Md Salim

ধর্মের ব্যবহার করে স্বার্থসিদ্ধির চেষ্টা করছে সন্ত্রাসবাদ, সাম্প্রদায়িক শক্তি

জাতীয় রাজ্য

 অনির্বাণ দে: বহরমপুর

ধর্মকে ব্যবহার করে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধি করতে সন্ত্রাসবাদী এবং সাম্প্রদায়িক শক্তি একাকার হয়ে যাচ্ছে বলে সতর্ক করলেন সিপিআই(এম)’র রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদী হামলার প্রতিবাদে এবং মুর্শিদাবাদে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির আবেদনে বৃহস্পতিবার বহরমপুর শহরে বিরাট মিছিলে অংশ নিয়ে সেলিম বলেছেন, সীমান্তের ওপার থেকে যখন সন্ত্রাসবাদী হামলায় মানুষ প্রাণ হারায়, তখন তার মোকাবিলায় সবার আগে দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ করতে হয়। আমরা বামপন্থীরা সেই জন্যই রাজ্যজুড়ে প্রতিবাদ মিছিল করছি। কিন্তু এরাজ্যের বিরোধী দলনেতা সেজে বসে থাকা শুভেন্দু অধিকারীরা পহেলগামের ঘটনায় তাঁরা যেন আহ্লাদিত, নির্বাচনের জন্য রুটি সেঁকতে নেমেছেন! সন্ত্রাসবাদীদের মতোই ধর্মকে ব্যবহার করে উসকানি দিচ্ছে তার জন্য। সন্ত্রাসবাদী এবং সাম্প্রদায়িক শক্তি একই কাজ করছে। 
এদিন বহরমপুর শহরের টেক্সটাইল মোড় থেকে বামফ্রন্ট ও সহযোগী দলসমূহের ডাকে মিছিল শুরু হয়। লাল ঝান্ডা হাতে গ্রাম শহর থেকে আসা হাজার হাজার মানুষ মিছিলে শামিল হয়ে রবীন্দ্র সদন, লালদিঘি, বহরমপুর মোহনা বাসস্ট্যান্ড, রানিবাগান মোড় হয়ে এগিয়েছেন। মুছে দিয়েছেন বিভেদের কালো মেঘ। ঐক্য ও সম্প্রীতি রক্ষার শপথ নিয়ে পহেলগামের সন্ত্রাসবাদী হামলার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। মুর্শিদাবাদ জেলাকে বারবার সাম্প্রদায়িক রাজনীতির পরীক্ষাগার তৈরি করতে চাইছে আরএসএস-বিজেপি ও তৃণমূল। এই চক্রান্ত রুখে দেওয়ার আওয়াজ উঠেছে স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় দেশপ্রেমিক ‘মহাবিদ্রোহ’-এ শামিল হওয়ার ঐতিহ্যসম্পন্ন বহরমপুর ব্যারাক স্কোয়ারের মাঠকে সাক্ষী রেখে। 
মিছিল শেষে সংক্ষিপ্ত ভাষণে মহম্মদ সেলিম বলেছেন, সন্ত্রাসবাদকে সাম্প্রদায়িকতা দিয়ে মোকাবিলা করা যায় না, একদল ধর্ম দেখে লাশ বানালে অন্যরা লাশের ধর্ম দেখিয়ে সন্ত্রাস ছড়াতে উসকানি দিচ্ছে। সন্ত্রাসবাদের মোকাবিলার জন্য জাত, ধর্ম, বর্ণ, ভাষা নির্বিশেষে মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করতে হয়। কাশ্মীরে যে হত্যাকাণ্ড হয়েছে তাকে ধিক্কার জানানোর সঙ্গে সঙ্গে সাম্প্রদায়িক উসকানির বিরুদ্ধেও লড়তে হবে। আমরা বামপন্থীরা, ধর্মনিরপেক্ষরা সেই কাজ করছি বলে আমাদের ওপরে ওদের রাগ ঘৃণা বর্ষণ চলছে। ৩৭০ ধারা তুলে, কাশ্মীরকে ভেঙে দু’টুকরো করে সেখানে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল বানিয়ে পুলিশের নিয়ন্ত্রণ হাতে নিয়ে যারা বসে আছে সেই মোদী সরকারের দিকে প্রশ্ন না তুলে নেহরু, সেকুলার, কমিউনিস্টদের গালি দিচ্ছে। ধর্মীয় উসকানি দিয়ে মানুষের মনের মধ্যে বিষ ঢুকিয়ে দিয়ে মানবতাকে হত্যার চেষ্টা করছে। আমরা রাজ্যজুড়ে প্রতিবাদ করছি, শুক্রবার কলকাতায় প্রতিবাদ মিছিল হবে কেন্দ্রীয়ভাবে।
এদিনের মিছিল শেষে মুর্শিদাবাদের সামসেরগঞ্জ, সুতি, জঙ্গিপুরের সাম্প্রদায়িক হিংসার ঘটনা নিয়ে মহম্মদ বলেছেন, কাশ্মীরে পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য পুলিশ সেনা খুঁজে পাওয়া যায়নি। আর মুর্শিদাবাদে সাম্প্রদায়িক হিংসার সময় উত্তর প্রদেশের মডেলে পুলিশকে চার পাঁচ ঘণ্টা নিষ্ক্রিয় করে রাখা হয়েছিল। যারা হামলাকারী, দাঙ্গাবাজ, লুটেরা তাঁদেরকে হাঙ্গামা করতে সুযোগ দেওয়া হয়েছে। তারা আমাদের সমর্থক হরগোবিন্দ দাস, চন্দন দাসকে খুন করেছে। পুলিশ খুন করেছে ইজাজ সেখকে। গুলিবিদ্ধ অবস্থাতেও তার যথাযথ চিকিৎসা হয়নি। এই জন্য আমরা মুর্শিদাবাদের ঘটনার বিচারবিভাগীয় তদন্তের দাবি করেছি, যাতে কারা হিংসা করল, কেন পুলিশ প্রশাসন নিষ্ক্রিয় ছিল তা প্রকাশ্যে আসে, দোষীরা শাস্তি পায়। 
এদিন মিছিলে ছিলেন সিপিআই(এম) পলিট ব্যুরো সদস্য রামচন্দ্র ডোম, পার্টির মুর্শিদাবাদ জেলা কমিটির সম্পাদক জামির মোল্লা, পার্টিনেতা সোমনাথ ভট্টাচার্য, সোমনাথ সিংহরায়, সেখ হাসিনা, ধ্রুবজ্যোতি সাহা। ছিলেন আরএসপি’র নওফেল মহম্মদ সফিউল্লাহ, ফরওয়ার্ড ব্লকের বিভাস চক্রবর্তী, সিপিআই নেতা হারাধন দাস, সিপিআই(এমএল) লিবারেশনের নেতা রাজীব রায় প্রমুখও। 
এদিন সিপিআই(এম)’র মুর্শিদাবাদ জেলা কমিটির সভাতেও অংশ নেন সেলিম এবং রামচন্দ্র ডোম। পরে সাংবাদিক বৈঠকে সেলিম বলেছেন, মোদী সরকার ক্ষমতায় বসার আগে বলেছিল, পাক অধিকৃত কাশ্মীরে ঘুষকে মারেঙ্গে। বাস্তবে কী করেছেন? পাকিস্তানে গিয়েছিলেন কি বিরিয়ানি খেতে? এখন পহেলগামের ঘটনার পরে হইহল্লা করে সরকার কিছু প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে। কিন্তু আদতে সন্ত্রাসবাদ বন্ধে মোদী সরকার কী করেছে? নোটবন্দির সময়ে বলেছিলেন যে, সন্ত্রাসবাদীদের আর্থিক যোগ বন্ধ হয়ে গেল। সমস্যার সমাধান করে কাশ্মীরকে শান্ত বলে দাবি করেছিলেন মোদী এবং অমিত শাহ। সেগুলি কোথায় গেল? মোদী সরকার আসল প্রশ্ন ধামাচাপা না দিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়াক। আমরা বরাবর বলে এসেছি, কাশ্মীরের সমাধান ইনসানিয়াৎ, জামুরিয়াৎ এবং কাশ্মীরিয়াৎ এর ওপরে দাঁড়িয়ে করতে হবে। কাশ্মীর সমস্যার সমাধান আছে আরও স্বয়াত্ত্বশাসনের মধ্যে। কিন্তু মোদী শাহ উলটো পথে হেঁটেছেন।
পহেলগামের ঘটনায় নিরাপত্তা ব্যবস্থায় গাফিলতির অভিযোগ তুলে সেলিম বলেছেন, এর আগে পুলওয়ামা বালাকোটের ঘটনাতেও আমরা ইনটেলিজেন্স ব্যর্থতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলাম। সরকার কোনও উত্তর দেয়নি। পরবর্তীকালে রাজ্যপাল নিজেই ফাঁস করে দিয়েছেন সরকারের ব্যর্থতার কথা। এবারও আমরা জানতে চাই, সরকারের ইনটেলিজেন্স ব্যর্থ কেন? নাকি আগাম খবর ছিল বলে প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতি সফর বাতিল করলেও পর্যটকদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হলো না?
 

Comments :0

Login to leave a comment