শাসকদলের ঘনিষ্ঠ ভুয়ো ইডি অফিসার পরিচয়ে তোলাবাজিতে ধৃত রায়না থানার খেমতার বাসিন্দা সেখ জিন্নার আলির স্ত্রী ও কোম্পানির নামে থাকা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে উদ্ধার হয়েছে ৪৫ লক্ষ ৮৯ হাজার টাকা। অ্যাকাউন্টটি ফ্রিজ করেছে ইডি। এছাড়াও ধৃতের বাড়ি থেকে দু’টি গাড়ি ও বেশকিছু আপত্তিকর জিনিসপত্র উদ্ধার হয়েছে বলে প্রেস বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে ইডি। আদালতে পেশ করে ধৃতকে হেফাজতে নিয়েছে ইডি। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে প্রতারণার বিষয়ে বেশকিছু তথ্য পেয়েছে ইডি। অভিযোগ, শাসকদলের বড় বড় নেতা মন্ত্রীদের সাথে এই প্রতারকের ওঠাবসা ছিল এমনটাই অভিযোগ স্থানীয় মানুষের। তৃণমূল সরকারের একাধিক মন্ত্রীর সাথে এই প্রতারকের ছবি আছে শুধু তাই নয়, তার বাড়িতেও শাসকদলের নেতা মন্ত্রীদের আনাগোনা ছিল গ্রামের মানুষ জানিয়েছেন। রাতারাতি এই প্রতারক জিন্নার আয় বহির্ভুত সম্পত্তি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন রায়নার মানুষ। কোন কোন মন্ত্রী এই প্রতারনার সাথে যুক্ত তা তদন্ত করে প্রকাশ্যে আনুক ইডি এমনই দাবি করছেন রায়নার খেমতা গ্রামের মানুষ। অনেকেই বলেছেন জিন্নার ছিলো খুবই প্রভাবশালী। ইডি সূত্রে জানা গিয়েছে, এক ব্যবসায়ী ইডির অফিসার পরিচয়ে তোলাবাজি নিয়ে বিধাননগর দক্ষিণ থানায় জিন্নারের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। তার ভিত্তিতে বিধাননগর থানা কেস রুজু করে। বিষয়টি ইডির নজরে আসে। এরপরই মানি লন্ডারিং অ্যাক্টে তদন্তে নামে ইডি। কলকাতা ও বর্ধমানের বিভিন্ন জায়গায় কখনও ইডি অফিসার, আবার কখনও কেন্দ্রীয় সংস্থার অফিসার পরিচয় দিয়ে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে দীর্ঘদিন ধরে তোলাবাজি চালিয়ে আসছে জিন্নার। কিন্তু, কিভাবে সে তোলাবাজি চালাত? ইডি জানিয়েছে, প্রথমে সে ব্যবসায়ীদের টার্গেট করত। তারপর ইডি অফিসার পরিচয় দিয়ে সেই ব্যবসায়ীকে ফোন করত জিন্নার। ব্যবসায়ীকে বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেট অফিসের সামনে ডেকে পাঠাত সে। তারপর তাঁর ব্যবসায় নানা গণ্ডগোল আছে বলে জানাত সে। মিটিয়ে দেওয়ার জন্য সে মোটা টাকা দাবি করত। এক ব্যবসায়ীর কাছে সে দেড় কোটি টাকা আদায় করে। তার মধ্যে ১ কোটি ৩০ লক্ষ টাকা নগদে এবং ২০ লক্ষ টাকা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা নেয়। এছাড়াও যে সব ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে তাঁদেরও টার্গেট করত সে। মিটমাটের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সে টাকা আদায় করত। এভাবেই আরও একজনের কাছ থেকে সে দেড় কোটি টাকা নেয়। বুধবার খেমতায় তার বাড়িতে তল্লাশি চালায় ইডির একটি দল। সেখান থেকে ব্যাঙ্কের বেশকিছু নথিপত্র বাজেয়াপ্ত হয়। এছাড়াও আরও কিছু আপত্তিকর নথিপত্র তার বাড়ি থেকে পাওয়া গিয়েছে। এনফোর্সমেন্ট ডাইরেক্টরেট এবং বিভিন্ন সরকারি অফিসের আধিকারিকদের জাল সিল ব্যবহার করে সে লোক ঠকিয়েছে বলে ইডি জানিয়েছে। তার বাড়ি থেকে ভারত সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের প্যাডও মিলেছে। তাতে অশোক স্তম্ভ দেওয়া রয়েছে। এছাড়াও অ্যান্টি ট্রাফিকিং কমিটির চেয়ারম্যান পরিচয় দিয়েও সে বিভিন্ন জায়গায় প্রতারণা করেছে বলে ইডির দাবি। তার সংস্থাটি নীতি আয়োগের অধীনে রেজিস্ট্রীকৃত বলে দাবি করে জিন্নার। এছাড়াও সরকারি ডমিউনের আদলে ওয়েবসাইট খুলে সে প্রতারণা চালাত। এ ধরণের প্রতারকদের খপ্পড়ে না পড়ার জন্য মানুষকে সতর্ক করেছে ইডি। সমন পেলে তা ইডির সরকারি ওয়েবসাইটে গিয়ে সত্যতা যাচাই করার জন্যও পরামর্শ দিয়েছে ইডি।
তবে, এই প্রথম নয়। ২০১১ সালে পূর্ব মেদিনীপুরের সুতাহাটা থানার পুলিশ প্রতারণার একটি মামলায় জিন্নারকে গ্রেপ্তার করে। সুতাহাটা থানা এলাকায় প্রশিক্ষণের নাম করে সে একটি অফিস খোলে। সেখানে প্রশিক্ষণের কথা বলে ছেলে-মেয়েদের কাছ থেকে মোটা টাকা তোলে সে। এছাড়াও চাকরি দেওয়ার নাম করে বেকার ছেলে-মেয়েদের কাছ থেকে সে ১৬ লক্ষ টাকা নেয় বলে অভিযোগ। সেই মামলায় গ্রেপ্তার হয় জিন্নার। তার বিরুদ্ধে ২০১৬ সালে বর্ধমান সিজেএম আদালতে প্রতারণার মামলা দায়ের করেন তৎকালীন স্ত্রী। সিজেএম কেস রুজু করে তদন্তের জন্য নির্দেশ দেন। সেই মামলায় সুপ্রিম কোর্ট থেকে র্শতাধীন জামিন পায় জিন্নার। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের পরামর্শদাতা পরিচয় দিয়ে প্রতারণায় জিন্নার জড়িত বলে তার স্ত্রী অভিযোগ করেন। এছাড়াও নানাভাবে লোক ঠকানোয় জিন্নার জড়িত বলে স্ত্রীর অভিযোগে উল্লেখ করা হয়। এমনকি বিদেশ থেকেও তার অ্যাকাউন্টে টাকা জমা পড়েছে বলে আদালতে দায়ের করা অভিযোগে জানানো হয়।
Fake ED Officer Arrested
রায়নায় ধৃত শাসক ঘনিষ্ঠ ভুয়ো ইডি অফিসার, উদ্ধার বিপুল টাকা

×
Comments :0