বিশ্বজুড়ে নয়া উদারনীতির জাঁতাকলে জর্জরিত অবস্থা থেকে মুক্তির পথ খুঁজতে আরও একটি দেশ বামপন্থায় আস্থা রাখল। লাতিন আমেরিকার ছোট অথচ অপেক্ষাকৃত অগ্রণী দেশ উরুগুয়ের মানুষ তাদের রাষ্ট্রপতি হিসাবে বেছে নিয়েছেন একজন বামপন্থী নেতা ইয়ামন্ডু ওরসিকে। গত শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে একটা দীর্ঘ সময়ব্যাপী কমিউনিস্ট গেরিলা যুদ্ধের যে অধ্যায় উরুগুয়ের ইতিহাসের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল সেই ঐতিহ্যের ধারা বহন করে গড়ে ওঠা ব্রড ফ্রন্টের প্রার্থী হিসাবে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে জয়ী হলেন ওরসি। সাধারণ শ্রমজীবী পরিবারের সন্তান ওরসি প্রথম জীবনে ছিলেন বিদ্যালয়ের ইতিহাস শিক্ষক। তখন থেকে জড়িয়ে পড়েন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে। দু’দুবার নির্বাচিত হয়েছেন মেয়র। কিংবদন্তী কমিউনিস্ট গেরিলা জোসে মোজিকার অনুগামী হিসাবে উরুগুয়ের বুকে বামপন্থী আন্দোলন বিকশিত করায় তাঁর ভূমিকা অনস্বীকার্য। প্রসঙ্গত উরুগুয়েতে প্রায় শতবর্ষ ধরে চলা দক্ষিণপন্থী দ্বিদলীয় ব্যবস্থার অবসান ঘটিয়ে চলতি শতাব্দীর একেবারে গোড়াতে বামপন্থী ব্রডফ্রন্ট নির্বাচনে জিতে ক্ষমতায় আসে। টানা তিন দফায় ২০১৫ সাল পর্যন্ত তারা দেশ শাসন করলেও ২০১৫ সালে ক্ষমতায় আসে হুইস লাকালে পৌ-র নেতৃত্বে দক্ষিণপন্থীরা। এবার ফের দক্ষিণপন্থীদের হারিয়ে ক্ষমতা দখল করে বামপন্থীরা।
বিশ্বের বেশিরভাগ দেশে বিশেষ উন্নত দেশগুলিতে যেখানে নয়া উদারনীতির ঢালাও প্রয়োগ হয়েছে সেখানে ক্রমবর্ধমান হারে মাথাচাড়া দিচ্ছে অতি দক্ষিণপন্থী তথা নব্য ফ্যাসিবাদীরা। উদারনীতির দৌলতে বেশিরভাগ দেশেরই জনকল্যাণকামী চরিত্র বদলে একচেটিয়া বৃহৎ পুঁজি চালিত খোলাবাজার অর্থনীতি চালু হয়েছে। অর্থনীতিতে রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ তুলে দিয়ে পুঁজির মালিকদের ক্ষমতা অবাধ করা হয়েছে। ফলত শ্রমজীবী মানুষের অধিকার ছাঁটাই হয়েছে। শোষণ বেড়েছে। সামাজিক নিরাপত্তা প্রত্যাহৃত হয়েছে। উৎপাদন বেড়েছে, উৎপাদনশীলতা বেড়েছে। আধুনিক বিজ্ঞান-প্রযুক্তি প্রয়োগের দৌলতে কর্মসংস্থান কমেছে, বেকারি বেড়েছে। মানুষের আয় কমেছে। সব মিলিয়ে পুঁজির ও পুঁজিপতির মুনাফা বাড়লে সাধারণ জনজীবনে সঙ্কট বেড়েছে। সম্পদের বৈষম্য হুহু করে বেড়েছে। হয়েছে সম্পদের অতি কেন্দ্রীভবন। উদারনীতির এই সঙ্কটজনক পরিণতি সমাজে অনিশ্চয়তা ও অস্থিরতা তৈরি করছে। তাকে কাজে লাগিয়ে নতুন করে রাজনৈতিক জমি খুঁজে নিচ্ছে অতি দক্ষিণপন্থী ও নব্য ফ্যাসিবাদীরা। পশ্চিম ইউরোপের বেশিরভাগ দেশেই অতি দক্ষিণপন্থীরা বেশ শক্তিশালী। ইতালিতে তারা ক্ষমতা দখল করেছে। ফ্রান্সে ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছে। আমেরিকায় ক্ষমতায় এসেছে অতি দক্ষিণপন্থী ট্রাম্প। এই ধারার বিপরীতে প্রধানত উন্নয়নশীল দেশগুলিতে দক্ষিণপন্থীদের সরিয়ে ক্ষমতায় আসছে বামপন্থী। কয়েক মাস আগে দুনিয়াকে চমকে দিয়ে শ্রীলঙ্কায় ক্ষমতায় এসেছে বামপন্থীরা। তার পরই উরুগুয়েতে। উদারনীতির ব্যর্থতার মধ্যে শ্রমজীবী সাধারণ মানুষ যে বামপন্থায় আস্থা হারাননি বরং আস্থা বাড়ছে শ্রীলঙ্কা, উরুগুয়ে তারই দৃষ্টান্ত।
Faith on Left
আস্থা বামপন্থায়
×
Comments :0