Population RSS

অন্ধত্বের অবিবেচনা

সম্পাদকীয় বিভাগ

‘ভাত দেবার মুরদ নেই কিল মারার গোঁসাই’। দেশের বেশিরভাগ পরিবারে দু’বেলা পেট ভরে খাবার জোটে না। ঘরে ঘরে বেকার। কাজের সংস্থান নেই, জিনিসপত্রের বিশেষ করে খাদ্যপণ্যের মূল্য বাড়ছে হু হু করে। শিক্ষার খরচ ধরা ছোঁয়ার বাইরে। চিকিৎসার খরচ জোগানোর সামর্থ্য নেই বেশিরভাগ পরিবারের। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি দরিদ্র মানুষের বাস এই ভারতবর্ষে। জনসংখ্যায় ইতিমধ্যেই সব দেশকে পেছনে ফেলে (এমনকি চীনকেও) বিশ্বের বৃহত্তম হয়ে উঠেছে। জন ঘনত্ব বেড়ে যাওয়ায় জমি সহ অত্যাবশ্যকীয় যাবতীয় প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর চাপ অস্বাভাবিক বেড়ে গেছে। প্রকৃতির ভারসাম্যে গুরুতর চিড় ধরেছে। জলাভাব বা জলসঙ্কট প্রকট হচ্ছে। বৃষ্টি নির্ভর চাষের অনিশ্চয়তা খাদ্যাভাবের আশঙ্কা জোরদার করছে। পরিবেশ তথা বায়ু দূষণ বিস্তীর্ণ নগরাঞ্চলকে অবাসযোগ্য করে চলেছে। দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে বনাচ্ছাদন। মোদী জমানায় এমন এক সম্প্রসারমাণ ঘোর সঙ্কটের মধ্যে নাগপুরের হেড কোয়ার্টার থেকে আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত ডাক দিয়েছেন সব নব দম্পতিরা যেন অন্তত তিনটি করে সন্তানের জন্ম দেন। অতীতে সঙ্ঘ পরিবারের হোমড়া-চোমড়া নেতাদের মুখে বার বার শোনা গেছে এমন কথাবার্তা। তারা নির্দিষ্ট করে কেবল হিন্দুদের সন্তান উৎপাদন বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন। অজুহাত মুসলিমরা নাকি চারটে বিয়ে করে ২৪টা সন্তান জন্ম দিচ্ছে। তাতে নাকি মুসলিম সংখ্যা বেড়ে ভারত মুসলিম দেশ হয়ে যাবে। অতএব অন্ধ ও উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের নিদান হিন্দুদের অন্তত চারটি সন্তানের জন্ম দিতে হবে।
অন্ধ হিন্দুত্ববাদী রাজনীতি করতে গিয়ে তালজ্ঞান হারিয়ে নেতারা কখন কি বলছেন নিজেরাই মনে রাখেন না। পাঁচ বছর আগে লাল কেল্লার ভাষণে প্রধানমন্ত্রী জনসংখ্যা বৃদ্ধিকে দেশের সামনে চ্যালেঞ্জ হিসাবে চিহ্নিত করে কেন্দ্র ও রাজ্যগুলিকে তার মোকাবিলায় যৌথভাবে শামিল হবার কথা বলেন। যদিও গত পাঁচ বছরে কোনও উদ্যোগই নেওয়া হয়নি। ২০ বছর আগে গৃহীত জনসংখ্যা নীতি আজও বহাল আছে। দু’বছর আগে ভাগবতই বলেছিলেন সুসংহত জনসংখ্যানীতি প্রণয়নের। তাতে কোনও অংশকে ছাড় দেওয়া যাবে না। আরএসএস মুখপত্র অর্গানাইজারে লেখা হয়েছে, দেশের বিভিন্ন অংশে অসম জন্মহারের কারণে দক্ষিণ ও পশ্চিম ভারতে অন্য অংশের তুলনায় জনসংখ্যা কমে যাচ্ছে। যেটা ভবিষ্যতে রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিরোধের জন্ম দেবে। গত অক্টোবরে অন্ধ্র প্রদেশে বিজেপি জোট সরকারের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডু রাজ্যের মানুষকে বেশি সন্তানের জন্মদানের আহ্বান করেছেন। কারণ জন্মহার কমে যাওয়ায় অন্ধ্রে বয়স্ক মানুষের আধিক্য বাড়ছে যা অর্থনীতির পক্ষে দুশ্চিন্তার। একই কথা বলেছেন তামিলনাডুর মুখ্যমন্ত্রীও। তেলেঙ্গানাও তেমন ভাবনার অসুসারী হতে চাইছে।
ভারতে মহিলাপিছু সন্তান সংখ্যা সামগ্রিকভাবে কমে ২.১-এর নিচে নেমে গেলেও সর্বত্র সমানভাবে কমছে না। প্রধানত দক্ষিণ ভারতে দ্রুত কমে টোটাল ফার্টিলিটি রেট ২.১-এর অনেক নিচে নেমে গেছে। কিন্তু গো-বলয়ে তা ২.১-এর অনেক ওপরে। ফার্টি‍‌লিটি রেট ২.১ হলো স্থিতাবস্থার মাপ। এই স্তরে জনসংখ্যা মোটামুটি এক জায়গায় স্থির থাকে। এই ধারা চলতে থাকলেও ২০৬০ সালের আগে জনসংখ্যা কমার সম্ভাবনা নেই। বরং বাড়তে বাড়তে সর্বোচ্চ ১৭০ কোটি হবে। তারপর কমতে শুরু করবে। এখন ২০২৪ সালে দাঁড়িয়ে মোহন ভাগবতরা যদি অবিবেচকের মতো ৩ সন্তানের ফরমুলা চালু করতে চান তাহলে ভারতে জনসংখ্যা কমার কোনও সম্ভাবনা থাকবে না। বরং ২০৬০ সালে সেটা ২০০ কোটি ছাড়িয়ে যেতে পারে। ভারতের বুকে ২০০ কোটি মানুষের বেঁচে থাকার উপযোগী পরিবেশ আছে কি?

Comments :0

Login to leave a comment