্রচার হয়। কিন্তু মোহন ভাগবতের কাছে, ‘না খাতা নাবহি, মমতা কহে যো সহি’, কারণ আরএসএস'র পয়সাতেই তৃণমূল তৈরি হয়েছে। আরজি করের ঘটনায় প্রমাণ হয়ে গেছে, মোদী সরকার যতদিন দিল্লিতে আছে, ততদিন ন্যায়বিচার মিলবে না। এখন সবকিছু প্রকাশ্যে এসে যাওয়ায় মানুষ বুঝতে পারছেন।"
শনিবার সকালে কালনা শহরের পুরশ্রী হলে সিপিআই (এম) পূর্ব বর্ধমান জেলা ২৬তম সম্মেলনের প্রতিনিধি অধিবেশনের উদ্বোধন করবেন পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আভাস রায়চৌধুরী। সম্মেলন উপলক্ষে কালন শহর নামঙ্কিত হয়েছে মদন ঘোষ নগর হিসেবে। মঞ্চের নামকরণ হয়েছে কমরেড মহারানী কোঙার ও কমরেড তরুণ রায়ের নামে। সম্মেলন কক্ষ নামাঙ্কিত হয়েছে কমরেড রামকৃষ্ণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামে। এদিন সমাবেশ মঞ্চ নামাঙ্কিত হয়েছিল শহীদ কমরেড রাজিবুল হক এবং শহীদ কমরেড পুলক সরকারের নামে।
Comments :0