Tug of war

ফের দড়ি টানাটানির খেলা

সম্পাদকীয় বিভাগ


পশ্চিমবঙ্গে তাঁদের লক্ষ্য ৩৫টি আসন মাত্র কয়েক মাস আগে, গত ডিসেম্বরই এরাজ্যে এসে বলেছিলেন। আর এপ্রিলে নির্বানী প্রচারে এসে তা কমিয়ে ৩০ করে দিলেন অমিত শাহ। এরপর আরও কতটা নামেন তা অবশ্যই দেখার বিষয়। বালুরঘাটে এসে মোদীর প্রধান সেনাপতির ভাষণ শুধু এই কথার জন্যই চমকপ্রদ নয়, তার আরও উপাদান আছে। নানা কারণে রাজ্যে নির্বাচনী রাজনীতি ঘোলা করার উপাদান হিসাবে আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে।  
বিভিন্ন সমীক্ষায়, তার থেকেও বড় কথা, বাস্তবতার নিরিখে এখন বেশ বোঝা যাচ্ছে বিজেপি ক্রমশ পিছাচ্ছে দেশেও, পিছাচ্ছে এরাজ্যেও। মমতা ব্যনার্জির দলের সঙ্গে বহুরকম সেটিংয়ের পরেও।  পিছাচ্ছে যে তা কোনও বিরোধী দলের দাবি নয়, অমিত শাহ নিজেও তা বুঝিয়ে দিয়েছেন। নির্বাচনী প্রচারে ভাষণ দিতে এসেছিলেন মোদী সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী। এবারের ভোটে বিজেপি’র প্রধান ইস্যু কী তা  স্পষ্ট করেছেন । স্বভাবিকভাবেই তিনি জোর দিয়েছেন অনুপ্রবেশে এবং মমতা-শাসনে রাজ্যের বিপর্যস্ত আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে। এ অনেকটা পুরানো দড়ি টানাটানির খেলা। নির্বাচনী বন্ডে যেহেতু বিজেপি সবচেয়ে বেশি টাকা নিয়েছে, তাই দুর্নীতির প্রশ্নটি আগের মতো ততটা চড়া সুরে বলছেন না স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী। তৃণমূল এবং বিজেপি মিলে বাংলার রাজনীতির কতটা অধঃপতন ঘটিয়েছে, তা বোঝার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহের হুমকি পর্যন্ত অপেক্ষা করার দরকার হয় না। মমতা ব্যানার্জির হাত ধরে আরএসএস-কে নিয়ে এসে এখন বাংলার মানুষ  অমিত শাহ চোখরাঙানি দেখছেন। পশ্চিমবঙ্গকে কদর্য রাজনীতির কোন পাঁকে নিয়ে যেতে চাইছে তা বোঝা যাচ্ছে প্রতিদিন বিজেপি-তৃণমূলের মিলিত ভাষণে।
এরাজ্যের দুষ্কৃতী ও দুর্নীতিরাজ ভাঙতে বিজেপি যে কিছুই করবে তা অনেকদিন আগেই বোঝা হয়ে গেছে । সেটা বিজেপি’র লক্ষ্যও নয়। এবার তা আরও স্পষ্ট করে দিয়েছেন অমিত শাহ। রাজ্যের পুলিশ, কেন্দ্রের এজেন্সি, এদের ওপর মানুষের ভরসা আনেকদিনই চলে গেছে। হাইকোর্ট সন্দেশখালিতে সিবিআই তদন্তের আদেশ দিয়েছে। কিন্তু বগটুইয়ের ঘটনার তদন্তের কী হলো? আগের নির্বাচনে দাড়িভিটে মৃত্যু নিয়ে তৃণমূল এবং বিজেপি দু’পক্ষ মিলে হিন্দু মুসলিম ভাগাভাগি করে রাজনৈতিক ফায়দা তুললো, অপরাধীরা শাস্তি পেল কী? ভূপতিনগরের দুষ্কৃতীদের বাঁচাতে মমতা ব্যানার্জি যেভাবে কেন্দ্রীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে  রুখে দাঁড়াতে বলছেন তা প্রশাসকের কথা নয়। রাজনীতিবিদের মতও নয়। মমতা ব্যানার্জি সরাসরি লুটেরাদের রক্ষা করতে উসকানি দিচ্ছেন। রাজ্যে সরকার পরিবর্তনের পরেই বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য বলেছিলেন, অপরাধীদের বুকের পাটা বেড়ে গেছে, তারা মনে করছে তাদের সরকার এসেছে। সেটাই এখন জলের মতো পরিষ্কার নির্বাচনী ময়দানে। সন্দেশখালির নির্যাতিতাদের নিয়ে বিজেপি ভোটে গলা চড়াচ্ছে। উন্নাও, হাথরসের নির্যাতিতাদের নিয়ে কোনও কথা বলছে কী ? আসলে দু’পক্ষই নির্যাতিতাদের পাশে দাঁড়াতে জানে না, নির্যাতিতাদের নির্বাচনে ব্যবহার করতে জানে। রাজ্য পুলিশ তো নয়ই, নির্বাচন কমিশন আর তাদের মোতায়েন করা কেন্দ্রীয় বাহিনীও নয়, তাই মানুষই  ভরসা এবারের নির্বাচনী লড়াইয়ে । মানুষের অধিকার যাতে লুট না হয় তার জন্য বামপন্থীরা মানুষকে একজোট হতে বলছে। কেন্দ্রের বাহিনী আর রাজ্যের বাহিনী মিলে তো দুই শাসকদলের দুষ্কৃতীদের পাহারা দিচ্ছে। তৃণমূল আর বিজেপি মেকি কান্নায়  এবার সবটা সামলাতে পারবে না। নিজের ভোট নিজে দিতে  মানুষ ‘লুট প্রতিরোধ বাহিনী’ গড়ে নেবেন। দুষ্কৃতী-দুর্নীতি বাহিনীর বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই অনেক মানুষ এগিয়ে এসেছেন। এবার ভোট রক্ষার লড়াই। 

Comments :0

Login to leave a comment