গত ছ’মাসেরও বেশি সময় ধরে লাগাতার প্রচারের তরঙ্গ শীর্ষে বুধবার গোটা দেশ স্তব্ধ করে দিতে চলেছেন শ্রমজীবী মানুষ। কলে-কারখানায় শ্রমিকরা যেমন উৎপাদন বন্ধ করে রাস্তার লড়াইয়ে থাকবেন তেমনি কৃষকরা-খেতমজুররাও কাজ বন্ধ রেখে লড়াইয়ের ময়দান থেকে হুঁশিয়ারি দেবেন কেন্দ্রীয় সরকারকে। শ্রেণি সংগ্রামের এই বৃহত্তর আয়োজনের শরিক হয়েছেন সরকারি বেসরকারি কর্মচারীরাও। বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পে যারা কাজ করেন, মিড ডে মিলের কর্মীরা, আংশিক সময়ের বা ঠিকা কর্মীরা থাকছেন এই লড়াইয়ে। থাকছেন পরিবহণ শ্রমিক, গিগ কর্মীরা, অটো-টোটো-রিকশা-ভ্যান কর্মীরাও। অর্থাৎ প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মাথার ঘাম পায়ে ফেলে অকাতরে যাঁরা শ্রম দিয়ে যান কোনোরকমে সপরিবারে বেঁচে থাকার তাগিদে তাঁরা সকলে হাতে হাত মিলিয়ে, কাঁধে কাঁধ লাগিয়ে ঝান্ডা উঁচিয়ে মোদী সরকারকে সতর্ক করে দেবে, অনেক হয়েছে আর নয়। এবার যদি কর্পোরেট তোষণ ছেড়ে দেশের আমজনতার দিকে সরকারি নীতির অভিমুখ ঘোরানো না হয় তাহলে কোনও ধমক-চমক-মিথ্যাচার কাজে আসবে না। ধর্মের ও জাতপাতের বিভাজনের ছক কষেও পায়ের নিচের মাটি সামলানো যাবে না। সমাজ-সভ্যতার রসদ বানায় যারা তারা সব কিছু উলটে পালটে দিতে পারে সরকারকে সোজা পথে আনার জন্য। বুধবার মোদী সরকারকে সেই আগাম সতর্ক বার্তাই দেবে দেশের কোটি কোটি শ্রমজীবী মানুষ।
১১ বছরের শাসনে ধর্মীয় উন্মাদনার আড়ালে মোদী সরকার প্রমাণ করে দিয়েছে তারা আসলে কাদের সর্বনাশের বিনিময়ে কাদের স্বার্থ পূরণ করতে চায়। জিডিপি বৃদ্ধি তথা উন্নয়নের নাম শরে শ্রমের মূল্য তথা শ্রম খাতে ব্যয় কমিয়ে মালিকের মুনাফা বাড়াতে চায়। তার জন্য চালু ২৯টি শ্রম আইন বাতিল করে চারটি শ্রম কোড চালু করে শ্রমিক-কর্মচারীর অর্জিত যাবতীয় অধিকার কেড়ে নিয়েছে। কাজের সময় বাড়িয়ে ১২-১৪ ঘণ্টা করেছে। স্থায়ী চাকরি তুলে দিয়ে অস্থায়ী-ঠিকা ব্যবস্থা চালু করেছে। মজুরি বৃদ্ধির দর কষাকষির ব্যবস্থাও উঠে গেছে। এসবের পরিণতিতে শ্রমজীবী মানুষের শ্রমদান, কাজের সময় বেড়েছে। কিন্তু কমেছে মজুরি-আয়। বিপরীতে সরকারি হস্তক্ষেপের অভাবে প্রতিটি জিনিসের দাম বাড়ছে যথেচ্ছভাবে।
একদিকে আয় বাড়ছে না, নতুন কাজ তৈরি হচ্ছে না, পুরানো কাজ কমে যাচ্ছে। অন্যদিকে জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। মানুষের অবস্থা ক্রমশ শোচনীয়। সরকারি, আধা-সরকারি লক্ষ লক্ষ পদ শূন্য, নিয়োগ হচ্ছে না। রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা তুলে দেওয়া হচ্ছে বেসরকারি হাতে। প্রাকৃতিক সম্পদ লুটে খাচ্ছে কর্পোরেট। নানাভাবে কর্পোরেট ও বিত্তবানদের ছাড় দেওয়া হচ্ছে। শত শত কোটি টাকা ঋণ মকুব হয়ে গেছে। একইভাবে পাচ্ছে বিপুল কর ছাড়। কৃষক ফসলের দাম পাচ্ছেন না। ব্রিটিশ আমল থেকে এখন খারাপ অবস্থা। এমন অসহনীয় অবস্থার অবসান চেয়ে দেশের সব অংশের শ্রমজীবী মানুষ জোটবদ্ধ হয়েছেন। ধর্মঘট করবেন তাঁরাই।
Editorial
রাত পোহালেই ধর্মঘট লড়ে আদায়ের দিন

×
Comments :0