no-confidence

অনাস্থা

জাতীয় সম্পাদকীয় বিভাগ

ভারতের সংসদীয় ব্যবস্থার ইতিহাসে এক নজিরবিহীন ঘটনা ঘটতে চলেছে মোদী জমানায়। রাজ্যসভার চেয়ারপার্সন জগদীপ ধনখড়ের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব পেশ করেছে সম্মিলিত বিরোধীরা। উদ্দেশ্য হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে তারা চান চেয়ারপার্সনের অপসারণ। এটা ঠিক সাংসদ সংখ্যার বিচারে রাজ্যসভা এবং লোকসভা উভয় কক্ষেই বিরোধীরা সংখ্যালঘু। ফলে অনাস্থা প্রস্তাব পাশ হবার কোনও সুযোগ নেই। তথাপি স্বাধীন ভারতের ইতিহাসে কেন রাজ্যসভার চেয়ারপার্সনের বিরুদ্ধে সব বিরোধীরা মিলে অনাস্থা প্রস্তাব আনতে বাধ্য হলো সেটা জানার ও বোঝাবার জন্য সমগ্র দেশবাসীর অবশ্যই কৌতূহল থাকবে। তাছাড়া ধনখড় শুধু রাজ্যসভার চেয়ারপার্সনই নন, তিনি ভারতের উপরাষ্ট্রপতিও। তাই এই অনাস্থা প্রশ্নে নজর থাকছে বিদেশি মহলেরও। এটা বুঝতেই হবে চেয়ারপার্সনের বিরুদ্ধে শখ করে দেউ অনাস্থা আনে না। কোনও একটি বা দু’টি বিরোধী দল দলীয় সঙ্কীর্ণ রাজনৈতিক স্বার্থে এমন কাজ করে প্রচারের আলোয় আসার ফঁন্দি আঁটতে পারে। এক্ষেত্রে সমস্ত বিরোধী দল একযোগে প্রস্তাব এনেছে। দেশের ও জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতার প্রশ্নে সম্মিলিত শাসক ও সম্মিলিত বিরোধী পক্ষের মধ্যে ব্যবধান করা যায় না। গণতন্ত্রে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত নেই। আজ যারা শাসক কাল তারা বিরোধী। তেমনই আজ যারা বিরোধী কাল তারা শাসক। তাই বিরোধীরা অনাস্থা এনে দেশের ক্ষতি করতে চাইছে এমন অবাস্তব ছেলেমানুষী শাসকের মানায় না। গণতন্ত্রে শাসক ও বিরোধীদের গুরুত্ব যেহেতু সমান তাই শাসকরা যদি ভেবে নেয় সংসদটা তাদের সম্পত্তি সেটা মানা যাবে না। বরং শাসকদের বিশেষ করে দুই কক্ষের অধ্যক্ষকে বুঝতে হবে সংসদে সব নির্বাচিত জন প্রতিনিধির অধিকার সমান, তা তিনি সরকার পক্ষের হোক বা বিরোধী পক্ষের। উভয় পক্ষের বক্তব্য পেশের অধিকার এবং সুযোগ সমানভাবে দিতে হয়। যদি না করে এক চক্ষু হরিণের মতো কেবল শাসকদলের দিকেই ঝোল টানা হয় তাহলে সংসদীয় গণতন্ত্রের স্বার্থেই বিরোধীদের প্রতিবাদ করতে হবে।
দলীয় সভায় নেতাদের মতো একতরফাভাবে চাপানো যায় সেই সব দলে যেখানে অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র নেই। কিন্তু সংসদ কোনও দলের নয় সব দলের। সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠার জোরে যা খুশি তাই করা যায় না। সংসদ বিতর্কের জায়গা, খেউরের জায়গা নয়। বিজ্ঞান ও যুক্তিকে আশ্রয় করে যে কোনও বিষয়ে খোলা মনে আলোচনার জায়গা। আলোচনা ও যুক্তি তর্কের মধ্য দিয়েই কোনও দলের স্বার্থে নয়, দেশের ও দেশবাসীর স্বার্থে সেরা সিদ্ধান্ত করতে হয়। ঠিক এই জায়গাতেই প্রধান প্রতিবন্ধক হিসাবে দাঁ‍‌ড়িয়ে পড়েছেন ধনখড়। বিরোধীদের কণ্ঠরুদ্ধ করে রাখার প্রতিজ্ঞা করেই যেন তিনি ঐ পদে আসীন হয়েছেন। বিরোধীদের স্পষ্ট অভিযোগ নিরপেক্ষতার ছিটেফোঁটাও নেই তার মধ্যে। সরকার পক্ষ যখন খুশি বলতে পারে। তার আপত্তি নেই। কিন্তু বিরোধীরা কিছু বলতে চাইলেই তিনি সরাসরি নাকচ করে দেবেন। চেয়ারপার্সনের চেয়ারে বসে তিনি আরএসএস’র প্রশংসা করেন, শাসক দলের আদর্শগত ও নীতিগত বিষয় নিয়ে ঢালাও প্রচার করেন। এমন মানুষের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব তো আসবেই। দেশের সংসদীয় গণতন্ত্রের ঐতিহ্য ও সুনাম রক্ষার জন্য সেটা করতে হবে।

Comments :0

Login to leave a comment