Yogi Mohan Bhagwat

যোগী-মোহন সমাচার

সম্পাদকীয় বিভাগ

RSS chief speaking on Mandir-Masjid issue

অনেকটা ভূতের মুখে রামনামের মতো আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত সম্প্রীতির বার্তা দিয়ে ধাঁধা তৈরি করে দিয়েছেন। বলেছেন, অযোধ্যায় রামমন্দির তৈরি হয়েছে, সেটা প্রয়োজন ছিল। তার অর্থ এই নয় তাকে সামনে রেখে যত্রতত্র যে কেউ মসজিদের নিচে মন্দির খুঁজে বেড়িয়ে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা তৈরি করবেন। সম্প্রীতি ভারতের ঐতিহ্য। এখানে সকলে মিলে মিশে একসঙ্গে থাকে। সংখ্যাগুরু, সংখ্যালঘু বলে কিছু হয় না, সকলেই সমান। দেশে সংবিধান আছে, আইন আছে সেই মতোই আমাদের চলতে হবে। আরও একধাপ এগিয়ে ভাগবত বলেছেন রাম মন্দির বানিয়ে বা নতুন করে অনুরূপ জিগির তুলে মন্দির বানিয়ে যদি কেউ মনে করে হিন্দুদের নেতা হবে সেটা হবার নয়।
প্রসঙ্গত অযোধ্যায় রাম মন্দির নির্মাণের পর থেকে উত্তর প্রদেশ সহ বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে সঙ্ঘ পরিবারের শাখা বিশ্ব হিন্দু পরিষদ, বজরঙ দল ইত্যাদির নেতৃত্বে জায়গায় জায়গায় মসজিদের নিচে মন্দির ছিল বলে লাগাতার উত্তেজনা তৈরি করা হচ্ছে। আদালতে মামলা করে সমীক্ষার দাবি আদায় করে পরিস্থিতি আরও জটিল করা হচ্ছে। উত্তর প্রদেশে সম্ভলে একে ঘিরে চার জনের মৃত্যু হয়েছে। সর্বত্র শাসক বিজেপি দল এবং তাদের সরকার একাজে মদত দিচ্ছে। উত্তর প্রদেশের গেরুয়াধারী মুখ্যমন্ত্রী তো নিজেই প্রতিনিয়ত বিদ্বেষ ছড়িয়ে, উত্তেজনা বাড়াচ্ছেন। এমতাবস্থায় ভাগবতের ভাষণ কি গেরুয়াবাহিনীর আগ্রাসী মনোভাবে রাশ টানার জন্য নাকি অভ্যন্তরীণ বোঝাপড়ার মাধ্যমে নাটক করা তা নিয়ে ধন্ধ দেখা দিয়েছে। মনে রাখতে হবে গত জুন মাসে ভাগবত প্রথম মসজিদের নিচে মন্দির খোঁজার প্রবণতার বিরোধিতা করেছেন। পরেও তা পুনরুচ্চারিত হয়েছে ভিন্নভাবে। লোকসভা ভোটের আগে মোদীর ভগবানের দূত হয়ে আসার দাবি নিয়েও কটাক্ষ করেছিলেন ভাগবত। অথচ তারপর মন্দির-মসজিদ বিতর্ক না কমে বেড়েই চলেছে। ইতিমধ্যে সুপ্রিম কোর্ট আপাতত এমন কোনও মামলা গ্রহণে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। চালু মামলায় রায়দানও বন্ধ রাখতে বলেছে। অর্থাৎ ১৯৯১ সালের উপাসনাস্থল আইন যথাযত বলবৎ হবার পক্ষে জমি শক্ত হচ্ছে। সেটার আঁচ করেই সম্ভবত ভাগবত নতুন করে বিতর্ক সৃষ্টির রাশ টানতে চাইছেন।
এদিকে ভাগবতের বক্তব্যের বিপরীতে গিয়ে মন্দির-মসজিদ বিতর্ককে ঘিরে জোরালো জিগির তুলেছেন হিন্দুত্ববাদের পোস্টারবয় আদিত্যনাথ। কার্যত ভাগবতের বক্তব্যকে উড়িয়ে দিয়ে মোঘল আমলে মন্দির ভেঙে মসজিদ বানানোর তীব্র বিরোধিতা করেছেন। যোগীর ভাষণে এই বিতর্ক ঘিরে নতুন নতুন জায়গায় জিগির তোলার চেষ্টা হয়েছে। অথচ আরএসএস’র অতি ঘনিষ্ট যোগী। তাহলে ভাগবতের বার্তার পালটা বার্তা দেবার সাহস দেখালেন কি করে?
বিজেপি’র অভ্যন্তরে মোদীর উত্তরসূরি খোঁজা চলছে অনেকদিন ধরেই। একদা আরএসএস’র পছন্দের মোদী চান অমিত শাহ-কেই তাঁর উত্তরসূরি করতে। কিন্তু আরএসএস’র তেমন পছন্দ নন শাহ। অন্যদিকে আঁটঘাট বেঁধে আসরে নেমেছেন যোগী। ২০০২ সালে গুজরাট দাঙ্গার মধ্য দিয়ে মোদী যেমন উগ্র হিন্দুত্বের নয়নের মণি হয়ে উঠেছিলেন, এখন যোগী চাইছেন তেমন কিছু হয়ে উঠতে। এটাও ঠিক আরএসএস’র সম্মতি ছাড়া বিজেপি’র কেউ প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না। যোগী নিশ্চয়ই জানেন ভাগবতের বিরুদ্ধে গিয়ে স্বপ্নপূরণ হবে না। তাহলে কি ভাগবতের সম্মতিতেই উগ্র হিন্দুত্বের জিগির অব্যাহত রেখে নিজের প্রভাব বাড়াতে চাইছেন? আর প্রকাশ্যে বার্তা দিয়ে অন্যদের রাশ টেনে যোগীকে এগিয়ে দিতে চাইছেন। তাছাড়া ভাগবতরা এই সত্য বুঝে গেছেন শুধু হিন্দু হিন্দু করে বেশিদিন ক্ষমতা ধরে রাখা যাবে না। গত লোকসভায় তেমন ইঙ্গিতই মিলেছে। তাই আরএসএস কৌশলী পদক্ষেপে সম্প্রীতির বার্তা দিয়ে বিজেপি’র গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে চাইছেন। আর হিন্দু প্রিয় ভাবমূর্তি গড়ার সুযোগ দিচ্ছে যোগীকে। মোদী-শাহরা নিশ্চয় নীরব দর্শক থাকবে না।

Comments :0

Login to leave a comment