ভাঙড়ের কাশীপুর অঞ্চল থেকে তৃণমূল নেতা আরাবুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করল কলকাতা পুলিশ। পুলিশ সূত্রে খবর, তাকে লালবাজারে নিয়ে আসা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ভাঙড়ের কাশীপুর এলাকা থেকে তাকে খুনের মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়।
ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় আইএসএফ কর্মী মহিউদ্দিন মোল্লা খুনের মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করেছে কলকাতা পুলিশ। এমনটাই পুলিশের এক আধিকারিক এদিন জানিয়েছেন।
গত ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় ভাঙড়ে সিপিআই(এম), আইএসএফসহ বিরোধীদের মনোনয়ন পত্র জমা দিতে বাধা দেয় তৃণমূল। পরিকল্পিতভাবে ক্যানিং, জীবনতলা থেকে বহিরাগত সশস্ত্র দুস্কৃতীদের সংগঠিত করে ব্যাপক বোমা, গুলি চালানো হয়। গোটা এলাকায় সন্ত্রাসের পরিবেশ কায়েম করে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। মনোনয়ন পর্বর শুরু থেকে ভোট গণনা পর্যন্ত।
এমনকি ভাঙড়ের বিধায়ক নওসাদ সিদ্দিকীকে তাঁর বিধানসভা এলাকা ভাঙড়ে ঢুকতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ ওঠে পুলিশের বিরুদ্ধে। ভাঙড় জুড়ে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। সেই সময় নিউটাউনে নওসাদ সিদ্দিকীকে ভাঙড়ে ঢুকতে বাধা দেয় মমতা ব্যানার্জির পুলিশ।
তবে মহিউদ্দিন মোল্লা খুনের ঘটনার প্রায় ৮ মাস পর অভিযুক্ত আরাবুল ইসলামের গ্রেপ্তার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ভাঙড়ের বাসিন্দারা। লোকসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে খুনের ঘটনার এতোদিন পর তাজা নেতার গ্রেপ্তার প্রসঙ্গে স্থানীয় বাসিন্দারা বলেছেন, নির্বাচনের আগে পরিকল্পনা করেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যাতে ভোটের আগেই জামিনে ছাড়া পেয়ে বাইরে থাকতে পারে আরাবুল ইসলাম।
প্রসঙ্গত, ২০২৩’র পঞ্চায়েত নির্বাচনে আরাবুল ইসলাম, সওকত মোল্লার মত তৃণমূল নেতাদের নেতৃত্বে ভাঙড়ে গণতন্ত্রকে হত্যা করা হয়। ভাঙড়ের দুই ব্লক মিলিয়ে শতাধিক সিপিআই(এম) এবং আইএসএফ প্রার্থীকে মনোনয়ন জমা দিতে বাধা দেওয়া হয়। পরবর্তীকালে আলো নিভিয়ে গণনা কেন্দ্রের দখল নিয়ে জেলা পরিষদের গণনায় কারচুপি করে সওকত এবং আরাবুল বাহিনী। গায়ের জোরে হারিয়ে দেওয়া হয় আইএসএফ’র জেলা পরিষদ প্রার্থীকে। সেই ঘটনা ঘিরে প্রবল উত্তেজনা ছড়ায় ভাঙড়ে। পঞ্চায়েত নির্বাচনে ৫জন প্রাণ হারান ভাঙড়ে।
সম্প্রতি ভাঙড়ের থানাগুলিকে কলকাতা পুলিশের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। মহিউদ্দিন খুনের ঘটনায় গত ৬ ফেব্রুয়ারি বিজয়গঞ্জ বাজার থানায় মামলা রুজু করা হয়। কেস নম্বর ২৩/২৪। ভারতীয় দন্ডবিধির ১৪৭,১৪৮, ১৪৯, ১৮৮, ৩৩২, ৩৫৩, ৩০৭, ৪২৭, ৪৩৫, ৫০৪, ৫০৬, পিডিপিপি ধারার ৩,৪, অস্ত্র আইনের ২৫, ২৭ ধারা, ইএস আইনে ৩,৪ ধারা, এম পি ও আইনের ৯ নম্বর ধারা এবং ভারতীয় দন্ডবিধির ৩০২ ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে তৃণমূলের তাজা নেতা আরাবুল ইসলামের বিরুদ্ধে। বিজয়গঞ্জ বাজার থানার এই মামলায় উত্তর কাশীপুর থানার পুলিশ তাকে এদিন সন্ধ্যায় গ্রেপ্তার করেছে। এমনটাই জানিয়েছেন কলকাতা পুলিশের এক আধিকারিক।
আরাবুলের গ্রেপ্তারি প্রসঙ্গে আইএসএফ চেয়ারম্যান নওশাদ সিদ্দিকী বলেছেন, ‘‘আরাবুল ইসলামের মত ব্যক্তিরা গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে। আমাদের পার্টিকর্মীকে খুন করেছিল। তার বিচার চেয়ে আমরা কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করি। সেই মমলায় শুনানি শুরুর আগেই আরাবুল ইসলামকে পুলিশ গ্রেপ্তার করল। আদালতের ভর্ৎসনার মুখে পড়া এড়াতেই হয়ত আরাবুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়ে থাকতে পারে।’’
একইসঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, ‘‘ভাঙড়ে অশান্তির মূল হোতা হচ্ছেন ক্যানিং পূর্বের বিধায়ক শওকত মোল্লা। ভাঙড়ের সাধারণ মানুষের দাবি, অভিষেক ব্যানার্জির কাছের লোক শওকত মোল্লাকেও গ্রেপ্তার করতে হবে। এই দাবিতে আমরা আদালতের দ্বারস্থ হব।’’
সিপিআই(এম) নেতা তুষার ঘোষ সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘‘নির্বাচনের প্রায় ৩ মাস আগে পরিকল্পনামাফিক এই গ্রেপ্তার হয়েছে। যাতে মহিউদ্দিন মোল্লা খুনের মামলায় অভিযুক্ত নির্বাচনের সময় জামিনে বাইরে থাকতে পারে। নির্বাচনে আবার বাহিনী নিয়ে ঝাঁপাতে পারে। ফলে সবটাই সরকারের পরিকল্পনামাফিক গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।’’
Comments :0