সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ ছিল ৬ মার্চের মধ্যে নির্বাচনী বন্ডের তথ্য আদালতে জমা করতে হবে স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়াকে। ৪ মার্চ এসে এসবিআই জানায়, তথ্য জমা করতে আরও সময় লাগবে। সুপ্রিম কোর্টের তরফে সময়সীমা বৃদ্ধি করা হয়নি।
এসবিআই’র গড়িমসির তীব্র নিন্দা করে সিপিআই(এম) পলিট ব্যুরো বলেছে, ‘‘সময়সীমার শেষের আগের মুহূর্তে এসবিআই ১১৬দিন সময়সীমা বৃদ্ধির আবেদন জানিয়েছে। এসবিআই’র সমস্ত কর্মকান্ড ডিজিটাল পদ্ধতিতে হয়। তাই সময়ের অভাবের অজুহাত বিশ্বাসযোগ্য নয়। এসবিআই এই অসঙ্গত ভূমিকা গ্রহণ করেছে মোদী সরকারের চাপে। কারণ কেন্দ্রীয় সরকার চায় না ২০২৪’র লোকসভা নির্বাচনের আগে নির্বাচনী বন্ডের বিস্তৃত তথ্য সামনে আসুক।’’
বৃহস্পতিবার ২টি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা মামলা দায়ের করে বলেছে, ‘‘ইচ্ছা করেই সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশ অমান্য করেছে এসবিআই। সময়সীমা শেষ বেলায় এসে বাড়তি সময় চেয়েছে। যাতে লোকসভা নির্বাচনের আগে নির্বাচনী বন্ড সংক্রান্ত তথ্য জনসাধারণের সামনে না আসে।’’
স্টেট ব্যাঙ্ক ৩০ জুন পর্যন্ত সময় চেছে সুপ্রিম কোর্টে। তার আগেই লোকসভা ভোট মিটে যাওয়ার কথা।
এদিন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা দু’টির তরফে আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ আদালতের দ্বারস্থ হন। প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে মামলা দায়ের হয়েছে।
এসবিআই’র আবেদনের শুনানি ১১ মার্চ হতে পারে। প্রশান্ত ভূষণ আদালত অবমাননার শুনানিও একইসঙ্গে করার আবেদন জানিয়েছেন। এই আবেদনে সদর্থক মনোভাব দেখিয়েছেন প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড়।
চলতি বছরের ১৫ জানুয়ারি ৫ বিচারপতির বেঞ্চ নির্বাচনী বন্ডকে অসাংবিধানিক আখ্যা দিয়েছে। সেই সঙ্গে সর্বোচ্চ আদালত এসবিআই’কে নির্দেশ দেয়, কোন কোন ব্যক্তি বা সংস্থা নির্বাচনী বন্ড ব্যবহার করে কোন কোন রাজনৈতিক দলকে কত টাকা সাহায্য করেছে, তা আদালতকে জানাতে হবে।
প্রসঙ্গত, একমাত্র এসবিআই’র মাধ্যমেই নির্বাচনী বন্ড বিক্রির অনুমতি দিয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকার।
স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা দু’টির তরফে আদালতে বলা হয়েছে, ‘‘এসবিআই’র আবেদনে ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান এবং ম্যানেজিং ডিরেক্টরের সই নেই। এই আবেদন আইনত অবৈধ।’’
এসবিআই’র দাবি ছিল, এত স্বল্প সময়ে বিপুল সংখ্যক বন্ড ব্যবহারকারীর পরিচয় সামনে আনা সম্ভব নয়। সেই যুক্তিকে খারিজ করে প্রশান্ত ভূষণ বলেছেন, ‘‘এসবিআই’র তরফে বলা হয়েছিল, প্রতিটি বন্ডের একটি বিশেষ নম্বর রয়েছে, যাতে প্রয়োজনে দ্রুত তাদের চিহ্নিত করা যায়। একইসঙ্গে বন্ডের ক্রেতাকে এসবিআই’র কেওয়াইসি বা ‘নো ইয়োর কাস্টোমার’ ফর্ম পূরণ করতে হয়েছে। এসবিআই প্রতিটি বন্ডের গ্রাহক এবং সংশ্লিষ্ট বন্ডের পরিচয় জানে। একইসঙ্গে এসবিআই’র মাত্র ১৯টি ব্রাঞ্চ এই বন্ড বিক্রি করেছে, এবং মাত্র ১৪টি ব্রাঞ্চের মাধ্যমে সেই বন্ড ভাঙানো হয়েছে। এই গোটা প্রক্রিয়ায় ব্যাঙ্কের খুবই সীমিত পরিকাঠামো জড়িত। তাই সময়ের অভাব অজুহাত ছাড়া কিছুই নয়।’’
এসবিআই’র ভূমিকার তীব্র নিন্দা করে কংগ্রেসের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক জয়রাম রমেশ বলেছেন, ‘‘এসবিআই’র কাছে ২০১৮ সালে মেয়াদ পার হয়ে যাওয়া কয়েকটি নির্বাচনী বন্ড ভাঙানোর অনুরোধ করেছিল একটি রাজনৈতিক দল। তৎক্ষণাৎ সেই অনুরোধে সাড়া দিয়েছিল এসবিআই। তারজন্য ঝড়ের গতিতে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রক থেকে অনুমতিও মিলেছিল। এখন তাহলে সময়ের অভাবের অজুহাত দেওয়া হচ্ছে কেন?’’
Comments :0