মালাতিয়ার হোটেলের ধ্বংসাবশেষ থেকে শনিবার পাওয়া গেল এক ভারতীয়ের দেহ। তুরস্কের ভারতীয় দূতাবাস জানিয়েছে, সোমবার ভূকম্পের পর থেকেই নিখোঁজ ছিলেন বিজয় কুমার নামে উত্তরাখণ্ডের পৌড়ির বাসিন্দা এই ব্যবসায়ী। তুরস্কের যে দশটি প্রদেশে সবথেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, মালাতিয়া তাদের মধ্যে অন্যতম। এখানে জরুরি অবস্থা জারি রয়েছে। বিজয় কুমারের দেহ উদ্ধারের পর ধারণা করা হচ্ছে, সম্ভবত আরও অনেক ভারতীয়ই এই প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কবলে পড়েছেন। তাঁর দেহ দ্রুত ভারতে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ব্যবসার কাজে নাকি ঘুরতে তিনি তুরস্কে গিয়েছিলেন তা জানা যায়নি। তবে তুরস্কে প্রায় তিন হাজার ভারতীয় থাকেন, তাঁদের মধ্যে ১৮০০ জন ইস্তানবুলে, আড়াইশো জন আঙ্কারায় এবং বাকিরা থাকেন গোটা দেশজুড়েই।
প্রায় ১২৯ ঘণ্টা ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে থেকে তুরস্কে এদিন এক পরিবারের পাঁচ সদস্য উদ্ধার হয়েছেন। নিজেদের বাড়ি ভেঙেই আটকে ছিলেন তাঁরা। গাজিয়ানটেপের নুরদাগি শহরে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে ভূমিকম্পে। সেই শহরেই থাকে এই পরিবার। ইট-পাথরের স্তূপ থেকে প্রথমে মা-মেয়ে হাভা এবং ফতমাগুল আসলানকে উদ্ধার করেন উদ্ধারকর্মীরা। তারপর তাঁরা হাত বাড়ান বাবা হাসানের দিকে। কিন্তু তিনি তখন চাইছেন, তাঁর আরেক মেয়ে জেনেপ আর ছেলে সালতিককে যেন আগে উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারকারীরা অবশ্যই পরিবারের প্রত্যেককেই নিরাপদে বের করে এনেছেন। চারপাশে স্বজন হারানোর কান্নার মাঝে এ এক পরিবারের নতুন জীবনের গল্প। গাজিয়ানটেপেই ১৩২ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে আটকে থেকে তিন বছর এবং সাত বছরের দুই শিশু কন্যাকেও জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। তবে হাতাই প্রদেশে ১৩ বছরের এক নাবালিকাকে উদ্ধার করা হলেও হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার আগেই তার মৃত্যু হয়েছে।
তুরস্ক-সিরিয়া মিলিয়ে মৃত্যু সরকারি হিসাবে এদিন ২৫ হাজার ছাড়িয়েছে। তুরস্কেই মৃত্যু হয়েছে ২২ হাজারের বেশির। জখম এবং গৃহহীন হয়েছেন অন্ততপক্ষে ৮০ হাজার। বিশেষজ্ঞরা যদিও এখন বলছেন, ধ্বংসস্তূপের নিচে সাত দিন পর্যন্তও কেউ জীবিত থাকতে পারেন, কিন্তু যত দ্রুত সম্ভব উদ্ধারকাজ চালাতে হবে। বিভিন্ন জায়গায় ইতিমধ্যে উদ্ধারকারীরা থার্মাল ক্যামেরা নামাচ্ছেন। যার মাধ্যমে জানা যাবে, ধ্বংসস্তূপের নিচে জীবিত কেউ রয়েছেন কি না। এদিকে, হাতাইতে উদ্ধারকারীদের উপরই চাঙড় ভেঙে পড়েছে। জখমও হয়েছেন একজন।
মৃত্যু বেড়ে চলায় মর্গে জায়গা কম পড়ছে। কম পড়ছে শেষকৃত্যের জায়গাও। আন্টাকিয়ায় বিভিন্ন জায়গায় নতুন করে শেষকৃত্যের জায়গা তৈরি করা হচ্ছে। অ্যাম্বুলেন্স ভর্তি কালো বডি ব্যাগে আসছে পরপর দেহ। হচ্ছে শেষকৃত্য। তুরস্কের ‘রিলিজিয়াস অ্যাফেয়ার্স’ মন্ত্রকের এক কর্মী জানান, আন্টাকিয়ার একটি সমাধিস্থলে শুধু শুক্রবারই ৮০০’র বেশি শেষকৃত্য হয়েছে। শনিবার দুপুরের মধ্যে অন্তত ২০০০ দেহ এসেছে।
তাপমাত্রার পারদ নামতে থাকায় সর্বত্র দুর্গতদের অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে এদিনও। খারামানমারাসে একটি বড় স্টেডিয়ামে অস্থায়ী আশ্রয় শিবিরের ব্যবস্থা করা হয়েছে। একেকটি শহরে কোনও একটি বাড়িও বাসযোগ্য নেই বলে জানাচ্ছেন উদ্ধারকারীরা।
অন্যদিকে, গৃহযুদ্ধে বিপর্যস্ত সিরিয়ায় উদ্ধারকাজ মারাত্মকভাবেই ধাক্কা খাচ্ছে। ত্রাণ প্রায় পৌঁছাচ্ছে না বললেই চলে। একাধিক মানবাধিকার সংগঠন ত্রাণ তহবিলের জন্য আবেদন করছেন। ভূমিকম্পের পর চার দিনের মাথায় শুক্রবার প্রথম সিরিয়ায় বিদ্রোহীদের দখলে থাকা অংশে রাষ্ট্রসঙ্ঘের ত্রাণ পৌঁছায়। কিন্তু তাতেও প্রয়োজনীয় জিনিসের চূড়ান্ত অভাব বলে অভিযোগ ওঠে। বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন সাহায্য করলেও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ভয়াবহতা এত মারাত্মক তা যথেষ্ট নয়।
Comments :0