The Soothing Alappuzha

ঘুরে ফিরে: সুন্দরী আলাপুঝা, অমলিন ব্যাকওয়াটার

জাতীয়

The Soothing Alappuzha অপরূপ আলাপুঝা। প্রতিবেদকের তোলা ছবি।

ড. তন্ময় ঘোষ

 

ভারতের দক্ষিণে সাগর পাড়ের রাজ্য কেরালার (God's own country) অন্যতম প্রধান শহর আলেপ্পি বা আলাপুঝা। ভেনিস অফ ইস্ট নামে পরিচিত সাগর ,হ্রদ, নদী, খালের জলে পুষ্ট এই জলশহরের সৌন্দর্য বুঝতে আপনাকে অন্তত একবার আসতেই হবে এখানে।

সমুদ্র তার গণ্ডি পেরিয়ে শহরের মধ্যে অনেকটাই ঢুকে এসেছে। সৃষ্টি করেছে ব্যাকওয়াটারের, যা আমাদের কাছে চরম পাওয়ার পরম পাওয়া। ট্রেন পথে এলে আপনাকে আলেপ্পি বা আলাপুঝায় নামতে হবে। আকাশপথে এলে নামতে হবে কোচিনে। থাকার জন্য আলেপ্পি স্টেশনের স্টেশনের কাছাকাছি হোটেল নিতে পারেন, তবে ভালো হয় যদি আপনি ৪ কিলোমিটার দূরে  KSRTC বাসস্ট্যান্ডের কাছে কোনও হোটেল নেন। কেননা বাসস্ট্যান্ডের পাশেই রয়েছে ব্যাকওয়াটারে ভ্রমণের জন্য বোট জেটি। এখান থেকেই আপনাকে সরকারি বা বেসরকারি বোট নিয়ে ঘুরতে হবে।

ট্র্যাডিশনাল হাউসবোট ছাড়াও বিভিন্ন মানের বোট ভাড়া পাওয়া যায়। বেসরকারি বোট ঘন্টা প্রতি ১৫০০-২০০০ থেকে ৮-১০ হাজারেরও পাওয়া যায়। তবে কম পয়সায় ভ্রমণ করতে চাইলে যাতায়াত সমেত ১২০ টাকায় সরকারি বোটে তিন থেকে সাড়ে তিন ঘন্টার জন্য ঘুরে নিতে পারেন। শেয়ার বোটও মাথাপিছু ৪০০ টাকায় পাওয়া যায়। তবে কোন্ কোন্ সংস্থা শেয়ার বোট চালায় তার খোঁজ আপনাকেই করে নিতে হবে।

বোট জেটি থেকে খাঁড়িপথ পেরিয়ে জলপথে এগিয়ে যেতে যেতে দেখবেন অসংখ্য বোটের আনাগোনা যা আপনাকে মুগ্ধ করবেই। নারকেল গাছে ছাওয়া সবুজ প্রকৃতির বুক চিরে আপনি এগোতে থাকলে দেখবেন জলরাশির মধ্যেই বাড়িঘর, ছোট বড় জনপদ, স্কুল, চার্চ, দোকান-বাজার সহ সমুদ্রতলের নিচে দিগন্ত বিস্তৃত চোখ জুড়ানো সবুজ ধানখেত। আপনার মন ক্যামেরায় অমলিন হয়ে থাকবে চিরকাল।

বিভিন্ন জনপদ গুলিকে সেতু দিয়ে যুক্ত করা হয়েছে। জিনিসপত্র আনা নেওয়া করা ছাড়াও বিভিন্ন ঘাট বা জেটিতে চলছে লোকজনের ওঠানামা।

এই মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশে সড়ক পথের মতোই সমান সচল ব্যাকওয়াটারে এই আনন্দদায়ক বোট ভ্রমণ। তা যদি আবার বৈকালিক হয় তাহলে তো কথাই নেই। সূর্যাস্তের সময় সোনালী আভায় মুখরিত পড়ন্ত বিকেলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ক্যামেরাবন্দি করতে ভুলবেন না একেবারেই।

এভাবেই আলেপ্পি বা আলাপুঝা তার অভাবনীয় রূপ সৌন্দর্য নিয়ে নিজেকে মেলে ধরেছে ভ্রমণ পিপাসুদের কাছে।

এখানকার অন্যতম আকর্ষণ ‘কেট্টুভাল্লাম’ বা এক বিশেষ ধরনের হাউজবোট। ইচ্ছে করলে এই হাউসবোটে এক রাত কাটাতেও পারেন আপনি, তবে তা খরচ সাপেক্ষ। কেরালা রাজ্য সরকারি পরিবহণ নিগম (KSRTC) বাস স্ট্যান্ড থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে রয়েছে মারারী সি বিচ। বেসরকারি বাস স্ট্যান্ড থেকে এই সৈকতে যাওয়ার বাস পেয়ে যাবেন, ভাড়া জনপ্রতি কুড়ি টাকা। সমুদ্র তীরে এই নির্জন বালুকাময় তটভূমিতে অবগাহন করতে হলে আপনাকে এক রাত কাটাতে হবে এখানে। থাকার জন্য বেশ কয়েকটি মাঝারি মানের হোটেল রয়েছে।

মারারী বিচের কাছেই রয়েছে ব্রাসিলিকা চার্চ, যার গঠনশৈলী সত্যিই অসাধারণ। এছাড়া আপনি অবশ্যই দেখবেন আলেপ্পি স্টেশনের কাছে পায়ে হাঁটা দূরত্বে (৫-৭ মিনিট) আলেপ্পির সমুদ্র সৈকত। বালুকাময় সুন্দরী পরিচ্ছন্ন এই সৈকতে হাঁটতে হাঁটতে দেখতে পাবেন ব্রিটিশ আমলের লোহার ব্রিজের এক কঙ্কালসার দেহ, যা সূর্যাস্তের সময় আপনার মন প্রাণ ভরিয়ে দেবে ।

 

কিভাবে যাবেন

হাওড়া  অথবা শালিমার থেকে চেন্নাই যাওয়ার ট্রেন ধরতে হবে। চেন্নাই থেকে ১২-১৪ ঘণ্টায় ট্রেন পথে আলেপ্পি পৌঁছে যাবেন। আলেপ্পি যাওয়ার সরাসরি ট্রেন পাবেন সপ্তাহে দু’দিন শালিমার স্টেশন থেকে। এছাড়া আকাশপথে ও কোচি হয়ে সড়কপথে আড়াই তিন ঘন্টায় আপনি পৌঁছে যাবেন আলেপ্পি। 

Comments :0

Login to leave a comment