অনিন্দিতা দত্ত
রাইট টু এডুকেশন ফোরাম দার্জিলিঙ জেলা শাখার উদ্যোগে ছাত্র শিক্ষক অধ্যাপক শিক্ষাকর্মী শিক্ষানুরাগী নাগরিকবৃন্দদের নিয়ে একটি শিক্ষা কনভেনশন অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার বিকেলে শিলিগুড়িতে কাঞ্চনজঙ্ঘা ক্রীড়াঙ্গনের সভাকক্ষে এই কনভেনশন অনুষ্ঠিত হয়। কনভেনশনের শুরুতে আক্রান্ত শিক্ষা, বিপন্ন অধিকার ও বিপর্যস্ত সমাজ বিষয়ে শিক্ষা কনভেনশনের মূল প্রস্তাব পেশ করেন শিক্ষক নেতা বিশ্বনাথ দত্ত। জাতীয় শিক্ষানীতি ২০২৩ বাতিল করা, রাজ্যের ৮২০৭টি স্কুল বন্ধের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে, স্কুল কলেজে দ্রুত স্বচ্ছ ও স্থায়ী নিয়োগ, শিক্ষাক্ষেত্রে নজিরবিহীন দুর্নীতি ও অরাজকতার বিরুদ্ধে, ক্যাম্পাসে গণতন্ত্র পুনপ্রতিষ্ঠা ও স্বচ্ছ ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবিতে এদিনের কনভেনশনে বক্তব্য রাখেন ডব্লিউবিসিইউটিএ সম্পাদক ও এআইএফইউসিসিটিওর সভাপতি কেশব ভট্টাচার্য এবং বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও প্রাক্তন সহ উপাচার্য সিদ্ধার্থ দত্ত।
ডব্লিউবিসিইউটিএ সম্পাদক ও এআইএফইউসিসিটিও'র সভাপতি কেশব ভট্টাচার্য তার বক্তব্য জুড়ে জাতীয় শিক্ষানীতির বিপজ্জনক নানা দিক তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন। বলেন, যে কোন জ্ঞান আমাদের সমৃদ্ধ করে। শিক্ষা জগতের সঙ্কট মুক্তির লক্ষ্যে আজকের এই শিক্ষা কনভেনশন অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। বর্তমান কেন্দ্রের সরকারের পেশ করা জাতীয় শিক্ষানীতি একটি রাজনৈতিক দলিল। যেই রাজনৈতিক দলিলকে অরাজনৈতিক মোড়কে মুড়ে হাজির করা হয়েছে। জাতীয় শিক্ষানীতির উদ্দেশ্য কোনভাবেই সর্বজনীন শিক্ষা নয়, বরং শিক্ষার সুযোগ সঙ্কুচিত করাই এর কাজ। সাধারন মানুষ নয়, কর্পোরেট স্বার্থ পরিপুষ্ট করাই এই শিক্ষানীতির অন্যতম উদ্দেশ্য। এই সময়কালে শিক্ষার সর্বস্তরে পঠনপাঠনে গভীর সঙ্কট তৈরী হয়েছে। রাজ্য সরকার সর্বনাশা শিক্ষানীতি নিয়ে চলেছে। ছাত্রসংখ্যার স্বল্পতার অজুহাতে স্কুল তুলে দেবার জন্য চিহ্নিত করেছে। ড্রপআউটের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। শিক্ষা আন্দোলনকে গণ আন্দোলনের পরিপূরক করে গড়ে তোলার আহ্বান জানান তিনি।
নয়া শিক্ষানীতির বিপদ সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও প্রাক্তন সহ উপাচার্য সিদ্ধার্থ দত্ত বলেন, সারা দেশে ক্রমশই নয়া জাতীয় শিক্ষানীতির বিপদ ছড়িয়ে পড়ছে। ২০২০সালে এই শিক্ষানীতি বিকৃত ইতিহাসের ওপর দাঁড়িয়ে রয়েছে এই শিক্ষানীতি। ভঙঙ্কর এই শিক্ষানীতি লাগু হলে শিক্ষায় প্রাথমিক স্তর থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় স্তর পর্যন্ত সর্ব অংশের ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যৎ অন্ধকারে ডুবে যাবে। তাই আমরা চিন্তিত। এই শিক্ষানীতির বিপদ থেকে বর্তমান প্রজন্মের পড়ুয়াদের রক্ষা করতে হবে। কেন্দ্রের সরকার হিন্দু, হিন্দত্ব ও হিন্দুস্তান অ্যাজেন্ডাকে ঢুকিয়ে দিয়েছে জাতীয় শিক্ষানীতির অভ্যন্তরে। জাতীয় ভাষা হিসেবে হিন্দিকে চাপিয়ে দেবার চেষ্টা চলছে। শিক্ষানীতির সমগ্র দলিলে কোথাও কোন সংরক্ষন নীতির উল্লেখ নেই। উচ্চশিক্ষা পরিচালনার ক্ষেত্রে প্রথিতযশা বিজ্ঞানী, সমাজ বিজ্ঞানী ও শিক্ষাবিদদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় যে ইউজিসি গড়ে তোলা হয়েছিলো জাতীয় শিক্ষানীতিতে সেই ইউজিসি'র অবলুপ্তি ঘটানো হয়েছে। শাসকদলের হটকারি কাজকর্মোর জন্য স্কুল শিক্ষা ব্যবস্থাটাই বড় ধরনের ভাঙন ও বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে।
নিবেদিতা চক্রবর্তী, সঞ্জয় রায়, তাপস সরকার ও অরিন্দম ব্যানার্জিকে নিয়ে গঠিত সভাপতিমন্ডলী এদিনের কনভেনশনের কাজ পরিচালনা করেন। কনভেনশন থেকে সভাপতি হিসেবে সঞ্জয় রায়, সম্পাদক হিসেবে শেষাদ্রি বোস এবং কোষাধ্যক্ষ হিসেবে অরিন্দম ব্যানার্জিকে মনোনীত করে ২৫ জনের রাইট টু এডুকেশন ফোরাম দার্জিলিঙ জেলা কমিটি গঠন করা হয়েছে।
ছবি রাজু ভট্টাচার্য
Comments :0