SMART METER

রুখতে হবে বিদ্যুতে বেসরকারি প্রিপেড মিটার

জাতীয় রাজ্য বিশেষ বিভাগ

সুদীপ দত্ত
 

গোটা দেশজুড়ে জনগণের টাকায় এক বছরের গগণভেদী প্রচারের পর সদ্য শেষ হওয়া ভারত প্রেসিডেন্সির জি-২০ বৈঠক এক ঘোষণাপত্র প্রকাশ করেছে। অপ্রচলিত শক্তির ( রিনিউয়েবল এনার্জি ) পরিমাণ দ্রুত বাড়ানোর ওপরে এই ঘোষণাপত্রে জোর দেওয়া হলেও ফসিল জ্বালানির ব্যবহার কমানোর ব্যাপারে খানিক মৌন থেকে গেছে বিশ্বের নানা রাষ্ট্রের সরকারগুলো। তবে নিশ্চিত ভাবেই গোটা বিশ্বের রাজনীতিতে এক অস্থিরতা, উথাল-পাতাল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে যার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে শক্তির রূপান্তর, ফসিল থেকে পুনর্নবীকরণযোগ্য।
পুঁজিবাদের জন্মলগ্ন থেকেই সমাজের আর্থসামাজিক-রাজনৈতিক সঙ্কট ও সম্ভাবনার সাথে প্রযুক্তি ও শক্তিক্ষেত্রের পরিবর্তন অঙ্গাঙ্গী ভাবে জুড়ে থেকেছে। ১৭৬৯ সালে জেমস ওয়াট আবিষ্কার করলেন কয়লা চালিত স্টিম ইঞ্জিন, সাথে সাথে ঝড়ের গতিতে এগলো কয়লা উত্তোলন, এসে গেলো শিল্পবিপ্লব, কয়লা স্টিমের যুগলবন্দিতে গড়ে উঠল লোহা, স্টিল, টেক্সটাইল শিল্প, হুড়মুড়িয়ে এসে গেল পুঁজিবাদ ।
বিংশ শতাব্দীর তৃতীয় দশকে পুঁজিবাদ পড়ল তার জীবনকালের সর্বাপেক্ষা গভীর সঙ্কটে, আর সাথে সাথে এলো এক নতুন শক্তির সম্ভাবনা, পারমাণবিক শক্তি। এরপর আসে ১৯৬০ এর দশকের অর্থনৈতিক সঙ্কট। তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসের উত্থানের মাধ্যমে শক্তিক্ষেত্রের আবার রূপান্তর, ওপেক দেশসমূহের জয়যাত্রা এবং পেট্রোডলারের আবির্ভাবে ঘটে সঙ্কটের আপাত নিরসন, পটভূমি তৈরি হয় বিশ্বায়ন বা গ্লোবালাইজেশনের। শেষে ২০০৭-০৮ সালের সঙ্কট। ২০০৯ সালে ইউনাইটেড নেশন প্রকাশ করে নিউ গ্রিন ডিল। বলা হয় যেতে হবে ফসিল জ্বালানি থেকে পুনর্নবীকরণযোগ্য জ্বালানিতে। শক্তিক্ষেত্রে আরও একবার বদলাতে শুরু করল। এর ভিত্তিতেই বুঝতে হবে ভারতের বিদ্যুৎ ক্ষেত্রের নতুন প্রবণতা ও জনগণের ওপরে হামলার নতুন দিকগুলো। 
বিদ্যুৎ পরিষেবার তিন ক্ষেত্র– উৎপাদন, ট্রান্সমিশন ও বণ্টন বা বিতরণ: আজকের দিনে দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদনের ইন্সটলড ক্যাপাসিটি ৪,১৮,০০০ মেগা ওয়াট, যার ৫০ শতাংশেরও বেশি চলে গেছে আদানি, টাটার মতো প্রাইভেট কর্পোরেট সংস্থার হাতে। কেন্দ্রীয় সরকার এরই মধ্যে চাপিয়েছে একের পর এক জনবিরোধী বোঝা– কয়লার ওপর ১৪% রয়্যালটি ট্যাক্স, জিএসটি, জিএসটি কমপেনসেশন সেস, বিশাল পরিমাণ রেলওয়ের ফ্রেইট চার্জ। জোর করে কয়লা বিদেশ থেকে আমদানি করার ফরমান জারি করেছে বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী সংস্থার ওপর। লাভ হয়েছে আদানির, বোঝা বেড়েছে বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার ওপর।
অপ্রচলিত শক্তি হুহু করে বাড়ছে আমাদের দেশে। ভয়াবহ ব্যাপার হলো এই শক্তির প্রায় ১০০% প্রাইভেট সংস্থার হাতেই রয়েছে। সরকারি সংস্থা নতুন করে যে রিনিউয়েবল বিদ্যুৎ ইনস্টল করবে তাও ন্যাশনাল মানিটাইজেশন পাইপলাইনের (এনএমপি) মাধ্যমে বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়ার হুকুম দেওয়া হয়েছে । বিদ্যুৎ ট্রান্সমিশনের যে হাই টেনশন লাইন, তাও এনএমপির মাধ্যমে প্রাইভেট কোম্পানির হাতে তুলে দিচ্ছে মোদী সরকার, সোজা কথায় আদানিদের হাতে। 
জি-২০ দিল্লি ডিক্লারেশনে গোটা এশিয়া আর মধ্য প্রাচ্য এক গ্রিড দিয়ে জুড়ে দেওয়ার কথা হয়েছে যার পোশাকি নাম ওয়ান সান– ওয়ান ওয়ার্ল্ড– ওয়ান গ্রিড। প্রাইভেট কোম্পানির রিনিউয়েবল বিদ্যুৎ এই গ্রিডের মাধ্যমে দখল করবে গ্লোবাল সাউথের বিশাল বাজার। আর এতসব কিছুর পর, কেন্দ্রের সরকারের নজর পড়েছে সরকারি বিদ্যুৎ বণ্টন ক্ষেত্রের ওপর। 
মোদী সরকারের বিদ্যুৎ সংশোধনী বিল– বিদ্যুৎ শিল্পের ওপর আক্রমণের এক ঘৃণ্য প্রচেষ্টা: ২০১৪ সালে ক্ষমতায় এসেই মোদী সরকার সরকারি বিদ্যুৎ বণ্টন ব্যবস্থা ধ্বংস করে বেসরকারি কোম্পানির হাতে তুলে দেওয়ার লক্ষ্যে বিদ্যুৎ সংশোধনী বিল পাশ করার চক্রান্ত শুরু করে। এই বিলের প্রাথমিক উদ্দেশ্য হলো লাভজনক এলাকার বিদ্যুৎ সরবরাহের অধিকার বেসরকারি কোম্পানির হাতে তুলে দেওয়া। এর সাথে সাথে এই বিলের মাধ্যমে বিদ্যুতের মাশুল ঠিক করার মেকানিজম পুরোপুরি বাজারের হাতে তুলে দেওয়ার ষড়যন্ত্র করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। সব ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত হবে কেন্দ্রীয় সরকার বা তাদের গঠিত সংস্থার হাতে, উঠে যাবে ক্রস সাবসিডি। বাড়বে গরিব মধ্যবিত্তদের বিদ্যুতের দাম ।
সরকারি বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার ওপর শেষ আঘাত- রিভ্যাম্পড ডিস্ট্রিবিউশন সেক্টর স্কিম (আরডিএসএস): কিন্তু বারবার চেষ্টা করেও বিদ্যুৎ সংশোধনী বিল পাশ না করতে পেরে কেন্দ্রীয় সরকার এক ভয়ানক স্কিম নিয়ে এসেছে ২০২২ সালের জুলাই মাসে– রিভ্যাম্পড ডিস্ট্রিবিউশন সেক্টর স্কিম (আরডিএসএস)। ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্কের সরাসরি নির্দেশে নিয়ে আসা এই স্মার্ট মিটারিং স্কিম জোর করে চাপিয়ে দেওয়ার জন্য নির্লজ্জভাবে কেন্দ্রীয় সরকার বন্ধ করে দিয়েছে সব চালু আর্থিক সহায়তা স্কিম। 
কী হবে আরডিএসএস কার্যকর হলে? ধাপে ধাপে ডাইরেক্ট বেনিফিট ট্রান্সফারের নামে সব ধরনের ক্রস সাবসিডি তুলে দেওয়া হবে। কস্ট রিফ্লেক্টিং টারিফের নামে যথেচ্ছ বিদ্যুৎ মাশুলের বোঝা বাড়ানো হবে। সরকারি বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার হাত থেকে লাভজনক এলাকা ছিনিয়ে নিয়ে বেসরকারি সংস্থার হাতে তুলে দেওয়ার পথ মসৃণ হবে। মিটার বসানোর বিপুল আর্থিক বোঝা পড়বে জনগণের ওপর। গোটা দেশজুড়ে সমস্ত গ্রাহকের ঘরে গ্রাহকদের নিজস্ব টাকায় বসাতে বাধ্য করা হবে প্রিপেইড স্মার্ট মিটার। এই মিটারের আয়ু সর্বোচ্চ ৭-৮ বছর। মিটারের দাম ৮০০০-১২০০০ টাকা। বিদ্যুতের বিলের মধ্যে দিয়ে প্রতি মাসে তা আদায় করা হবে। মিটার ভাড়া বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গে মাসিক ১০ টাকা ছিল। প্রিপেড স্মার্ট মিটারের ভাড়া বাবদ প্রায় ১০০ টাকা গুনতে হবে গ্রাহককে। 
টাকা ফুরোলে নিজে থেকেই কেটে যাবে বিদ্যুতের লাইন যেভাবে মোবাইলের ব্যালেন্স শেষ হলে মোবাইল কাজ করা বন্ধ করে দেয়। আর একবার লাইন কেটে গেলে, আবার লাইন জুড়তে গেলে দিতে হবে কয়েকশো টাকা ফাইন। যে সকল গ্রাহকের কন্ট্রাকচ্যুয়াল লোড কম আছে কিন্তু বেশি বিদ্যুৎ ব্যবহার হয়ে যায়, তারা বেশি বিপদে পড়বেন। বিলের টাকা বেশি মনে হলে গ্রাহক কার্যত অভিযোগ করতেও পারবেন না।  
সবচেয়ে বড় হামলা নামবে কৃষকের ওপর: সেচের পাম্পের লাইন আলাদা করে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে এই প্রকল্পে। ৩.৫০ লক্ষের বেশি যে পাম্পের কানেকশন আমাদের রাজ্যে রয়েছে, তার ওপর নামবে বিপুল বিলের বোঝা। ডাইরেক্ট বেনিফিট ট্রান্সফারের নামে তুলে দেওয়া হবে সাবসিডি। বিদ্যুতের অভাবে কৃষকের তিন ফসলা জমি শুকিয়ে যাবে। বিপন্ন হবে দেশের খাদ্য সুরক্ষা ।
বিদ্যুতের অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির রূপরেখা– বিদ্যুতের খোলা বাজার: উল্লেখ্য কেন্দ্রীয় সরকার ক্রমাগত চেষ্টা করছে রাজ্য সরকারি বিদ্যুৎ পর্ষদ ও বিদ্যুৎ উৎপাদন সংস্থার মাঝের দ্বিপাক্ষিক চুক্তিগুলো তুলে দিতে। তৈরি করা হয়েছে বিদ্যুতের ভার্চুয়াল বাজার– পাওয়ার এক্সচেঞ্জ মার্কেট। এই মার্কেটে বিদ্যুতের প্রতি মিনিটের দাম ঠিক হয় অজ্ঞাত এক সফটওয়্যার দিয়ে। একে বলে ডায়নামিক প্রাইসিং, অর্থাৎ চাহিদা বাড়লে দাম বাড়বে। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ তারিখে এক প্রাইভেট বিদ্যুৎ সংস্থার চাপে পড়ে রেগুলেটরি কমিশন এই বাজারে বিদ্যুতের দামের সর্বোচ্চ সিলিং ৫০ টাকা/ কিলো ওয়াট ঘন্টা করে দিয়েছে! চেষ্টা চলছে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম ১০০ টাকা পর্যন্ত করে দেওয়ার। আর এই ক্রমাগত বাড়তে থাকা বিদ্যুতের দামের কারণেই বণ্টন সংস্থা ক্রমাগত লোডশেডিং করতে বাধ্য হচ্ছে ।
স্বাভাবিকভাবেই স্মার্ট মিটারিং ব্যবস্থা এই বাজারী এজেন্সিগুলোর কাছে বিপুল পরিমাণ তাৎক্ষণিক ডেটা তুলে দেবে এবং চাহিদা অনুযায়ী যা খুশি দামে বিদ্যুৎ বিক্রি করার বন্দোবস্ত করবে প্রাইভেট সংস্থাগুলি, যেমন ভাবে রেলের টিকিটের দাম আকাশছোঁয়া হয়েছে। অথচ, বিদ্যুৎ সংযোগ নেওয়ার সময় চুক্তি অনুযায়ী গ্রাহক রাজি না হলে কেউ আসলেই জোর করে মিটার বদলাতে পারে না ।
দিনের সময় অনুযায়ী বিদ্যুৎ মাশুল- গ্রাহকের সর্বনাশ, কর্পোরেটের পৌষমাস: এই স্মার্ট মিটার বসানোর মাঝেই কেন্দ্রের সরকার নিয়ম চালু করেছে যে ঘরে যবে থেকে স্মার্ট মিটার বসবে, সেখানে তখন থেকেই চালু হয়ে যাবে দিনের সময় অনুযায়ী বিদ্যুৎ মাশুল। এতে সারা দিন-রাতের বিদ্যুতের দামকে তিন পর্যায়ে ভাগ করা হয়েছে। সন্ধ্যার সময় বিদ্যুতের চাহিদা ও দাম দিনের বেলার চেয়ে অনেকটা বেশি হবে। সরকার বলেছে যখন দাম বেশি, তখন বিদ্যুৎ ব্যবহার কমিয়ে নিলেই হলো! আসলে দাম এতটাই বাড়বে যে আপনাকে সন্ধ্যাবেলা লাইট ফ্যান বন্ধ করে অন্ধকারে থাকতে হবে ।
রাজ্য বিদ্যুৎ ক্ষেত্রের ভয়াবহ দৃশ্য: গত ১২ বছরে রাজ্যে তৈরি হয়নি একটিও নতুন বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র। রাজ্যের বর্তমান চাহিদার তুলনায় অনেক কম আমাদের উৎপাদন ক্ষমতা আর উল্টোদিকে বাজারে বাড়ছে বিদ্যুতের দাম। রাজ্যের সরকার কৌশল নিয়েছে লোডশেডিং করে ঘাটতি মেটানোর।  
অন্যদিকে ভয়াবহ স্মার্ট মিটার স্কিমকে কার্যকর করতে উঠেপড়ে লেগেছে রাজ্য সরকার। এই প্রকল্পে শুধুমাত্র স্মার্ট মিটারিংয়ের জন্যই ১২,৬২৩.১২ কোটি টাকার বোঝা বাংলার জনগণের ওপর চাপানো হবে। পুরো নিয়ন্ত্রণ তুলে দেওয়া হচ্ছে থার্ড পার্টির হাতে আউটসোর্সিং-এর মাধ্যমে। বাংলা জুড়ে মোট ২.০৭ কোটি গ্রাহককে এই স্মার্ট মিটারের জালে জড়িয়ে ফেলতে চলেছে রাজ্য সরকার। নির্দেশ এসেছে, প্রথম পর্যায়ের কাজ শেষ করতে হবে ৩১ ডিসেম্বর ২০২৩ এর মধ্যে।  
রাজ্যে বিদ্যুতের মাশুল দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশির দিকে। প্রিপেইড মিটারে কম-বেশি বিদ্যুৎ ব্যবহার করা সব গ্রাহকের ওপরেই লাগানো হয়েছে একই মাশুলের বোঝা। মারা পড়বে গরিব খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ, মধ্যবিত্ত। ছাঁটাই হবে মিটার রিডিং-এ নিযুক্ত প্রায় ৬,০০০ কর্মী, সাথে সাথে যাবে বিলিং, ক্যাশ, কল সেন্টারে কাজ করা শ্রমিকদের কাজ।
আর এই প্রযুক্তি থেকে হতে পারে বড় ধরনের বিপর্যয়, হতে পারে সামগ্রিক ব্ল্যাক আউট, রাজনৈতিক কারণে কেন্দ্রের সরকার কোনো রাজ্যের বিরূদ্ধে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে এই নেটওয়ার্ক কন্ট্রোল ব্যবহার করতে পারে। কোটি কোটি গ্রাহকের ডেটা চলে যেতে পারে কোনো বিপজ্জনক সংস্থার হাতে। 
গ্রাহক বাঁচাও, কৃষক বাঁচাও, শ্রমিক-কর্মচারী বাঁচাও, সরকারি বিদ্যুৎ পর্ষদ বাঁচাও: নিশ্চিতভাবেই বিদ্যুৎ ভারতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরিষেবা যা এখনও কিছুটা রেগুলেটরি ব্যবস্থার মধ্যে রয়েছে, যাতে রাজ্য সরকারগুলোর ভূমিকা রয়েছে। এই বিরাট বাজার দখল করতে ঝাঁপিয়ে পড়েছে কর্পোরেট সংস্থাগুলি আর তাদের স্বার্থ রক্ষাকারী মোদী সরকার। আমাদের রাজ্যের সরকার এই জঘন্য ষড়যন্ত্রে কেন্দ্রীয় সরকারের পার্টনার হয়েছে।
আর তাই আমাদের স্লোগান- গ্রাহক বাঁচাও, কৃষক বাঁচাও, শ্রমিক-কর্মচারী বাঁচাও, সরকারি বিদ্যুৎ পর্ষদ বাঁচাও, বেসরকারি বহিরাগত কোম্পানির হাতে মিটারিং ব্যবস্থা তুলে দেওয়া বন্ধ কর। মিটার আপগ্রেড করতে হলে তা করবে রাজ্য সরকারি সংস্থা, অপারেশন, মেইনটেন্যান্স, ডেটা সংরক্ষণ করতে হবে রাজ্য সরকারি সংস্থাকে, মিটার প্রিপেড করা চলবে না, বিদ্যুৎ বণ্টনে আর নতুন কোনো প্রাইভেট কোম্পানিকে ঢুকতে দেওয়া চলবে না, বিদ্যুৎকে খোলা বাজারের হাতে তুলে দেওয়া যাবে না, পারস্পরিক ভরতুকি বাড়িয়ে কৃষক ও শ্রমজীবী মানুষের বিদ্যুতের মূল্য কমাতে হবে, অপ্রচলিত শক্তি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার মাধ্যমেই তৈরি করতে হবে, রক্ষা করতে হবে শক্তি ও খাদ্যের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ত্ব।
নিশ্চিতভাবেই উৎপাদনের, প্রগতির প্রাণকেন্দ্র হলো শক্তি। আর তাই শক্তিক্ষেত্রের শ্রমিক কর্মচারীরা নিজেদের কাজের ক্ষেত্রের স্ট্র্যাটেজিক অবস্থানের জন্য কিছু ঘন্টার মধ্যেই সমস্ত উৎপাদন ব্যবস্থাকে থামিয়ে দিতে পারেন, ঝুঁকিয়ে দিতে পারেন রাষ্ট্রের ক্ষমতার কেন্দ্রগুলোকে। সমাজ পরিবর্তনের লড়াইতে সামনের সারিতে মুখোমুখি দাঁড়িয়ে নেতৃত্ব দেওয়ার দায়িত্ব তাদেরই; কিন্তু এই লড়াই জেতার একমাত্র চাবিকাঠি হলো ব্যাপক অংশের শ্রমজীবী মানুষ, কৃষক ও অন্যান্য সকল অংশের মানুষের এই আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ। এই আন্দোলন শুরু হবে সাধারণ গ্রাহকের বিদ্যুতের অধিকার রক্ষার লড়াই থেকে আর এগিয়ে যাবে শক্তিক্ষেত্র তথা ভারতের অর্থিনীতিকে সামাজিক মালিকানা প্রতিষ্ঠার দিকে।
 

Comments :0

Login to leave a comment