Labour Code

শ্রমকোড চালু করতে দেবেন না শ্রমিকরা

সম্পাদকীয় বিভাগ

দেশ স্বাধীন হবার পর থেকে শ্রমিক আন্দোলনের চাপে বিভিন্ন সময় প্রায় চার ডজন শিল্প ও শ্রম সংক্রান্ত আইন তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে কিছু আইন ব্রিটিশ আমল থেকে চালু থাকলেও স্বাধীন ভারতে বিভিন্ন সময় এক বা একাধিক সং‍‌শোধনের মাধ্যমে শ্রমিকদের স্বার্থের পক্ষে আনার চেষ্টা হয়েছে। সবটাই সম্ভব হয়েছে সংগঠিত শ্রমিক আন্দোলনের ঐক্যবদ্ধ শক্তির কারণে। স্বাধীনতার পর প্রথম কয়েক দশক শ্রমিকদের লড়াইয়ের জেরে তাঁরা অনেক অধিকার অর্জন করেছেন। কাজের নিরাপত্তা, মজুরি বৃদ্ধি, ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার, মালিক পক্ষের সঙ্গে দাবিপত্র নিয়ে দরকষাকষির অধিকার, ধর্মঘটের অধিকার, সামাজিক ও অবসরকালীন নিরাপত্তা, কর্মস্থলে নিরাপত্তা ইত্যাদি নানা ধরনের অধিকার শ্রমিক অর্জন করেছিলেন তাঁদের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। পরবর্তীকালে বিশেষ করে উদারনীতি চালু হবার পর থেকে সরকারের ওপর, অর্থনীতির ওপর শিল্প-বাণিজ্য মহল তথা কর্পোরেট প্রভাব ক্রমাগত বেড়ে যাওয়া শ্রমিকদের অর্জিত অধিকারগুলি ছাঁটাই হতে শুরু করে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আইন সংশোধন না করেই আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে মালিকরা শ্রমিকদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করতে শুরু করে। সরকারও সেক্ষেত্রে আইনের পক্ষে দৃঢ়ভাবে না দাঁড়িয়ে পরোক্ষে মালিকদেরই পক্ষেই সায় দেয়। ফলে স্থায়ী চাকরির ব্যবস্থা ধাপে ধাপে উঠে যেতে থাকে। বেশিরভাগ কর্মীই নিয়োগ হয় ঠিকা বা চুক্তির ভিত্তিক সাময়িক কালের জন্য। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এইসব শ্রমিকরা ইএসআই, প্রভিডেন্ড ফান্ড, গ্র্যাচুইটি, পেনশনের সুবিধা থেকে বঞ্চিত। অর্থাৎ শ্রমখাতে ব্যয় সর্বনিম্ন করে শ্রমিকদের সর্বোচ্চ শোষণ করে মালিকের সর্বোচ্চ মুনাফাই বর্তমান ব্যবস্থার সার কথা। কার্যক্ষেত্রে অধিকার ছাঁটাই বাড়তে থাকলেও কাগজে কলমে অর্থাৎ আইন সংশোধন করে মালিকদের আইনি অধিকার দেওয়া সম্ভব হয়নি শ্রমিকদের দুর্বার আন্দোলনের ফলে। কিন্তু মোদী সরকার কোনও রাখঢাক না করে সরাসরি কর্পোরেট মুনাফার স্বার্থে দাঁড়িয়ে সমস্ত শ্রম আইন বাতিল করে চারটি শ্রম কোড তৈরি করে। এই শ্রমকোডগুলিতে ভালো ভালো কথার আড়ালে আসলে শ্রমিকদের অধিকারগুলি ছাঁটাই করা হয়েছে। দ্বিতীয় মোদী সরকার এই কোড তৈরি করলেও এখনো তা কার্যকর করা সম্ভব হয়নি। এখন তৃতীয় মোদী সরকার উঠেপড়ে লেগেছে সেটা চালু করতে। কর্পোরেটের তরফ থেকেও চাপ বাড়ছে সরকারের ওপর। প্রধানমন্ত্রী যেহেতু কর্পোরেটের প্রিয় বন্ধু তাই তার কাছে কর্পোরেটের স্বার্থই সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। তারজন্য শ্রমিকদের অধিকার হরণ করে নিঃস্ব করে দিতেও সরকার দু’বার ভাবতে রাজি নয়। ইতিমধ্যেই সরকারের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে নতুন বছরে চার শ্রমকোডই চালু করা হবে। মোদীর কর্পোরেট বন্ধুরা আর অপেক্ষা করতে রাজি নয়। অবশ্য শ্রমিক-কর্মচারীদের সংগঠনগুলিও জানিয়ে দিয়েছে যদি সরকার সেপথে পা বাড়ায় তাহলে তারাও দেশজুড়ে লাগাতার ধর্মঘটে যেতে বাধ্য হবেন। কৃষকরা যেমন দীর্ঘস্থায়ী নজিরবিহীন আন্দোলনে তিন কালা কৃষি আইন বাতিল করতে বাধ্য করেছিল, শ্রমিকরা এবার শ্রমকোড বাতিল করতে যতদূর যাওয়া দরকার ততদূর যাবার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
 

Comments :0

Login to leave a comment