SOUTH ASIAN UNIVERSITY

প্রতিবাদ করলেই বহিষ্কার, পঙ্গু ছাত্র

জাতীয়

SFI SOUTH ASIAN UNIVERSITY DELHI BENGALI NEWS বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটের সামনে অবস্থান চালাচ্ছেন দুই ছাত্রী। নিজস্ব চিত্র।

কেন্দ্রীয় বিদেশ মন্ত্রকের নিয়ন্ত্রণাধীন সাউথ এশিয়ান ইউনিভার্সিটিতে এক সংখ্যালঘু  ছাত্রকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে গভীর পঙ্গুত্বের দিকে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দেওয়া মানসিক চাপে চিরদিনের মতো বিছানা থেকে ওঠার ক্ষমতা লোপ পেয়েছে তাঁর। মারাত্মক এই অভিযোগ তুলেছে এসএফআই। 

সহপাঠীর উপর হওয়া অত্যাচারের প্রতিবাদ করায় বাকি পড়ুয়াদের উপরেও প্রাতিষ্ঠানিক দমনপীড়ন চালানো হচ্ছে বলে অভিযোগ। এসএফআই সংগঠকদেরও বহিষ্কার করা হচ্ছে। রাতের অন্ধকারে দুই ছাত্রীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের হোস্টেল খালি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রতিবাদে দুই ছাত্রী অপূর্বা ওয়াইকে এবং প্রচেতা মজুমদার বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটে অনির্দিষ্টকালের জন্য অবস্থান শুরু করেছেন। 

প্রতিবাদে কেন্দ্রীয় বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করকে চিঠি পাঠিয়েছেন সিপিআই(এম) সাংসদ ভি শিবদাসন এবং এ রহিম। 

একই আচরণ দেখা যাচ্ছে অপর কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে। তার বিরুদ্ধেও লড়াই চালাচ্ছে এসএফআই। 

ঘটনার সূত্রপাত ২০২২ সালের অক্টোবরে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অস্বাভাবিক হারে ফি বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু স্নাতকোত্তর সহ এমফিল এবং পিএইচডি’র পড়ুয়াদের স্টাইপেন্ড বাড়ানো হয়নি। সমস্যায় পড়েন অর্থনৈতিক ভাবে পিছিয়ে পড়া পড়ুয়ারা। তেমনই একজন সোশিওলজির প্রথম বর্ষের ছাত্র অম্মর আহমেদ। অম্মর এবং তাঁর বাবা দুজনেই সাইকিয়াট্রিক রোগী। কিন্তু তারপরেও ফিজ বৃদ্ধি বিরোধী আন্দোলন করার জন্য কর্তৃপক্ষের রোষের মুখে পড়তে হয় তাঁকে। ৪ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোক্টর অধ্যাপক কপিল কুমার শর্মা অম্মরকে ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের বাকি দিনগুলির জন্য বহিষ্কার করেন। 

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার অনুনয় জানালেও তাঁর শাস্তি মুকুব করা হয়নি। বরং প্রশাসনিক ভাবে তার উপর আরও চাপ তৈরি করা হয়। তাঁর অসুস্থতা নিয়েও রসিকতা করা হয় বলে অম্মরের সহপাঠীদের অভিযোগ। মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত হয়ে ২২ নভেম্বর মাঝরাতে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন অম্মর। বর্তমানে সম্পূর্ণ ভাবে শয্যাশায়ী তিনি। 

এর প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উপর চাপ তৈরি করেন অম্মরের সহপাঠী সহ বাকি পড়ুয়ারা। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ তুলে দিল্লির চাণক্যপুরী থানায় এফআইআর দায়ের করেন অম্মরের দাদা। 

এফআইআর দায়েরের পরে ফের পড়ুয়াদের উপর দমনপীড়ন চালানো শুরু করে সাউথ দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ২০২৩ সালের ১৩ জানুয়ারি নতুন করে পাঁচ পড়ুয়াকে শো-কজ নোটিশ ধরানো হয়। এবং ১৭ ফেব্রুয়ারি ইমেলের মাধ্যমে তাঁদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এক্সপেল এবং রাস্টিকেট করা হয়। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা জানাচ্ছেন, এখনও অবধি মোট ৭জন পড়ুয়ার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। পিএইডি গবেষক ভীমরাজ এম এবং উমেশ যোশীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। একইসঙ্গে বহিষ্কারের নোটিশ দেওয়া হয়েছে এমফিল পড়ুয়া প্রচেতা মজুমদার এবং এলএলএম’র দ্বিতীয় বর্ষের পড়ুয়া অপূর্বা ওয়াইকে’কে। সোশিওলজি’র স্নাতকোত্তরের দ্বিতীয় বর্ষের পড়ুয়া কেশব সাভার্ণ এবং পিএইচডি গবেষক রোহিত কুমারকে ১ বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। প্রসঙ্গত, কেশব সাভার্ণ এসএফআই সাউথ এশিয়া ইউনিভার্সিটির অর্গানাইজিং কমিটির সদস্য। এছাড়া জরিমানা করা হয় এমএ সোশিওলজির প্রথম বর্ষের পড়ুয়া বন্যা চক্রবর্তীকে।

অপূর্বা এবং প্রচেতার অভিযোগ, তাঁদের রাতে অন্ধকারে বিশ্ববিদ্যালয়ের হোস্টেল ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দিল্লি শহরে তাঁদের যাওয়ার কোনও জায়গা নেই। তাই বাধ্য হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটের সামনে দুইদিন ধরে অবস্থান চালাচ্ছেন তাঁরা। প্রসঙ্গত, সাউথ এশিয়ান ইউনিভার্সিটি মূল শহরের বাইরে, আরাবল্লী পর্বতমালার পাদদেশে তৈরি। সেখানে রাতের বেলায় অবস্থান চালানোর ফলে স্বাভাবিক ভাবেই দুই ছাত্রীর নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। 

রবিবার  এসএফআই’র পাঁচ সদস্যের এক প্রতিনিধি দল অবস্থানরত দুই ছাত্রীর সঙ্গে দেখা করেন। ইতিমধ্যেই এসএফআই দিল্লি রাজ্য কমিটির তরফে একাধিক প্রেস বিবৃতির মাধ্যমে সাউথ এশিয়ান ইউনিভার্সিটির অচলাবস্থার কথা তুলে ধরা হয়েছে। 

সিপিআই(এম) সাংসদ এ রহিম এবং ভি শিবদাসনও এই বিষয়ে কেন্দ্রীয় বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করকে চিঠি দিয়েছেন। চিঠিতে সিপিআই(এম) সাংসদরা বলেন, স্কলারশিপের দাবিতে গণতান্ত্রিক আন্দোলন চালানোর জন্য পড়ুয়াদের বহিষ্কার করা হচ্ছে। আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের বদলে প্রশাসনিক ক্ষমতা ব্যবহার করা হচ্ছে। তারফলে এক ছাত্র আত্মহত্যার চেষ্টা করতে বাধ্য হয়েছেন। রহিম এই জটিলতা কাটাতে অবিলম্বে কেন্দ্রীয় বিদেশমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন। 

এই প্রসঙ্গে এসএফআই’র সাধারণ সম্পাদক ময়ূখ বিশ্বাস বলেন, সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক কায়দায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের অন্তর্গত এই বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করা হচ্ছে। প্রতি শিক্ষাবর্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিল কমানো হচ্ছে। এবং তার বিরুদ্ধে পড়ুয়ারা আন্দোলন করলেই দমন পীড়ন চালানো হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের এই আচরণের বিরুদ্ধে এসএফআই শেষ পর্যন্ত লড়াই চালাবে। 

Comments :0

Login to leave a comment