বনানী বিশ্বাস
‘‘সোনার পিঞ্জরে ধরে রেখো না আমায়,
আমারে উড়িতে দাও দূর নীলিমায়।’’
এই উদ্ধৃতিটি বেগম রোকেয়ার। পুরো নাম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন। পূর্ব পাকিস্তানের (অধুনা বাংলাদেশ) রঙপুর শহর থেকে সাত মাইল দক্ষিণে মিঠাপুকুর থানার অন্তর্বর্তী পায়রাবন্দ গ্রামের জমিদার পরিবারে রোকেয়া জন্মগ্রহণ করেন ১৮৮০ সালের ৯ ডিসেম্বর। রাজা রামমোহন রায় ও পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যসাগরের হাত ধরে যে নবজাগরণের আলো আমাদের দেশে পৌঁছেছিল তাঁদেরই যোগ্য উত্তরসূরি রোকেয়া। ওই দুই সমাজ সংস্কারের মতো তিনি প্রচলিত কুসংস্কার, অন্যায় অবিচার মেনে নিতে পারেননি। প্রতিবাদের ভাষায় তিনি সরব ছিলেন।
পিতা জহিরুদ্দিন আবু আলি হায়দার সাবের এবং মাতা রাহাতুন্নেসা চৌধুরানি। রোকেয়ার নিজের দুই ভাই ও দুই বোন ছিল। দুই ভাই আবুল আসাদ মোহাম্মেদ ইব্রাহিম সাবের ও খলিলুর রহমান আবু জায়গাম সাবের দুই বোন— করিমুন্নেসা ও হোমায়রা।
রোকেয়ার পিতা বিদ্যানুরাগী ছিলেন। তিনি কুসংস্কার মুক্ত ছিলেন না। রক্ষণশীল ছিলেন বলেই তাঁর পরিবারে কঠোর পর্দা প্রথার প্রচলন ছিল। কেবল পুরুষদের সামনে নয়, অনাত্মীয়া মহিলাদের সামনেও পরিবারের মেয়েদের পর্দা মেনে চলতে হতো। তা থেকে শিশুরাও রেহাই পেত না। এ সম্পর্কে রোকেয়া বলেছেন, ‘‘সবে মাত্র পাঁচ বৎসর বয়স হইতে আমাকে স্ত্রীলোকদের হইতেও পর্দা করিতে হইত। ছাই কিছুই বুঝিতাম না যে কোনও কাহারও সম্মুখে যাইতে নাই অথচ পর্দা করিতে হইতো।’’
শিশু রোকেয়ার জীবনকাল কেটেছে কঠোর অবরোধের মধ্যে। লেখাপড়ার আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও পিতার কাছ থেকে কোনও সাহায্য পাননি। কোনও বিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাননি। বাড়িতে দিনের বেলায় লেখাপড়ার সুযোগ ছিল না। দিনের শেষে রাত্রিতে গভীর অন্ধকারে মোমবাতি জ্বেলে বড় ভাই ইব্রাহিম সাবেরের কাছে পাঠগ্রহণ করতেন। তাঁর কাছে শিখলেন ইংরেজি ভাষা আর বড়বোনের কাছে শিখলেন বাংলা ভাষা। দুই অগ্রজ ভাইবোনের স্নেহছায়ায় ছোট্ট রোকেয়া ধীরে ধীরে জ্ঞানের জগতে কৈশোরে পৌঁছে গেলেন।
রোকেয়ার যখন ষোল বছর বয়স ১৮৯৬ সালে খান বাহাদুর সৈয়দ সাখাওয়াত হোসেনের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। ভাগলপুরের অধিবাসী সাখাওয়াত ছিলেন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট। ১৮৭৮ সালে হুগলী কলেজ থেকে বি এ পাশ করেন। তারপর কৃষিশিক্ষার বৃত্তি নিয়ে ইংল্যাান্ডে যান। তিনি ছিলেন তেজস্বী সৎ মানুষ। তিনি বিপত্নীক ছিলেন। প্রথম স্ত্রী একটি কন্যা রেখে অল্প বয়সে মারা যান। প্রৌঢ়ত্বের সীমায় পৌঁছানো অবাঙালি সাখাওয়াতকে পাত্র হিসাবে মনোনয়ন করেন রোকেয়ার বড় ভাই ইব্রাহিম সাবের।
রূপ, যৌবন, জাগতিক গুণাবলীকে প্রাধান্য না দিয়ে প্রাণাধিক প্রিয় বোন যাতে ভবিষ্যৎ জীবনে বিদ্যাচর্চা ও প্রতিভা বিকাশের সুযোগ পায় সেই দিকে লক্ষ্য রেখেই তিনি কুসংস্কারমুক্ত, উদার, শিক্ষানুরাগী, ধীর স্থির সাখাওয়াত হোসেনকে অনিন্দ্যসুন্দর লাবণ্যময়ী রোকেয়া জীবনসঙ্গী হিসাবে নির্বাচন করেন অবশ্য বোনের সঙ্গে আলোচনা করেই।
পরমপ্রিয় বড় ভাইয়ের মনের বাসনা ব্যর্থ হয়নি। বিবাহিত জীবনে রোকেয়া বিদ্যাশিক্ষা ও সাহিত্যশিক্ষার জন্য স্বামীর কাছ থেকে সকল প্রকার সহযোগিতা লাভ করেছিলেন। দাদার কাছ থেকে যে ইংরেজি শিক্ষার হাতেখড়ি হয়, স্বামীর কাছে তা পূর্ণতা পায়। স্বামীর প্রচেষ্টায় তিনি উর্দু ও ইংরেজি ভাষায় প্রভূত জ্ঞান অর্জন করেন। মাতৃভাষা বাংলা ছাড়া এই দুই ভাষাতে লিখতে পড়তে শিখেছিলেন। স্বামীর নির্দেশে ইংরেজি চিঠিপত্রের উত্তর লিখে দিতেন। বিয়ের পর ভাগলপুরে স্বামীগৃহ এবং স্বামীর মৃত্যু পর্যন্ত সেখানেই কাটান। এই সময়ে রোকেয়ার লেখা নবনূর, মহিলা, নবপ্রভা প্রভৃতি পত্রিকায় কবিতা ও প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়। পদ্মরাগ একমাত্র উপন্যাস এই সময়েই রচনা করেন। মাদ্রাজের কমলিয়া নাথান ও সরোজিনী নাইডু সম্পাদিত Indian Ladies Magazine-এ তাঁর Sultana’s Dream নামক অনবদ্য কাল্পনিক কাহিনিও প্রকাশিত হয়।
রোকেয়ার জীবনে এল চরম দুর্যোগ। দুরারোগ্য বহুমূত্র রোগে আক্রান্ত হলেন সাখাওয়াত হোসেন। চোখ দুটি নষ্ট হয়। অসুস্থ স্বামীর পরিচর্যাতে দিন কাটে। চিকিৎসার জন্য স্বামীকে কলকাতায় আনা হলো। কোনও লাভ হলো না। ১৯০৯ সালের ৩ মে তিনি প্রিয়তমাকে নিঃসঙ্গ করে চলে গেলেন।
তাঁদের দাম্পত্য জীবনের সময়কাল মাত্র তেরো বছর। রোকেয়া দুটি কন্যা সন্তানের জন্ম দিয়েছিলেন, কেউ বাঁচেনি। স্বামীর মৃত্যুর পর সৎকন্যা ও জামাতার নিগ্রহ শুরু হলো সম্পত্তির কারণে। মাত্র ২৯ বছর বয়সে সুখী জীবনের স্রোতে চলতে হলো তাঁকে। সম্পূর্ণ ভিন জীবনের পথ চলা শুরু হলো — অচেনা নতুন জগতে দৃঢ় চিত্তে এগিয়ে চললেন রোকেয়া।
ভাগলপুরের তদানীন্তন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ সাহ আবদুল মালেকের সরকারি বাসভবন গোলকুঠিতে ১৯১০ সালের ১ অক্টোবর রোকেয়া স্বামীর নামে সাখাওয়াত মেমোরিয়াল স্কুল প্রতিষ্ঠা করলেন পাঁচজন ছাত্রী নিয়ে। তার মধ্যে চারজনই মালেক সাহেবের কন্যা। মিতব্যয়ী সাখাওয়াত হোসেন মেয়েদের স্কুল প্রতিষ্ঠার জন্য রোকেয়াকে দশ হাজার টাকা দিয়েছিলেন। স্বামীর ইচ্ছা পূরণ করতে এবং নিজের বাসনাকে বাস্তবায়িত করতে নতুন জীবন শুরু। ভাগলপুরের বাস ছাড়তে হলো শ্বশুরবাড়ির নির্যাতনের কারণে। ১৯১০ সালের ৩ ডিসেম্বর ভাগলপুর ত্যাগ করে কলকাতায় মালেক সাহেবের ছোট ভাই সৈয়দ আবদুস মালেকের বাড়িতে আশ্রয় নেন।
১৯১১ সালের ১৬ মার্চ কলকাতার ১৩নং ওয়ালিউল্লাহ লেনে বাড়ি ভাড়া করেন। সেই বাড়িতে ৮ জন ছাত্রী নিয়ে সাখাওয়াত মেমোরিয়াল গার্লস স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন এবং সেখানে তিনিও থাকতেন। ৯ মে ১৩নং ইউরোপিয়ান অ্যাসাইলাম লেনে স্কুলটি স্থানান্তরিত হয়। ১৯১৫ সালে ডিসেম্বরে পঞ্চম শ্রেণি শুরু হয়। উচ্চ প্রাইমারি স্কুলে উন্নীত হয়। ১৯১৬ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি ৮৬/এ লোয়ার সার্কুলার রোডে স্থানান্তরিত হলো ছাত্রী সংখ্যা বেড়ে হ’ল ৮৪ জন। ১৯১৬ সালের ডিসেম্বরে ছাত্রী সংখ্যা ১০৫ জন। ১৯২৭ সালে ছাত্রীর সংখ্যা দাঁড়ালো ১৩৩। ১৯৩২ সালে ১৬২নং লোয়ার সার্কুলার রোডে স্কুলটির স্থান বদল হলো। ১৯৩৫ সালে ১৯ ডিসেম্বর সরকারি আদেশ অনুসারে সাখাওয়াত মেমোরিয়াল গার্লস স্কুল সরকারি বিদ্যালয়ের স্বীকৃতি পায়। স্কুলটির নাম হয় সাখাওয়াত মেমোরিয়াল সরকারি বালিকা বিদ্যালয়। স্কুলটি আজ পশ্চিমবাংলার খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠানগুলির অন্যতম।
১৯১৬ সালে রোকেয়া ‘অঞ্জুমান খাওয়াতীনে ইসলাম নামে একটি মহিলা সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। মুসলমান নারী সমাজের কল্যাণ সাধনই ছিল এই সংগঠনের লক্ষ্য। পশ্চাৎপদ নারী সমাজকে সচেতন করতে এবং অসহায় নারীদের সাহায্যার্থে এই সংস্থা গড়ে উঠেছিল। তিনি ছিলেন সাধারণ সম্পাদিকা। সভানেত্রী ছিলেন আয়েষা খাতুন। সমাজের দুর্দশাগ্রস্ত নারীদের পুনর্বাসনের লক্ষ্য নিয়ে ‘নারীতীর্থ’ প্রতিষ্ঠা করেন ডাঃ লুৎফার রহমান— রোকেয়াকে এই প্রতিষ্ঠানের সভানেত্রী নিয়োগ করেন।
দীর্ঘদিনের প্রথাবদ্ধ সংস্কার, অন্ধত্ব জড়তার বিরুদ্ধে রোকেয়া একাই লড়াই করেছেন। ১৯০৪ সাল থেকে লেখা শুরু করেন, আমৃত্যু তিনি সাহসের সঙ্গে লিখেছেন। তাঁর রচনার মূল কেন্দ্র ছিল নারী। ধর্মীয় গোঁড়ামি অন্ধ কুসংস্কার থেকে বেরিয়ে মানুষ হিসাবে নারীকে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছেন সমাজের রক্ত চক্ষুকে অগ্রাহ্য করেই।
রোকেয়ার প্রকাশিত গ্রন্থ পাঁচটি — মতিচূড় (প্রথম খণ্ড ১৯০৪) Sultana’s Dream (সুলতানার স্বপ্ন) (১৯০৮), মতিচূড় (দ্বিতীয় খণ্ড ১৯২২) পদ্মরাগ (১৯২৪) এবং অবরোধ বাসিনী (১৯৩১)।
রোকেয়ার লেখা গ্রন্থগুলি পড়লে তার মধ্যে প্রতিবাদী মানসিকতার পরিচয় পাই— যা আজও মনকে নাড়া দেয়। আজকের সময়ের চাওয়া-পাওয়া, আশা-আকাঙ্ক্ষা, দুঃখ-বেদনা, আনন্দের সঙ্গে কিভাবে মিশে যায় আজ থেকে একশো বিয়াল্লিশ বছর আগেকার রমণীর চিন্তা-চেতনা, ধ্যান-ধারণা— ভাবলে অবাক হতে হয়।
কন্যা সন্তান ও পুত্র সন্তানের প্রতি লিঙ্গ বৈষম্য আজও সমাজে চলছে। এই বৈষম্যের কথা রোকেয়া রূপক কাহিনি ‘মুক্ত ফল’ লিখেছেন। সেখানে কাঙালিনী তাঁর কন্যা সন্তানদের উপেক্ষা করে স্নেহমমতা পুত্র সন্তানদের উজার করে দিলেও মৃত্যু শয্যায় পুত্র সন্তানরা মুক্ত ফল আনতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত বঞ্চিত দুই কন্যা সন্তান মাতার আরোগ্য বিধানের জন্য সকল প্রতিকূলতা অতিক্রম করে ভাইদের সঙ্গে মুক্ত ফল আনতে সক্ষম হয়। কাঙালিনীর সুদীর্ঘ নিরাশ যামিনীর অবসান হলো। রোকেয়া বলতে চেয়েছেন নারীরা সমাজে উপেক্ষিত। নারীপুরুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টা ছাড়া সমাজের অগ্রগতি সম্ভব নয়। নারীকে বঞ্চিত করলে চলবে না তাকেও পুরুষের সমান সুযোগ দিতে হবে। তা না হলে কীভাবে নারীপুরুষের সমান হয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করবে? ‘স্ত্রী জাতির অবনতি’’ প্রবন্ধে তিনি পথের সন্ধান দিয়েছেন ‘‘যদি স্বাধীনভাবে উপার্জন করিলে স্বাধীনতা লাভ হয়, তবে তাহাই করিব। আবশ্যক হইলে আমরা লেডি কেরানি হইতে আরম্ভ করিয়া লেডি ব্যারিস্টার, লেডি জজ— সবই হইব। পঞ্চাশ বৎসর পর লেডি ভাইসরয় হইয়া এ দেশের সমস্ত নারীকে রানি করিয়া ফেলিব। উপার্জন করিব না কেন?
আমাদের কি হাত নাই? পা নাই? নাকি বুদ্ধি নাই? যে পরিশ্রম আমার স্বামীর গৃহকার্যে ব্যয় করি, সেই পরিশ্রম দ্বারা স্বাধীন ব্যবসা করিতে পারি না?’’
সমাজে নারীর স্বাধীন পদচারণার জন্য প্রয়োজন শিক্ষা ও আর্থিক স্বনির্ভরতা। নারীশিক্ষার প্রসার ঘটাতে চেয়েছিলেন। উদাত্ত কণ্ঠে বলেছিলেন সমাজের অর্ধাংশকে পঙ্গু করে অগ্রসর হওয়া যায় না। বিবাহ একমাত্র নারীদের জীবনের লক্ষ্য নয়, নারীকে স্বাবলম্বী হতে হবে। সে নিজের পথ নিজেই স্থির করবে। নিজের শক্তি সম্পর্কে আত্মপ্রত্যয় অর্জন করতে হবে। পরনির্ভর জীবন অবমাননাকর। এটাই পদ্মরাগ উপন্যাসের মূল কথা। রোকেয়ার ব্যতিক্রমী চরিত্রের বিশেষত্ব এখানে।
রোকেয়ার জীবনের স্বকীয়তা সম্পর্কে আলোচনা করতে গেলে প্রথমেই উল্লেখ করতে হয় তাঁর স্বদেশপ্রেম। তিনি ভারতবর্ষ নামক দেশকে ভালোবেসেছিলেন। দেশবাসীকে ভালোবাসতে আহ্বান জানিয়েছিলেন। দেশের সব মা’কে বলেছিলেন তাঁরা যেন সন্তানকে শেখায় তারা প্রথমে ভারতবাসী—তারপর হিন্দু-মুসলমান খ্রিস্টান প্রভৃতি। রোকেয়া পদ্মরাগ’ উপন্যাসে ‘তারিণী ভবন’কে ভারতবর্ষের ক্ষুদ্র সংস্করণ হিসাবে দেখিয়েছেন। সকল ধর্ম, বর্ণ, সম্প্রদায়ের মানুষ সেখানে সান্তিতে বসবাস করে— এটা যেন রোকেয়ার স্বপ্নের ভারত।
রোকেয়া চেয়েছিলেন হিন্দু-মুসলিমদের ঐক্য দেশের সামগ্রিক উন্নতির জন্য প্রয়োজন। বিদ্বেষ, ঘৃণা ত্যাগ করে উভয় সম্প্রদায়ের মিলন— এটা তিনি আন্তরিকভাবে চেয়েছিলেন।
অনেকে ভেবেছিলেন যে, রোকেয়া মুসলমান সমাজের কল্যাণেই তাঁর জীবনের কর্মপন্থা স্থির করেছিলেন। এটা ভ্রান্ত ধারণা। তিনি উপলব্ধি করেছিলেন হিন্দুর তুলনায় মুসলমান সমাজ অনগ্রসর। দেশের উন্নতিকল্পেই পশ্চাৎপদ মুসলমান সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পথ দেখিয়েছিলেন।
রোকেয়ার জীবনের আদর্শ ছিল মানবকল্যাণ। সেই লক্ষ্যে পথের বাধাগুলিকে অতিক্রম করেছেন। জীবনের শেষদিন পর্যন্ত ত্যাগ স্বীকার করে গেছেন। নির্ভীক কণ্ঠে নিজের প্রত্যয়কে বাস্তবায়িত করেছেন।
রোকেয়াকে ‘নারীবাদী’ বলা হয়— এটা সঠিক নয়। তিনি পুরুষতান্ত্রিক সমাজের বিরোধিতা করেছিলেন—সকল পুরুষের বিরুদ্ধে সমাজে প্রচলিত অন্যায় রীতিনীতি, বিধিনিধান ও আচার-আচরণকে সমালোচনা করেছেন। চিন্তার জগতে তিনি এক আত্মপ্রতিষ্ঠ ব্যক্তিত্ব।
১৯৩২ সালের ৮ ডিসেম্বর রাতে তিনি বচনা করেছিলেন ‘‘নারীর অধিকার’’ নামক প্রবন্ধটি। অসমাপ্ত থেকে গেল অনেক কাজ। ৯ ডিসেম্বর ভোরে শরীরে একটু যন্ত্রণা, তারপরে সব শেষ। সংগ্রামী জীবনের অবসান। অসংখ্য মানুষের অন্দরে-অন্তরে সেদিন বেজেছিল বেদনাবীণা। সেদিনটি ছিল বাঙালি জাতির অপূরণীয় ক্ষতির দিন। (মীরাতুন নাহার)
কারও সেবা নিতে হয়নি, আত্মনির্ভরশীল রোকেয়া নিজের ওপর নির্ভর করে বেঁচেছিলেন, চলেও গেলেন সেইভাবে। রোকেয়ার সমাধি হলো কলকাতার উপকণ্ঠে সোদপুরের পানিহাটিতে তাঁর আত্মীয়বর্গের পুরাতন গোরস্থানে। আত্মীয়-স্বজনের তত্ত্বাবধানে তাঁর শবদেহ সোদপুরে নেওয়া হয়।
প্রতিবছর ৯ ডিসেম্বর রোকেয়া অনুরাগী নরনারী রোকেয়ার সমাধিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করতে সমবেত হন। বেদনার কথা কলকাতা শহরে কর্মময় জীবনের অনেকটাই রোকেয়া অতিবাহিত করেছেন। সেখানে একটা স্মৃতিস্তম্ভ তৈরি হলো না, যেখানে আমরা আমাদের শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করতে পারি। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কাছে আবেদন জানাই, মহীয়সী নারীর স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করার জন্য। এই উদ্দেশে সকল গণতান্ত্রিক প্রগতিশীল জনগণকে উদ্যোগ গ্রহণে অগ্রসর হতে হবে।
Comments :0