Festival of Destruction

ধ্বংসের উৎসব

সম্পাদকীয় বিভাগ

বছর বছর ঘটা করে ঢাক ঢোল বাজিয়ে, বিপুল অর্থ খরচ করে এলাহি আয়োজনে হয় শিল্পোৎসব। বড়-মাঝারি শিল্পপতিদের ডেকে এনে চলে অন্তহীন আপ্যায়ন। ঘোষণা হয় হাজার হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ প্রস্তাবের। কিন্তু তারপর কেউ আর খোঁজই রাখে না প্রস্তাবের কত শতাংশ বাস্তবে রূপায়িত হয়েছে। সত্য এটাই এরাজ্যে শিল্পে নতুন কোনও বিনিয়োগ হয় না। যেসব শিল্প বাণিজ্য সংস্থা আছে তাদেরও একাংশ রাজ্য থেকে পাততা‍ড়ি গুটিয়ে অন্যরাজ্যে চলে যাচ্ছে। ফলে শিল্পক্ষেত্রে দ্রুত ভারতের মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ। টাটা গোষ্ঠীকে তাড়িয়ে এরাজ্য থেকে শিল্প বিসর্জনের যে যাত্রা শুরু হয়েছিল মমতা ব্যানার্জির হাত ধরে সেটা এখন বিশিল্পায়নের পর্যায়ে অধঃপতিত হয়েছে। শিল্পের বিকাশের জন্য, অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাবার জন্য একটা রাজ্যে যে পূর্ব শর্তগুলি জরুরি তৃণমূল জমানায় সেগুলি অন্তর্হিত হয়ে যাচ্ছে। সংসদে প্রদত্ত সরকারি তথ্য থেকে পরিষ্কার এরাজ্যে শিল্পে বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং নতুন নতুন শিল্প না আসার মূল কারণ উৎপাদন খরচ বেশি, প্রশাসনিক সমস্যা, যোগাযোগ ব্যবস্থার সমস্যা, আইন শৃঙ্খলার সমস্যা। অর্থাৎ শিল্প বিকাশের জন্য যেগুলি সবচেয়ে জরুরি সেগুলি সরকার ব্যবস্থা করে দিতে পারছে না। স্বাভাবিকভাবেই বিনিয়োগপতি বা উদ্যোগপতিরা উৎসাহ হারাচ্ছেন। তার নিট ফল পশ্চিমবঙ্গ দ্রুত পিছিয়ে পড়ছে। ১৯৬০-৬১ সালে যে রাজ্য দেশের তিনটি শিল্পোন্নত রাজ্যের একটি ছিল আজ আর তাকে খুঁজে পাওয়া যায় না।
যে কোনও রাজ্যে শিল্পে অগ্রগতির প্রধান লক্ষ্মণ নতুন নতুন ক্ষেত্রে নতুন নতুন কোম্পানির আবির্ভাব। অর্থনীতির ভাষায় যাদের স্টার্ট আপ কোম্পানি বলে। বছর বছর এই স্টার্টআপের সংখ্যা বুঝিয়ে দেয় রাজ্যটি অগ্রগতির পথে এগচ্ছে কিনা অথবা ভবিষ্যৎ কতটা সম্ভাবনাময়। ২০২২ ও ২০২৩ সালে বিভিন্ন রাজ্যে স্টার্টআপের যে সরকারি তথ্য সংসদে দেওয়া হয়েছে তাতে পশ্চিমবঙ্গের স্থান নবমে। অবশ্য উৎপাদনশীল শিল্পসংস্থা গড়ে তুলে রাজ্যের দ্রুত বিকাশে ব্যর্থ হলেও ভুয়ো কোম্পানি খুলে বেআইনি লেনদেন ও আর্থিক জালিয়াতিতে অনেকটাই এগিয়ে এরাজ্য। ভুয়ো কোম্পানির সংখ্যাবৃদ্ধিতে দেশের তিনটি শীর্ষ রাজ্যের একটি পশ্চিমবঙ্গ।
১৯৬০ সালে দেশের মোট জিডিপি-তে পশ্চিমবঙ্গের অংশ ছিল ১১ শতাংশ। ২০২৩-২৪ সালে সেটা কমে ৫.৬ শতাংশ হয়েছে। জাতীয় স্তরের মাথাপিছু আয়ের ১২৭.৫ছিল প‍‌শ্চিমবঙ্গের। এখন সেটা ৮৩.৭শতাংশ। অর্থাৎ মাথাপিছু আয়ের জাতীয় স্তরের অনেক নিচে পড়ে আছে রাজ্য।
সংসদে সবচেয়ে উদ্বেগজনক যে তথ্যটি জানানো হয়েছে সেটা হলো এরাজ্য থেকে শিল্প বিদায়ের ভয়ঙ্কর ছবিটি। ২০১৯ সাল থেকে ২০২৪ পর্যন্ত গত পাঁচ বছরে ২২২৭টি সংস্থা এরাজ্যকে টা টা-বাই বা‍‌ই করে অন্য রাজ্যে চলে গেছে। এরাজ্যে নতুন শিল্প হয় না। কিন্তু চালু শিল্প রাজ্য ছেড়ে চলে যায়। অথচ ঘটা করে প্রতি বছর শিল্প উৎসব হয়। সেটা শিল্প সৃষ্টির উৎসব নয়, শিল্প ধ্বংসের উৎসব।

Comments :0

Login to leave a comment