‘‘মোদী বোলা থা আচ্ছে দিন আয়েগা, এ কেইসা আচ্ছে দিন! তিন মাহিনা সে মজদুরি নেহি মিলা, ঘর মে দানাপানি নেহি।’’ তীব্র শ্লেষের সঙ্গে বললেন প্রমিলা ওঁরাও, জুরন্তি ওঁরাও, চতুর ওঁরাও। বকেয়া মজুরির দাবিতে বানারহাট বাজারের এলআরপি মোড়ে ১৭সি জাতীয় সড়কের তপ্ত পিচ রাস্তার উপরে ছাতা মাথায় টানা আট ঘণ্টা বসে রইলেন ৬ হাজার শ্রমিক। তাঁদের কথা, আমরা কেন্দ্রীয় সরকারের অধিগৃহীত অ্যান্ড্রু ইউল কোম্পানির বাগানের শ্রমিক তাহলে আমাদের ঘরে আচ্ছে দিন কেন আসে না?
রবিবার বানারহাট থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে ধূপগুড়ির ঝুমুর ময়নাতলি গ্রামে যখন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সভা করছিলেন ঠিক সেই সময় বানারহাট ব্লকে কেন্দ্রীয় সরকারের অধিগৃহীত অ্যান্ড্রু ইউল কোম্পানির ৪টি চা বাগানের ৬ হাজারের বেশি শ্রমিক তাঁদের বেতনের দাবিতে বিক্ষোভ দেখান। রবিবার পুলিশ এসে স্তোকবাক্য দিয়ে তুলে দেয় সেই বিক্ষোভ।
কিন্তু সোমবার সকাল সাড়ে সাতটা বাজতেই বানারহাট থেকে আট কিলোমিটার দূরে চুনাভাটি, নিউ ডুয়ার্স, কারবালা চা বাগান থেকে দলে দলে মহিলা, পুরুষ চা শ্রমিকরা মিছিল করে হোঁটে আসতে শুরু করেন বানারহাট বিডিও অফিসের দিকে তাঁদের বকেয়া মজুরির দাবিতে। কোনও ইউনিয়নের ঝান্ডা নেই কারো হাতে। এর আগেও দু’বার মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে তাঁদের ফেরত পাঠানো হয়েছে, কিন্তু বেতন আসেনি হাতে। ফের সোমবার সকালে শ্রমিকরা আসছেন শুনে বানারহাটের বিডিও দ্রুত অফিসের মেন গেটে তালা ঝুলিয়ে দেন। দীর্ঘ পথ হেঁটে এসে গেটে তালা দেখে তুমুল ক্ষিপ্ত হয়ে যান ক্লান্ত শ্রমিকরা। উত্তেজিত শ্রমিকরা সবাই চলে যান এলআরপি মোড়ে হাই রোডে। দীর্ঘ আট ঘণ্টা ১৭সি জাতীয় সড়ক অবরোধ করে বসে থাকেন শ্রমিকরা। বেলা বাড়লেও শ্রমিকরা অনমনীয় মনোভাব নিয়ে বসে থাকেন।
খবর পেয়ে বানারহাট থানার আইসি, ধূপগুড়ি মহকুমা পুলিশ আধিকারিক বিশাল পুলিশ বাহিনী নিয়ে এসে শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলতে চান। কিন্তু শ্রমিকরা তাতে কর্ণপাত করেননি। তাঁদের দাবি, জেলাশাসক এসে লিখিত প্রতিশ্রুতি না দিলে তাঁরা উঠবেন না। বেলা চারটে নাগাদ বানারহাটের বিডিও অবরোধস্থলে এসে বলতে বাধ্য হন, গেটে তালা দিয়ে ভুল হয়েছে। তিনি বলেন, নির্বাচনের কাজ চলছে। গুরুত্বপূর্ণ নথি রক্ষার জন্য তিনি তালা দিতে বাধ্য হয়েছেন। তবে তিনি ক্ষমা চান চা শ্রমিকদের কাছে। একই সঙ্গে বিডিও জানিয়েছেন, মঙ্গলবার বেলা ১১ টায় চা মালিকদের সংগঠন ডিবিআইটি’র হলদিবাড়ি বাগানের অফিসে সভা করা হবে সমস্ত শ্রমিক সংগঠন নেতাদের নিয়ে। এরপর অবরোধ তুলে নেন চা শ্রমিকরা। দেখা যায়, হাজার হাজার মহিলা চা শ্রমিক দীর্ঘক্ষণ পানীয় জল, খাবার না পেয়ে অসুস্থ বোধ করছেন। সিপিআই(এম) বানারহাট এরিয়া কমিটি এবং চা বাগান মজদুর ইউনিয়নের নেতৃত্ব দ্রুত পানীয় জল এবং বিস্কুট সহ শুকনো খাবারের প্যাকেট দেন।
চা বাগান মজদুর ইউনিয়নের নেতা তিলক ছেত্রী, অজয় মাহালি বলেন, দেশের প্রধানমন্ত্রী রবিবার সভা করলেন আমাদের মহকুমা এলাকায়। তিনি ভাষণে অনেক প্রতিশ্রুতি দিলেন, আদিবাসী মানুষের প্রতি দরদ দেখালেন। তৃণমুলের সাথে কুস্তি লড়ার হুঙ্কার দিলেন। কিন্তু তাঁর নিজের সরকারের চা বাগানের বেতন বন্ধ, তা নিয়ে কোনও কথা বলেননি। এখনো ২২টি চা বাগান বন্ধ আছে, তা নিয়েও প্রধানমন্ত্রীর কোনো কথা নেই।
চা বাগান শ্রমিক নেতৃত্বের বক্তব্য, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীও কয়েকদিন ডুয়ার্সের চা বাগান ঘেরা মেটেলির বিলাসবহুল ভবনে রাত্রিযাপন করে একের পর এক সভা করে ভোট প্রচার করছেন। কিন্তু চা শ্রমিকদের মজুরি, রেশন, আবাস, কিছু নিয়ে কথা বলছেন না। তিনি যতবার আসেন, ততবারই চা শ্রমিকদের নিয়ে মিথ্যার ফুলঝুরি ছুটিয়ে যান। বানারহাট ব্লকেরই লক্ষ্মীপাড়া চা বাগানে বাস করেন কেন্দ্রের সংখ্যালঘু ও আদিবাসী কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী জন বার্লা। তিনি আসেননি।
এদিন অবরোধ তুলে নিলেও শ্রমিকরা জানিয়ে যান, মজুরি নিয়ে টালবাহানা হলে ভবিষ্যতে অনেক বড় মাপের আন্দোলন হবে।
Comments :0