Probandha — BENGAL FOOTBALL | SANKO MUKHOPADHAYA | MUKTADHARA — 17 APRIL 2024

প্রবন্ধ — সব খেলার সেরা | সাঁকো মুখোপাধ্যায় — মুক্তধারা | ১৭ এপ্রিল ২০২৪

সাহিত্যের পাতা

Probandha  BENGAL FOOTBALL  SANKO MUKHOPADHAYA  MUKTADHARA  17 APRIL 2024

প্রবন্ধ

সব খেলার সেরা
সাঁকো মুখোপাধ্যায়

মুক্তধারা



কল্যাণ নগর বিদ্যাপীঠ খড়দহ উত্তর ২৪ পরগনা
কল্যান নগর খড়দহ উত্তর ২৪ পরগনা 
৭৪৩৯২৮৮৪৫৪
বাংলা নববর্ষ মানে মাঠে মাঠে বার পূজা। অতীতের প্রথা ওই দিন থেকে নতুন করে আবার মাঠে ফুটবল নিয়ে দৌড়।
ফুটবল খেলা ইংরেজদের হাত ধরেই ভারতবর্ষে এসেছিল। যেসব ইংরেজি সৈন্য কর্মচারী এদেশে আসতেন তারা অবসর বিনোদনের মাধ্যমে আরও অনেক খেলার সাথে ফুটবল খেলে বে doছে নিয়েছিলেন। অনুমান করা হয় নগেন্দ্রপ্রসাদ সর্বাধিকারী এরকমই একটি খেলার মুহূর্তে ছিটকে আশা সজোরে লাথি মেরে বাঙালির ফুটবল আবেগের প্রথম উন্মাদনা বয়ে এনেছিলেন। নগেন্দ্রনাথ প্রেসিডেন্সির অধ্যাপক জি.এ স্ট্যাকের সহযোগিতায় ফুটবলের নিয়মকানুন জেনে নিয়ে ভুবনের খেলা শুরু করেছিলেন তা তারি হাত ধরে বয়েজ ক্লাব, প্রেসিডেন্সি ক্লাব ১৮৮৭ সালে শোভাবাজার ক্লাব প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাঙালির যুব সমাজকে ফুটবলের দিকে টেনে আনেন।
বাঙালি সমাজে ধীরে ধীরে খেলা হিসেবে ফুটবল জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ফুটবলকে ঘিরে  বাঙালির আবেগের চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ আমরা দেখতে পাই শিবদাস ভাদুড়ীর নেতৃত্বে মোহনবাগানের আই.এফ.এ  সিল্ড ফাইনালে ইস্ট ইর্য়ক কে ২-১ গোলে হারানোর মধ্য দিয়ে।  সেই সময় সদ্য গড়ে ওঠার জাতীয়তাবাদী আন্দোলন বঙ্গভঙ্গ ইংরেজদের ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে ১১ জন খালিপায়ের খেলোয়াড় বুট পরা ইংরেজদের কে হারিয়ে দেওয়ার যে বিপুল বাঙালি জাতীয়তাবাদী আবেগে আলোড়ন তুলেছিল তারই ফলশ্রুতিতে পরবর্তী ৩০ বছরের মধ্যে বাঙালির গ্রামে গঞ্জে প্রায় প্রতিটি অঞ্চলে ফুটবল খেলার ক্লাব গজিয়ে ওঠে এবং ফুটবল বাঙালির জাতীয় সংস্কৃতির অঙ্গ হয়ে দাঁড়ায় যার পরিচয় আমরা পাই সিনেমায় কবিতায় পরবর্তী বহু বছর ধরে।


বাঙালির ফুটবলের স্বর্ণযুগকে বুঝতে গেলে বাঙালির সামাজিক রাজনৈতিক তৎকালীন প্রেক্ষাপটকে ধরতে হবে। জাতীয়তাবাদী আবেগের সঙ্গে ফুটবলের যোগ অবিচ্ছেদ্য। মহামেডান ক্লাব থেকে ইস্টবেঙ্গল ক্লাব যেমন গড়ে ওঠে পাশাপাশি এই কলকাতা থেকে এবং বাংলার বিভিন্ন ছোট ছোট ক্লাব গজিয়ে ওঠে ফুটবল বাঙালির বিনোদনের  প্রধানতম মাধ্যম হয়ে ওঠে। ১৯৪৭ সালের দেশভাগের পরিপ্রেক্ষিতে ইস্টবেঙ্গল ক্লাব  ওপার বাংলার ছিন্নমূল  মানুষদের কঠিন জীবন সংগ্রামে আসা, আকাঙ্খার, ভালোবাসার, প্রতিষ্ঠান হয়ে হয়ে দাঁড়ায় ফলে এই সময় ইস্টবেঙ্গল এবং মোহনবাগান ক্লাবের মধ্যে খেলা এক অন্য মাত্রা যোগ হয়। এই সময় ফুটবল কে কেন্দ্র করে অর্থের যোগান, সামাজিক মর্যাদা , জীবিকার কিঞ্চিৎ নিশ্চয়তা এই সব কিছু মিলিয়ে কলকাতার ফুটবলে  অসংখ্য দক্ষ প্লেয়ারের যোগান বাড়ে এবং ভারতীয় ফুটবলের মক্কা হিসেবে পরিচিত হয়। এই সময় শৈলেন মান্না, আমেদ  খান, চুনি, পিকে, গোষ্ঠ পাল, উমাপতি কুমার দের পেরিয়ে এসে   আমরা পাই বলরাম, থঙ্গরাজ, জার্নাল সিং, প্রদ্যুৎ বর্মন, অরুণ ঘোষ, চন্দ্রশেখর প্রসাদ, নইমুদ্দিন এইরকম অসংখ্য প্লেয়ার কে যারা সবাই বাঙালি ছিলেন না কিন্তু উন্মাদনায় তাদের ভূমিকা অনস্বীকার্য।


এই ফুটবল উৎকর্ষতার প্রমাণ আমরা পাই শৈলেন মান্নার নেতৃত্বে ১৯৫১ সালের এশিয়ান গেমসের সোনা জয়ের মধ্যে দিয়ে যা শুরু হয় ১৯৫৬ সালের মেলবোর্ন অলিম্পিকে ভারত গোটা বিশ্বকে চমকে দিয়ে চতুর্থ হয়। এই অলিম্পিকে পিকে ব্যানার্জি রা অস্বাভাবিক খেলেছিলেন নেভিল ডিসুজা হ্যাটট্রিক করেছিলেন। ১৯৬০ সালে পিকে ব্যানার্জীর নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দল অসাধারণ খেলেছিলেন  এবং ফুটবল বোদ্ধাদের প্রশংসা আদায় করেছিলেন।

১৯৬১ সালে রহিম সাহেবের কোচিং এ চুনি গোস্বামীর নেতৃত্বে ভারতীয় দল ইন্দোনেশিয়া কে ২-১ গোলে পরাজিত করে দ্বিতীয়বার স্বর্ণপদক জয় করে এশিয়ান গেমসে ভারতের শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠা করেন।এই দলে পিকে ব্যানার্জি, বলরাম অসাধারণ খেলেছিলেন। ১৯৫১ থেকে ৬১ সালের ভারতীয় দলের এশিয়ার অন্যতম প্রধান শক্তি প্রতিষ্ঠা লাভ এবং ১৯৫৬ এর মেলবোর্ন এবং ১৯৬০ এর রোম অলিম্পিকে বিশ্বমঞ্চে নিজেদের মেলে ধরবার অন্যতম মূল খেলোয়াড় ছিলেন  বাঙালিরা। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এর নেতৃত্ব ছিলেন বাঙালি অধিনায়ক। শৈলেন মান্না থেকে পিকে ব্যানার্জি হয় চুনি গোস্বামী এছাড়া ভারতীয় দলে সেই সময় যারা দাপিয়ে খেলেছিল, জার্নাল সিং, থঙ্গরাজ, বলরাম, নইমুদ্দিন এরা সবাই কলকাতার বড় দলগুলির নামি প্লেয়ার ছিলেন। ফলে বাংলা তথা  কলকাতার ফুটবলের গতিমানতা বজায় ছিল যার রেশ আমরা পাই ১৯৭০ সালের শেষবারের মতো এশিয়ান গেমসে ব্রোঞ্জ পদক জয়ের মধ্যে দিয়ে। এই দলেও সুধীর কর্মকার থেকে শুরু করে সুভাষ ভৌমিক এর মত অনেক গুরুত্বপূর্ণ বাঙালি খেলোয়াড় ছিলেন। ৬০ - ৭০ র দশক জুড়ে সুকুমার সমাজপতি, কাজল মুখার্জি, সুভাষ ভৌমিক, সুধীর কর্মকার, মানস ভট্টাচার্য, প্রসুন,  বিদেশ বসু প্রমূখ অসংখ্য বাঙালি উঠে  আসতে দেখতে পাই। এই সময় ভারতীয় দল হিসেবে না হলেও ইস্টবেঙ্গল ক্লাব ইরানের বিখ্যাত পাস ক্লাবকে হারিয়েছিল, মোহনবাগান পেলে সমৃদ্ধ বিখ্যাত কসমসের সঙ্গে ২-২গোলে ড্র করেছিল। এই টুকরো ম্যাচগুলো যেন বাঙালি ফুটবল আবেগের শেষ আলোর চিহ্ন হিসেবে রয়ে গেছে।


পরিশেষে আমরা বলতে পারি ১৯১১ সালের আইএফএ শিল্ড জয়ের মধ্যে দিয়ে বাঙালির আবেগের সূচনা হয়েছিল তার প্রসার আমরা দেখতে পাই ৫০ থেকে ৬০ এর দশকে। ফলে ৫০ - ৭০ র দশকে বাংলার ফুটবলের স্বর্ণযুগ বলা যায়। শুধুমাত্র ফুটবলকে কেন্দ্র করে সিনেমা মতি নন্দীর স্ট্রাইকার বা স্টপার  এর মত উপন্যাস অথবা মান্না দে এর বিখ্যাত গান "সব খেলার সেরা বাঙালির তুমি ফুটবল "সেই আবেগ বাঙালির সংস্কৃতির, বাঙালির চেতনায় জড়িয়ে আছে। মান্না, চুনি, পিকে, বলরাম কে নিয়ে বাঙালির স্মৃতি তার ফুটবলকে আঁকড়ে ধরে বেঁচে থাকবে।

দ্বাদশ শ্রেণী
কল্যাণ নগর বিদ্যাপীঠ খড়দহ উত্তর ২৪ পরগনা
কল্যান নগর খড়দহ উত্তর ২৪ পরগনা 
৭৪৩৯২৮৮৪৫৪

Comments :0

Login to leave a comment