দৃঢ় আত্মবিশ্বাসের সুরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দেশবাসীকে বলেছিলেন আগামী ২০৩৬ সালে অলিম্পিকের আসর বসবে ভারতে। তাঁর নেতৃত্বে ভারতের সার্বিক উন্নতি ও অগ্রগতি এতটাই দ্রুত হচ্ছে যে, অলিম্পিকের মতো বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্রীড়া প্রতিযোগিতা আয়োজনে আর কোনও সমস্যা নেই। আসলে অলিম্পিকের আয়োজন এতটাই ব্যয়বহুল যে ইচ্ছে থাকলেও বেশির ভাগ দেশের পথে তা সম্ভব হয় না। ভারতের মতো মধ্য আয়ের একটা দেশের পক্ষে সেটা কার্যত অসম্ভব। জোর করে নাম কেনার জন্য বা দুনিয়ার সামনে আপন কীর্তি খোদাই করার জন্য আয়োজন করাই যেতে পারে। কিন্তু তার জেরে একদিকে যেমন বিপুল দেনায় ডুবতে হবে অন্যদিকে উন্নয়ন ও জনকল্যাণ খাতে ব্যয় কয়েক বছরের জন্য নির্মমভাবে ছাঁটাই করতে হবে।
মোদী তার স্বভাবগত প্রেক্ষাপট থেকে ২০৩৬ সালে অলিম্পিকের আয়োজনের ঘোষণা করেছিলেন। যেমন বলেছিলেন ২০৪৭ সালের মধ্যে ভারতকে আমেরিকা-পশ্চিম ইউরোপের মতো অতি উন্নত দেশে পরিণত করবেন। তারও অন্তত পাঁচ বছর আগে বলেছিলেন ভারত পাঁচ ট্রিলিয়ন ডলার অর্থনীতি হবে। পাঁচ বছর কেটে গেলেও তা হয়নি। বলেছিলেন বিশ্বের চতুর্থ, তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হবে। বাস্তব অবস্থার কারণে চতুর্থ হয়েছে, তৃতীয়ও হবে। কিন্তু তাতে দেশবাসীর জীবনমানের কোনও হেরফের হচ্ছে না। মাথাপিছু আয় কার্যত কিছুই বাড়ছে না।
সারা বিশ্বে যখন করোনা ছড়িয়ে পড়ছে, বেশির ভাগ দেশে যখন লকডাউন সহ নানা কড়া বিধিনিষেধ চালু হয়েছে তখন ভারত গোটা ব্যাপারটাই চেপে রেখে গুজরাটে মহাসমারোহে ‘নমস্তে ট্রাম্প’ উৎসব পালন করেছে। মোদীর অতি প্রিয় বন্ধু ডোনাল্ড ট্রাম্পের রাজকীয় সংবর্ধনা হলো আমেদাবাদে নবনির্মিত বৃহত্তম স্টেডিয়ামে। যার নামকরণ হয় স্বয়ং মোদীর এবং তাঁর কর্পোরেট বন্ধু আদানির নামে। তখন থেকেই মাথায় ঢোকে নিজের রাজ্য গুজরাটকে কেন্দ্র করে অলিম্পিকের আসর বসাবেন। সেই মতো আইওসি’র কাছে ইচ্ছাপত্রও পাঠানো হয়।
সম্প্রতি ভারতের এক প্রতিনিধি দল আইওসি’র সদর দপ্তরে যান এই বিষয়ে আলোচনার জন্য। কিন্তু হাসি মুখে তাঁরা ফেরেননি। আইওসি কর্তৃপক্ষ যা বলেছে তাতে ২০৩৬ সালে ভারতে অলিম্পিকের আয়োজন বিশবাঁও জলে। ক্রীড়া প্রশাসন ভারতে মোটেই ভালো নয়। আইওসি সম্পর্কে অনেকগুলি উদ্বেগের বিষয় জানিয়েছে। যেমন, ভারতীয় অলিম্পিক সংস্থার পরিচালনা নিম্নমানের। ভারতে যথেচ্ছ ডোপিংয়ের ঘটনা, অলিম্পিকে ভারতের সাফল্য যথেষ্ট খারাপ। গত প্যারিস অলিম্পিকে ৭১ জন প্রতিযোগী গিয়ে মাত্র ৬টি পদক পেয়েছে।
আলোচনার পর কোনও পক্ষের বক্তব্যেই ২০৩৬ সালের উল্লেখ নেই। বলা হয়েছে ভবিষ্যতে কোনও সময়। অর্থাৎ আয়োগের সুযোগ নির্ভর করছে কত তাড়াতাড়ি ও সঠিকভাবে উদ্বেগের বিষয়গুলি সমাধান করা যায়। এটাও স্পষ্ট ঘর ঠিকঠাক না হলে পরবর্তী আলোচনার সম্ভাবনা কম। এদিকে গত অক্টোবর থেকে ভারতের জন্য অ্যাথলেট ওয়েলফেয়ার অনুদান বন্ধ রেখেছে আইওসি। গত দু’বছর আইওএ পরিচালনায় অনিয়ম-স্বজনপোষণের অভিযোগের মীমাংসা হয়নি। আন্তর্জাতিক একাধিক রিপোর্টে ডোপিং কলঙ্কে ভারতের নাম একেবারে সামনের দিকে। কোথাও প্রথম, কোথাও দ্বিতীয়। অলিম্পিক আয়োজনের আশা এই অবস্থায় পূর্ণ হবে কিনা ভবিষ্যৎই বলতে পারবে।
Comments :0