অনিন্দ্য হাজরা, বিনপুর
ছ’মাস ছেলেপুলে নিয়ে বাইরে কাজ করতে যেতে হয়। গত দশ বছরে ১০০ দিনের কাজ একদিনও মেলেনি। মেলেনি প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার পাকা ছাদ। ইট ভাটায় গতর খাটিয়ে, প্রতি বছর মাটির বাড়ি মেরামতের টাকা জোগাড় করতে হয়।
বিনপুর দুই ব্লকের দর্পশীলা গ্রামে নিজের মাটির বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে এমন অভিযোগই করলেন অনিল দেশোয়ালী।
শিলদা বাজার থেকে বেলপাহাড়ির দিকে যাওয়ার রাস্তা দিয়ে কিছুটা এগোলেই শিলদা কলেজ। রাজ্য সড়ক থেকে বাঁদিকে নেমে গিয়েছে কলেজের রাস্তা। বিশাল কলেজ পাঁচিলের পাশ দিয়ে মাটির রাস্তা চলে গিয়েছে দর্পশীলা গ্রামে। রাজ্য সড়ক থেকে দর্পশীলা অবধি রাস্তার অধিকাংশটাই কাঁচা। কার্যত মাঠ এবং জঙ্গল ডিঙিয়ে পৌঁছতে হয় গ্রামে।
সেই মাঠের মাঝখানে রয়েছে অর্ধেক তৈরি একটি কালভার্ট।
অর্ধেক তৈরি কেন?
গ্রামের মানুষের অভিযোগ, রাস্তার জমি মানে খাস জমি। সেই জমি দখল করে রেখেছেন তৃণমূল ঘনিষ্ঠ কৃষক রমেশ মাহাতো। তিনি রাস্তার কাজে বাধা দিচ্ছেন। কালভার্ট না থাকার ফলে, শিলদা থেকে অনেকটা পথ ঘুরে দর্পশিলায় পৌঁছাতে হচ্ছিল। গ্রামের মানুষ একপ্রকার বাধ্য হয়ে চাঁদা তুলে রাতের অন্ধকারে তৈরি করেছেন কালভার্ট। জানতে পেরে বাধা দেন রমেশ মাহাতো। মামলা গড়ায় আদালতে। আপাতত বিচারাধীন।
শিলদা সহ বেলপাহাড়ি অঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকায় রয়েছে প্রকট অনুন্নয়ন। রয়েছে পানীয় জলের তীব্র সমস্যা। স্থানীয়রা বলছেন এই এলাকার মাটি গভীর নলকূপ কিংবা পাতকুয়ার জন্য উপযুক্ত নয়। এলাকায় নেই পর্যাপ্ত পুকুর।
দর্পশীলার বাসন্তী দেশোয়ালের অভিযোগ আবার কিছুটা আলাদা। তিনি জানাচ্ছেন, ‘‘বেশি বয়সের দোহাই দিয়ে লক্ষ্মীর ভান্ডারের তালিকায় ওঠেনি তাঁর নাম। অথচ বার্ধক্য বাতাও পান না তিনি।’’
বাসন্তী দেশোয়ালের সঙ্গে কথা বলার সময় ভিড় জমান গ্রামের বাকি মহিলারা। কার্যত একবাক্যে তাদের দাবি, জলের অভাবে অতিথিকে এক গ্লাসের বেশি জল দেওয়া যায় না। পানীয় জলের ভরসা বলতে কয়েক কিলোমিটার দূরের আইসিডিএস সেন্টারের কল। সেটা মাঝেমধ্যেই খারাপ হয়। তখন চাঁদা তুলে তার মেরামত করেন গ্রামবাসীরাই।
ঝাড়গ্রাম শহর থেকে দহিজুড়ি হয়ে শিলদা আসার রাস্তা। একের পর এক ব্লক জুড়ে চোখে পড়ে মাটির বাড়ির সারি। ঝাড়গ্রামের সাংসদ বিজেপি’র। জেলার চারটি বিধান সভা কেন্দ্রেই রয়েছে তৃণমূলের বিধায়ক। সংসদে দাঁড়িয়ে নরেন্দ্র মোদীর ঘোষণা ছিল, ২০২২ সালের মধ্যে দেশে আর কোন কাঁচা বাড়ি থাকবে না। মমতা ব্যানার্জির দাবি ছিল জঙ্গলমহল হাসছে।।
কিন্তু বাস্তব চোখে আঙুল দিয়ে দুই দাবিকে প্রশ্নের মুখে ফেলে দিচ্ছে।
বিনপুর ২ ব্লকের তিনটি জেলা পরিষদ আসনের একটি থেকে প্রার্থী হয়েছেন মধুশ্রী মজুমদার। তিনি এসএফআইয়ের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য।
এই অন্যরকম কিছুর ভাবনা ঝাড়গ্রামের বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়েই চোখে পড়ছে। গোপীনাথপুর, হারদা, ডেঙ্গা, দইজুড়ি সহ মাওবাদী সন্ত্রাসের একের পর এক মুক্তাঞ্চলে উড়ছে লাল ঝান্ডা। দিন কয়েক আগের লাগানো লাল ঝান্ডা। ফ্যাকাসে নয়। স্পষ্ট এবং উজ্জ্বল।
একই সঙ্গে বড় রাস্তার উপর মাটির দেওয়াল গুলিতে দুই ফুলের সঙ্গে টেক্কা দিচ্ছে কাস্তে হাতুড়ি তারা কে ভোট দেওয়ার আহ্বান।
Comments :0