৩০তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধনকে ঘিরে এবার চাঁদের হাট বসেনি। টলিউডের সঙ্গে যুক্ত তৃণমূলের সাংসদ-বিধায়করাই প্রধানত আসর আলো করেছিলেন। সাংসদ দেব, শত্রুঘ্ন আর ক্রিকেটার কাম ভাবী শিল্পপতি সৌরভ গাঙ্গুলিকে পাশে নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীই ছিলেন মধ্যমণি। আগের বছর অমিতাভ বচ্চন, শাহরুখ খান, সলমন খানদের এনে চমক দেওয়া হলেও এবার বলিউডের কেউই প্রায় নেই। সেবার সলমনের সঙ্গে দিদিভাইয়ের সম্পর্ক পাতিয়ে বাংলায় ছবি করার কথা একরকম জোর করেই বলিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। ব্যস ঐ পর্যন্তই তার পর গত এক বছরে সলমন ফিরে তাকাননি, ছবি তো দূরের কথা। এবার তেমন কেউ ছিল না তেমন কিছু বলানোর। তাই আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র জগতের মানুষদের উদ্দেশে বাংলায় ছবি করার আবেদন হাওয়ায় ভাসিয়ে দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী দায় সেরেছেন।
উদ্বোধনকে ঘিরে যে তেমন সাড়া মিলবে না তেমন আঁচ আগে থেকেই টের পেয়েছিল সরকার। সম্ভবত সেজন্যই বরাবরের মতো নেতাজী ইন্ডোর স্টেডিয়ামের বিশাল মঞ্চ ছেড়ে এবার আলিপুরের অনেক কম আসনের ধনধান্য হলকে বেছে নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তাতেও যে মুখ রক্ষা করা যায়নি। বলিউড তারকাহীন আসরে অনুপস্থিত থেকে গেলেন টলিউডের বহু নামীদামিরা। অবশ্য শাসক প্রসাদে তুষ্টদের বাধ্যতামূলক হাজিরা ছিল।
বাংলার চলচ্চিত্র শিল্পের উন্নতির জন্য প্রতি বছর সরকারি তহবিল থেকে কোটি কোটি টাকা খরচ করে আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের নামে মোচ্ছব হয়। একইভাবে বছর বছর তার থেকেও অনেক বেশি টাকা খরচ করা হয় শিল্প সম্মেলনে। ঘোষিত লক্ষ্য বাংলায় শিল্প-বাণিজ্যে নব জাগরণ। দেশ-বিদেশের কর্পোরেট কর্তাদের ডেকে এনে মহারাজকীয় আপ্যায়ন করে প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ কোটি টাকার বিনিয়োগের প্রস্তাব ঘোষণা করা হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বছর ঘুরলে হাতে পেন্সিল ছাড়া আর কিছুই থাকে না।
আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব নাকি রাজ্যের চলচ্চিত্র শিল্পকে বিকশিত করবে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে সরকার উৎসবে যত টাকা ঢালছে ততই রাজ্যে ছবি তৈরি কমে যাচ্ছে। এরাজ্যের পরিচালকরা ছবি তৈরির জন্য হয় অন্য রাজ্যে অথবা বিদেশে চলে যাচ্ছেন। যতদিন যাচ্ছে এরাজ্যে ছবি তৈরি দ্রুত কমে যাচ্ছে। ২০২২ সালে যেখানে ১৭০টি চলচ্চিত্র তৈরি হয়েছিল, ২০২৩ সালে সেটা কমে হয়েছে ১৩৭টি। আর এবছর এখন পর্যন্ত মাত্র ৩৪টি ছবির শুটিং হয়েছে। বাকি কয়দিনে সব মিলিয়ে সংখ্যাটা ৪০ পেরোবে কিনা সন্দেহ। বোঝাই যাচ্ছে ছবি নির্মাণ ভীষণভাবে কমে যাবার ফলে প্রযোজকরা বিনিয়োগে উৎসাহ হারাচ্ছেন। পরিচালকরা হতাশ। শিল্পী-কলাকুশলীদের তো কাজ না পেয়ে উপার্জন সঙ্কটে পড়ছেন।
গত চার মাস ধরে টলিউডে চলছে কার্যত অচলাবস্থা। শাসকদলের দাপটে টলিউডে কাজ করাই দায়। তথাকথিত তৃণমূলী ফেডারেশনের ফতোয়া মেনে না চললে এরাজ্যে কোনও ছবি করা যাবে না। তাদের খামখেয়ালি ফতোয়ায় ছবি করার খরচ বেড়ে যাচ্ছে তিন গুণ, চার গুণ। তেমনি তাদের মরজিমাফিক চলতে হয় পরিচালকদের। ফলে প্রযোজকরা এবং পরিচালকরা ছবি তৈরিতে উৎসাহ দেখাচ্ছেন না। মার খাচ্ছে গোটা শিল্প। রোজগার কমছে এর সঙ্গে যুক্ত মানুষদের।
Tollywood
টলিউড ধুঁকছে
×
Comments :0