Tea Gardens Close

শ্রমিকদের মজুরি বাকি, আচমকা বন্ধ আলিপুরদুয়ারের পাঁচ চা বাগান

রাজ্য

 

জয়ন্ত সহা ও শম্ভুচরণ নাথ: আলিপুরদুয়ার

দীপাবলিতে আলোর উৎসবে ভাসবে রাজ্য, শুধু অন্ধকারে পড়ে থাকবেন আলিপুরদুয়ারের বন্ধ চা বাগানের স্থায়ী এবং অস্থায়ী মিলিয়ে প্রায় ৯ হাজার চা শ্রমিক ও তাঁদের পরিজনরা। মালিকপক্ষ হঠাৎ করে বাগান বন্ধ করে দেওয়ায় আলোর উৎসবেও অন্ধকার কালচিনি সহ আলিপুরদুয়ারের ৫টি চা বাগানে। বাগানজুড়ে শ্রমিক মহল্লাগুলিতে এখন শুধু একটাই কথা, ‘‘ম্যানেজমেন্ট কা না-ইনসাফি আউর জুলুমবাজি রুখনা পড়েগা।’’
কালচিনি চা বাগানের ২০০৩ জন স্থায়ী শ্রমিকের দুই পক্ষের অর্থাৎ এক মাসের মজুরি না দিয়েই বাগানে সাসপেনশন অব ওয়ার্কের নোটিস ঝুলিয়ে দিয়ে বাগান কর্তৃপক্ষ বাগান ছেড়ে চলে গিয়েছে। শ্রমিক নেতা বিদ্যুৎ গুন বুধবার বলেন, শ্রম দপ্তরের সাথে ইউনিয়নের পক্ষ থেকে বাগান খোলার বিষয়ে কথা হয়েছিল। জয়েন্ট লেবার কমিশনার জানিয়েছেন, দীপাবলির আগেই ত্রিপাক্ষিক বৈঠক ডাকা হবে। তবে সেই বৈঠকে মালিকপক্ষের প্রতিনিধি থাকার সম্ভবনা কম বলেই জানিয়েছেন জয়েন্ট লেবার কমিশনার। বিদ্যুৎ গুন বলেন, ত্রিপাক্ষিক বৈঠকে মালিকের প্রতিনিধি না এলে সমাধানের সূত্র বের হবে না। তবুও শ্রমিকদের পক্ষ থেকে আমরা শ্রম দপ্তরের বৈঠকে উপস্থিত থেকে তাঁদের কথা বলবো।
চা বাগান শ্রমিক নেতা বিকাশ মোহালি বলেন, কালচিনি সহ পাঁচ বাগানে মালিক কাজ বন্ধ করে দিয়েছে। এর ফলে অন্তত ৬ হাজার স্থায়ী শ্রমিক ও ৩ হাজার অস্থায়ী শ্রমিক কাজ হারিয়েছেন। আচমকাই বাগান বন্ধের পিছনে শ্রমিক নেতা বিকাশ মোহালি অবশ্য মালিকদের সেই পুরানো নোংরা খেলাই দেখছেন। তিনি বলেন, নভেম্বর থেকে মার্চের প্রথম সপ্তাহ অবধি বাগানগুলিতে পাতা তোলার কাজ বন্ধ থাকে। তখন শুধু বাগান পরিচর্যার কাজ চলে। বাগান চালু থাকলে মালিকদের এই সময়ে ঘর থেকে মজুরি দিতে হয়। সেই মজুরি না দিতেই মালিকরা বাগান বন্ধ রাখছে। ফের মার্চ মাসে শ্রম দপ্তরের বৈঠকে এসে এরা বাগান খোলার প্রতিশ্রুতি দেবে। তিনি বলেন, বামফ্রন্ট সরকারের সময়ে শ্রম দপ্তর বাগান শ্রমিকদের স্বার্থ সুরক্ষিত রাখতে পদক্ষেপ নিত। এখন তার উলটো ঘটনা ঘটছে। প্রতারিত হচ্ছেন বাগান শ্রমিকরা।
এদিকে বন্ধ বাগানে ত্রাণের কোনও ব্যবস্থাই করেনি রাজ্য প্রশাসন। কালচিনি, দলসিংপাড়া, রায়মাটাং, রামঝোড়া, দলমোড় বাগানের শ্রমিকরা আশপাশের বাগানে অস্থায়ী শ্রমিকের কাজ খুঁজে নিচ্ছেন। কিন্তু বাগানে পাতা তোলা বন্ধ হলে ওই বাগানে আর কাজ মিলবে না। আশেপাশের গ্রামগুলিতে নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করে কেউ দিন গুজরানের চেষ্টা করছেন।
বাগান শ্রমিক দেবী খাড়িয়া-সূরজ খাড়িয়া বলেন, ‘‘বন্ধ বাগানে ফের অনাহার, অর্ধাহারের দিন আসতে চলেছে।’’ দেবী খাড়িয়া, সূরয খাড়িয়ার কথাটা বাস্তব সত্য। এখনই বন্ধ বাগানের শ্রমিকদের ভরসা আশপাশের ঝোপঝাড়ের থেকে তোলা শাক-পাতা ও চা গাছের ফুল। তাই দিয়েই পেট ভরাচ্ছেন শ্রমিকরা। রেশনের সামান্য চাল, আটায় পুরো মাস কারোরই চলে না। চা শ্রমিক অনিতা বারাইকের কথায়, ‘‘পরিবারে ৬ জন সদস্য। সকলেই আমার রোজগারের ওপর নির্ভরশীল। এখন রোজগার বন্ধ। না জুটছে খাবার, না জুটছে ছেলেমেয়ের লেখাপড়ার খরচ। এরকম চললে বাচ্চাদের লেখাপড়াও বন্ধ হয়ে যাবে।’’
বন্ধ বাগান খোলা নিয়ে অবশ্য তৃণমূল কিংবা বিজেপি’র কোনও হেলদোল নেই। চলছে দোষারোপের পালা। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জন বার্লা রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দেগে দায় সারছেন। অন্যদিকে, তৃণমুলের নেতারা বলছেন, শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটককে সমস্যা জানিয়েছি। আলিপুরদুয়ারের জেলা শাসক আর বিমলা বলছেন, জেলা প্রশাসন বন্ধ চা বাগানের শ্রমিকদের চাল ও ত্রাণ দেবের চেষ্টা করছি। বন্ধ পাঁচ চা বাগানের শ্রমিকরা বলছেন, ভুখা পেট আপ লোগাকা বাতো মে ভরোসা রাখতা নেই। বন্ধ বাগান খুলকে দেখাইয়ে।
 

Comments :0

Login to leave a comment