‘‘ বারো নদী তেরো খাল
তবেই পাবি কুইলাপাল।’’
বান্দোয়ান ব্লকের ৮টি পঞ্চায়েতের মধ্যেই একটি কুইলাপাল। উপরের প্রবাদ বাক্যটির মধ্য দিয়ে দুর্গম ও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন বান্দোয়ান ব্লকের চিত্র স্পষ্টভাবে ধরা পড়ে। শুধু কুইলাপাল নয়, ব্লক এলাকার পুরোটাই টটকো, যমুনা, সাতগুড়ুম নদী সহ অসংখ্য পাহাড়িয়া ঝরনা ও পাহাড় জঙ্গলে পরিবেষ্টিত। তাই বান্দোয়ান আসতে হলে অনেক নদী, নালা, খানখন্দ পার হয়ে আসতে হতো। এখানে আসার ছিল না কোনও রাস্তা, ব্রিজ, কালভার্ট। তাই বর্ষাকালে এখানে আসার কথা কেউ ভাবতেই পারত না। বিগত কংগ্রেস সরকারের শাসনকালে এমনই ছিল যোগাযোগের বেহাল দশা।
বান্দোয়ান ব্লকের শতকরা পঞ্চাশ ভাগের বেশি মানুষ আদিবাসী। দারিদ্র, অর্ধাহার, অনাহার ও চিকিৎসার অভাব ছিল এখানকার মানুষের নিত্যদিনের সঙ্গী। তাই কংগ্রেস আমলে অনেকেই বান্দোয়ানকে উপহাস করে আন্দামান বলতো। এলাকায় ছিল না কাজের কোনও সুযোগ। মহাজনী শোষণ, জুলুম ও অত্যাচার প্রবলভাবে বিদ্যমান ছিল। বনের ফলমূল, লতাপাতা, কন্দ ও বিভিন্ন প্রকার ঘাসের শস্য দানা সংগ্রহ করে আধপেটা খেয়ে থাকতে হতো। সেচের অভাবে এখানকার রুক্ষ, শুষ্ক মাটিতে চাষও ভালো হতো না। তাই এলাকায় একটি প্রবাদ প্রচলিত ছিল—‘এখানে জ্যোৎস্না রাতেও ধান মরে।’ তাই বছরের বেশিরভাগ সময়ে বিপুল সংখ্যক মানুষ ‘নামাল’ খাটতে যেত।
বেহাল গ্রাম
কৃষকের গড় আয়:
মমতা ব্যানার্জির দাবি- মাসে ২৫,০০০টাকা।
নাবার্ড জানাচ্ছে — মাসে আয় ৭৭৫৬টাকা।
কেরালায় আয় ১৬,৯২৭ টাকা।
দেশের আঠাশটি রাজ্যের মধ্যে এই ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গ
২২নম্বরে।
-------------------------------------------------
কৃষি ঋণ:
রাজ্যে একর পিছু কৃষি ঋণ মিলছে ২২,০০০টাকা। এই
কৃষিঋণের মাপকাঠিতে পশ্চিমবঙ্গ ১৫ নম্বরে।
এই ক্ষেত্রে কেরালা দেশে শীর্ষে। ওই রাজ্যে হেক্টর পিছু
কৃষিঋণের পরিমাণ ১,৪৭,২০০ টাকা।
----------------------------------------------
রেগায় বকেয়া টাকা:
বকেয়া মজুরি ৩৭০০কোটি ৮লক্ষ টাকা।
কেন্দ্রের কাছে বকেয়া ৬৭৩৪ কোটি ৪৩লক্ষ টাকা।
রাজ্য আটকে রেখেছে ১০১১কোটি ৪৪লক্ষ টাকা।
-----------------------------------------
জবকার্ড বেড়েছে,
কাজ কমেছে
২০২২:
জব কার্ড আছে ১,৫২,৭৬,৫৬৯টি পরিবারের
কাজ পেয়েছে ১৬,১৩,৫২৫টি পরিবার।
২০২১:
১,৫১,৮১,৯৪৪টি জব কার্ড।
কাজ পেয়েছিল ৭৫,৯৭,৪৯০টি পরিবার।
------------------------------------------------
রেগায় নারীদের প্রতি বৈষম্য
২০২১-২২
গড় কাজ-৪৭.৯৪দিন
মহিলাদের গড় — ৩৩.২৮দিন
২০১৮-১৯
গড় কাজ-৭৭.০৩দিন
মহিলাদের গড় কাজ-৪৬.৮৩দিন
২০১৪-১৫
গড় কাজ-৩৩.১৩দিন
মহিলাদের গড় কাজ-২৪.২১দিন
একশো দিনের কাজের প্রকল্প
------------------------------
একমাত্র বান্দোয়ান ছাড়া অন্য কোনও অঞ্চলে একটিও হাইস্কুল ছিল না। প্রাথমিক বিদ্যালয়ও ছিল তুলনামূলক কম। বিদ্যালয় থাকলেও স্থায়ী বিদ্যালয় গৃহ ছিল না। ফলে স্বাধীনতার পরবর্তী কংগ্রেস আমলে উন্নয়নের ছিটেফোঁটার স্বাদ পায়নি বান্দোয়ান। তৎকালীন সময়ে সরকারি কর্মচারীদের শাস্তিমূলক বদলি হিসাবে বান্দোয়ানে পাঠানো হতো। তাই সামগ্রিক বিচারে পিছিয়ে পড়া ব্লকের তকমা পেয়েছিল বান্দোয়ান।
১৯৭৭-এ রাজ্যে বামফ্রন্ট সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৭৮-এ প্রথম পঞ্চায়েত নির্বাচন হয়। বান্দোয়ানের ৮টি পঞ্চায়েতেই বোর্ড গঠন করে সিপিআই(এম)। শুরু হয় নতুন উদ্যমে গ্রাম গড়ার কাজ। অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছিল খাদ্যভাব দূরীকরণে। কাজের বিনিময়ে খাদ্য(এফএফডব্লিউ) প্রকল্পের মাধ্যমে পুকুর খনন, গ্রামীণ রাস্তা নির্মাণ, কাঁচা জোড়বাঁধ নির্মাণ ইত্যাদি কাজের মাধ্যমে প্রচুর শ্রমদিবস সৃষ্টি করা হয়। ধারাবাহিকভাবে ২০০৮ পর্যন্ত সবকটি পঞ্চায়েতে মানুষের জন্য কাজের ধারা ধরে রাখা গেছিল। এই সময়কালের মধ্যে বান্দোয়ান ব্লক এলাকার সার্বিক উন্নয়ন ক্রমশ প্রসারিত হতে থাকে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিকাঠামো উন্নয়ন, গ্রামীণ সম্পদ সৃষ্টি করা গেছিল। কৃষিতেও বিপুল পরিবর্তন এসেছিল। প্রতিটি অঞ্চলে একাধিক হাই স্কুল, প্রতিটি গ্রামে প্রাথমিক বিদ্যালয়, শিশু শিক্ষা কেন্দ্র, মাধ্যমিক শিক্ষা কেন্দ্র এবং অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র গড়ে ওঠে। এই সময়ের মধ্যে বান্দোয়ানে মহাবিদ্যালয় এবং পলিটেকনিক কলেজ গড়ে ওঠে। আদিবাসী এবং তফসিলি জাতির ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য এলাকা ভিত্তিক ছাত্রাবাস গড়ে ওঠে। ফলে এলাকার শিক্ষার হার দ্রুত বৃদ্ধি পেতে থাকে। নিয়মিত এসএসসি পরীক্ষার ফলে এলাকার অনেক ছেলেমেয়ে রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় কাজ করছে। শুধু শিক্ষা নয়, স্বাস্থ্য, কৃষি, পরিকাঠামো— সবক্ষেত্রেই যুগান্তকারী পরিবর্তন এসেছে।
১৯৯৮-র পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় বামবিরোধী শক্তির হাত ধরে তথাকথিত মাওবাদীদের যাতায়াত শুরু হয়। গ্রামের মানুষের আস্থা অর্জন করার জন্য গোপনে তারা জঙ্গল সংলগ্ন গ্রামগুলিতে সভা, পাড়া বৈঠক করতে থাকে। এই কৌশলে কাজ ফলপ্রসূ না হওয়ায় তারা সন্ত্রাস সৃষ্টির পথ বেছে নেয়। কারণ— ১৯৯৮-র পঞ্চায়েত নির্বাচনেও সিপিআই(এম)’র প্রতি প্রতিটি পঞ্চায়েতের বেশিরভাগ মানুষ আস্থা রেখেছিলেন। উপায়ন্ত না দেখে মাওবাদীরা সন্ত্রাসের বাতাবরণ তৈরি করার চেষ্টা করে। ২০০৫-এ রাতের অন্ধকারে বাড়িতে ঢুকে সিপিআই(এম)’র তৎকালীন বান্দোয়ান জোনাল কমিটির সদস্য কমরেড মহেন্দ্র মাহাতকে তারা গুলি করে হত্যা করে। ইতিপূর্বে বান্দোয়ান থানার ওসি-কেও ল্যান্ডমাইন বিষ্ফোরণে ও গুলি করে খুন করে। স্বাভাবিকভাবেই এলাকার মানুষ সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। সেই দুর্দিনে মানুষের পাশে থেকে মানুষকে সাহস ও ভরসা জোগাতে পার্টি নিরন্তরভাবে কাজ করে এসেছে। ২০০৫-র ৩১ ডিসেম্বর পুরুলিয়ার প্রাক্তন সভাধিপতি, পার্টির জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য কমরেড রবীন্দ্রনাথ কর এবং তাঁর স্ত্রী আনন্দময়ী করকে পুড়িয়ে মারে মাওবাদীরা। এইভাবে একের পর এক বান্দোয়ান এলাকার ১৩জন কমরেডকে খুন করে তারা। সেই ঘোর দুর্দিনে গ্রামের মানুষকে সংগঠিত করে মাওবাদীদের জনবিচ্ছিন্ন করার কঠিন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে বান্দোয়ানের পার্টি। গ্রামবাসীদের সঙ্গে নিয়েই গড়ে তোলা হয় প্রতিরোধ ব্যবস্থা। সেই কাজে ক্রমশ সাফল্য আসতে থাকে। এলাকার উন্নয়ন, শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষা, সন্ত্রসামুক্ত বান্দোয়ান গড়ে তোলা— এই লক্ষ্যে গ্রামে গ্রামে গড়ে ওঠে মাওবাদী বিরোধী প্রতিরোধ কমিটি।
২০১১-তে রাজ্যে সরকারে পালাবদল ঘটলেও বান্দোয়ান স্বমহিমায় উজ্বল ছিল। এখানকার সংগ্রামী মানুষ সেই নির্বাচনেও সিপিআই(এম) মনোনীত প্রার্থীকেই বিধানসভায় পাঠিয়েছিল। ২০১৮-র পঞ্চায়েত নির্বাচনেও বান্দোয়ানের ৮টি পঞ্চায়েতের ৪টিতে সিপিআই(এম) জয়ী হয়। সেগুলি পার্টির দ্বারাই পরিচালিত হয়।
রাজ্যে পালাবদলের সঙ্গেসঙ্গেই বান্দোয়ানে উন্নয়ন ক্রমশ স্তব্ধ হয়ে যায়। তৃণমূল পরিচালিত সরকারের আমলে নীল সাদা রং করা ছাড়া অন্য কিছু চোখে পড়ে না। বান্দোয়ানের বেশিরভাগ স্কুলে শিক্ষকের অভাব— আদিবাসী ছাত্রাবাসগুলি বেশিরভাগ বন্ধ। দীর্ঘ এক বছরের বেশি সময় ধরে একশো দিনের কাজ বন্ধ। কাজ করেও শ্রমিকরা মজুরি পাচ্ছে না। কাজের সন্ধানে ব্লকের ছেলেমেয়েরা ভিন রাজ্যে পাড়ি দিচ্ছে। অপরদিকে তৃণমূল পরিচালিত পঞ্চায়েতগুলিতে ব্যাপক দুর্নীতি। একশো দিনের কাজে, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা— গ্রামের উন্নয়নের প্রতিটি প্রকল্পে চুরি চলেছে। সব দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত তৃণমূল। মুখ্যমন্ত্রী হয়ে মমতা ব্যানার্জি জঙ্গলমহলের উন্নয়নের জন্য অনেক ঘোষণা করেছিলেন। তার কিছুই দেখা যাচ্ছে না। পুরুলিয়া জেলায় শিল্পের যে পরিবেশ বামফ্রন্ট সরকার তৈরি করেছিল, তাতে বান্দোয়ানের ছেলেমেয়েদেরও লাভ হতো। তৃণমূলের শাসনে জেলায় নতুন কোনও শিল্প হয়নি। বেকার ছেলেমেয়েরা হতাশায়। চাষেরও কোনও উন্নতি হয়নি। কৃষক ফসলের দাম পান না। সার, বীজসহ চাষের সব উপকরণের দাম বেড়েছে। অন্যদিকে খেতমজুরের কাজও নেই। এক প্রবল হাহাকার চেপে বসেছে গ্রামগুলিতে। এই অবস্থা থেকে মানুষ পরিত্রাণ চাইছেন। তাই ‘গ্রাম জাগাও চোর তাড়াও-দুর্নীতিমুক্ত পঞ্চায়েত গড়ো’ — এই স্লোগানকে সামনে রেখে বান্দোয়ানের গ্রামে গ্রামে প্রচার চলছে।
সাম্প্রতিক অতীতের মাওবাদীদের খুন, সন্ত্রাস প্রতিরোধ করেই মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে বান্দোয়ানে ‘লাল ঝান্ডার পার্টি।’ আগামীদিনে সেই ঝান্ডাকে বান্দোয়ানের গ্রামে-গ্রামান্তরের ছড়িয়ে দেওয়ার অঙ্গীকারবদ্ধ সিপিআই(এম)। মানুষকে নিয়েই আবার উন্নয়নের পথে এগিয়ে চলা বান্দোয়ান গড়ে তোলার কাজ চলছে।
গ্রামেরচিঠি
অপরাধ? পঞ্চায়েত বামফ্রন্টের
পঞ্চায়েতে ক্ষমতায় নেই তৃণমূল। বেহাল রাস্তা মেরামত হচ্ছে না। রাধাকান্তপুর অঞ্চলে বেহাল রাস্তা! অধিকাংশ রাস্তা বেহাল হওয়ায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে আমাদের। পুকুরের মাটি ধসেছে। রাস্তা ভেঙেছে। আবার কোথাও রাস্তা খুঁড়ে নিচ দিয়ে পানীয় জল সরবরাহ পাইপ লাইন বসানো হয়েছে। কিন্তু কাজ মিটলেও আর রাস্তা মেরামত করা হয়নি। মোটর ভ্যান, সাইকেল চলাচলেরও অযোগ্য হয়ে পড়েছে ইটের রাস্তাগুলি। স্থানীয় তৃণমূল নেতা-কর্মীরা বলছে, পঞ্চায়েতে ক্ষমতায় নেই। বেহাল রাস্তা মেরামত হবে না। রাধাকান্তপুর পঞ্চায়েত পরিচালনায় রয়েছে সিপিআই(এম)। চলাচলের অযোগ্য হলেও এলাকার বেহাল রাস্তা মেরামতের কোনও উদ্যোগ নেই তৃণমূল পরিচালিত দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা পরিষদ, সুন্দরবন উন্নয়ন দপ্তর, মথুরাপুর ২ পঞ্চায়েত সমিতির। ২০১৩ সাল থেকে রাধাকান্তপুর পঞ্চায়েত সিপিআই(এম) পরিচালনা করছে। এই পঞ্চায়েত দখলের চক্রান্ত করেও তৃণমূল ব্যর্থ হয়েছে। রাজ্যে বামফ্রন্ট সরকারের সময়ে এই পঞ্চায়েতে সিপিআই(এম) ক্ষমতায় না থাকলেও আমরা দেখেছি তৎকালীন সুন্দরবন উন্নয়ন মন্ত্রী কান্তি গাঙ্গুলির উদ্যোগে সুন্দরবন উন্নয়ন দপ্তর, সিপিআই(এম) পরিচালিত মথুরাপুর ২ পঞ্চায়েত সমিতি, দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা পরিষদ রাধাকান্তপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় নতুন ইটের রাস্তা তৈরি করেছে। সেই সময়ে সিপিআই(এম) নেতা-কর্মীদের মুখে কোনোদিন শুনিনি যে, ‘গ্রাম পঞ্চায়েতে ক্ষমতায় নেই তাই রাস্তা তৈরি করা হবে না’। ২০১১ সালে রাজ্যে সরকার পরিবর্তন হয়েছে। তৃণমূল ক্ষমতায়। গত ১১ বছরেও রাধাকান্তপুর অঞ্চলে কোনও নতুন রাস্তা হয়নি। এমনকি আমাদের অঞ্চলের বেহাল রাস্তায় পথ চলাচলের অযোগ্য হলেও রাস্তা মেরামত করার কোনও উদ্যোগ নেয়নি।
জয়দেব পাইক। রায়দিঘি
প্রসব হয়ে যাচ্ছে পথেই
সীমান্ত এলাকায় বাস আমাদের। সমস্যার শেষ নেই। পরিস্রুত পানীয় জল নেই, ভাঙা রাস্তাঘাট, সীমান্ত সংলগ্ন এলাকায় পাঁচটার পর থেকে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ এবং যাতায়াতের ওপর নজরদারি বিএসএফের, গ্রামীণ স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে টিকা, ভ্যাকসিন ছাড়া কোন চিকিৎসা ব্যবস্থা নেই। নামেই সুস্বাস্থ্য কেন্দ্র হয়েছে, স্বাস্থ্য পরিকাঠামো বেহাল। জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালেও প্রসূতি বিভাগের অবস্থা খুব খারাপ। ধার করে হলেও প্রসূতি মায়েদের প্রসবের জন্য নার্সিংহোমে যেতে হচ্ছে। বেহাল রাস্তাঘাটের কারণে অনেক সময় অ্যাম্বুলেন্সেই বাচ্চা প্রসব হয়ে যাচ্ছে। গ্রামের প্রাথমিক, মাধ্যমিক স্কুলগুলি থেকে শিক্ষকরা শহরের স্কুলে চলে গেছেন। করোনার পর যাও বা স্কুল কলেজ চালু হয়েছিল এখন শিক্ষকের অভাবে স্কুলগুলি ধুঁকছে। ১০০ দিনের কাজ আবাস যোজনা সহ পঞ্চায়েত থেকে যে সমস্ত সুযোগ-সুবিধা গরিব মানুষের পাওয়ার কথা সবেতেই চরম দলবাজি। এক সময় শহরের বাবুদের জমি দখল করে ‘লাঙল যার, জমি তার’ স্লোগান তুলে এই এলাকায় চাষাবাদ শুরু করেছিল আমাদের পূর্ব পুরুষরা। আজ জমি মাফিয়ারা ফের সেই জমির দিকে হাত বাড়াচ্ছে। প্রায়শই জমি নিয়ে ঝামেলা লেগে থাকছে। বে-হাত হয়ে যাচ্ছে কাগজ না থাকা কৃষকের জমি।
মফিদার রহমান। বাসুয়া পাড়া, জলপাইগুড়ি
ভাতা বন্ধ, বেতন বাড়ছে
আমি ঝাড়গ্রাম রাজ কলেজে অঙ্ক অনার্সে পড়াশোনা করি। ছাত্র হিসেবে আমি দেখতে পাচ্ছি কিভাবে কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকার উভয় মিলেই আমাদের ভবিষ্যতকে অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিচ্ছে দিনের পর দিন। বিশেষত আমরা অর্থাৎ দিনমজুরের বাড়ির ছেলে-মেয়েরা, আদিবাসী বাড়ির ছেলেমেয়েরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তি পোহাচ্ছি। একদিকে কেন্দ্র সরকারের নতুন জাতীয় শিক্ষানীতি আরেকদিকে রাজ্য সরকারের শিক্ষাক্ষেত্রে ঘটিয়ে চলা ধারাবাহিক দুর্নীতি মিলিয়ে লাটে তুলে দিয়েছে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাকে। আজ বহুদিন ধরে আদিবাসীদের ভাতা বন্ধ, পাশাপাশি প্রত্যেক বছর বেড়ে চলছে স্কুল-কলেজের বেতন। তার ফলে সবচেয়ে বেশি করে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে গ্রাম বাংলার ছাত্রছাত্রীরা। লকডাউন থেকে শুরু করে এখনও পর্যন্ত হাজারেরও অধিক ছাত্রছাত্রীরা ড্রপ আউট করে কাজে চলে যেতে বাধ্য হয়েছে। এঁরা সবাই গ্রামের দিনআনি-দিনখাই বাড়ির ছেলেমেয়ে। সরকারের চরম অসহযোগিতা, বেড়ে চলা খরচের সঙ্গে পাল্লা দিতে না পেরেই আজ তাঁরা লেখাপড়া ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছে। আমার এই সমস্ত সহপাঠীদের ফিরিয়ে আনার জন্যই আমি এই পদযাত্রায় অংশগ্রহণ করছি। এসএসসি-টেট সহ সমস্ত শিক্ষাদপ্তরে স্বচ্ছ নিয়োগের দাবি কার্যকর করতে আমরা রাস্তায় নামব আগামী ৯ তারিখ। আমার বিশ্বাস আমরা সফল হবই।
যতীন দেশোয়ালী। শিলদা, ঝাড়গ্রাম
Comments :0