CPI(M) RAJASTHAN

বিজেপি’র অমৃতকাল ধোঁকা, সাধারণের জন্য অমৃতকাল আনবে লাল ঝান্ডা: ইয়েচুরি

জাতীয়

CPIM rajasthan panchayat election TMC BJP

বিজেপি’র ‘অমৃতকাল’ ধোঁকা, সাধারণ জনতার জন্য প্রকৃত অমৃতকাল আনতে পারেন একমাত্র লাল ঝান্ডার প্রতিনিধিরাই। মঙ্গলবার রাজস্থানের সিকর জেলায় এক বিশাল নির্বাচনী জনসমাবেশে এই কথা বলেছেন সিপিআই (এম)’র সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। 

এদিন দাঁতারামগড় কেন্দ্রে সিপিআই (এম) প্রার্থী অমরা রামের সমর্থনে জনসভা ডাকা হয়েছিল দাঁতায়। সেখানে সীতারাম ইয়েচুরি ছাড়াও অমরা রাম এবং পার্টি নেতা পেমা রাম বক্তব্য রাখেন। এদিনই বিকানীর জেলার শ্রীডুঙ্গারপুর কেন্দ্রে বিশাল সমাবেশ শেষে মিছিল হয়। 

প্রত্যক্ষদর্শীদের কথায় মিছিল বললে কম বলা হয়, শহরের মধ্য দিয়ে যেন লাল ঝান্ডার মহাপ্লাবন বয়ে যায়। সোশাল মিডিয়াতেও ভাইরাল সেই মিছিলের ভিডিও। রাজস্থানের বিভিন্ন কেন্দ্রে যেখানে সিপিআই (এম) প্রার্থীরা রয়েছেন, প্রচারের ঝড় তুলেছে লাল ঝান্ডা। গত দুই তিন দিনে দাঁতারামগড়, ধোদ, সিকর, তারানগর, সাদুলপুর, শ্রীডুঙ্গরগড়, লান্ডনুতে বিশাল বিশাল জনসভায় বক্তব্য রেখেছেন, সীতারাম ইয়েচুরি ছাড়াও বৃন্দা কারাত, অশোক ধাওলে, সুভাষিণী আলি প্রমুখ। 

এদিন দাঁতারামগড়ের সমাবেশ থেকে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে তীব্র আক্রমণ করেন সীতারাম ইয়েচুরি। তিনি বলেন, বিজেপি সরকার বলছে দেশে অমৃতকাল চলছে। কিন্তু সেই অমৃত দুষ্ট এবং খারাপ লোকেদের হাতে চলে গেছে। তারফলে দেশের আমজনতা, কৃষক, শ্রমিক, ছাত্র-যুব, মহিলা, দলিত, সংখ্যালঘুদের পরিস্থিতি খারাপ থেকে আরও খারাপ হচ্ছে। এই সময়ে যদি সিপিআই (এম)’র লড়াকু, ইমানদার জনপ্রতিনিধি বিধানসভায় নির্বাচিত হয়ে গেলে, তিনি শুধু তাঁর বিধানসভা কেন্দ্রের জন্য নয়, সমগ্র রাজস্থানের সাধারণ মানুষের জীবন-জীবিকার বিষয় নিয়ে বিধানসভার ভেতরে বাইরে জনতার সঙ্গে মিলে লড়াই করবেন এবং কৃষক, মজদুর এবং আমজনতার জন্য প্রকৃত অমৃত আনার কাজ করবেন। 
 

ইয়েচুরি বলেন, শাসক শ্রেণির দলগুলির দুর্নীতিগ্রস্ত এবং বেইমান জনপ্রতিনিধিরা দেশ এবং রাজ্যের সম্পত্তি লুট করতে ব্যস্ত। আমাদের দেশের জনতার রক্ত-ঘামে তৈরি সার্বজনিক সম্পত্তি রেল, ব্যাঙ্ক, বিমা, এয়ারলাইন্স, স্কুল এবং হাসপাতাল ইত্যাদি হাজারো কোটির সম্পত্তি তাদের প্রভু কর্পোরেটকে জলের দরে বেচে দিচ্ছে। সীতারাম ইয়েচুরি বলেন, এই কারণেই রাজস্থানের জনতার কাছে আবেদন করছি সিপিআই (এম)’র লড়াকু এবং ইমানদার প্রতিনিধিদের নির্বাচিত করে বিধানসভায় পাঠান। যাতে শ্রমিক, কৃষক, সাধারণের কণ্ঠস্বর বিধানসভায় পৌঁছায়। 

তিনি বলেন, আমাদের দেশ এখন খুবই সঙ্কটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। এই অবস্থায় রাজস্থানের নির্বাচন শুধু এই রাজ্যের জন্য নয়, গোটা দেশের ক্ষেত্রেই অতি গুরুত্বপূর্ণ। আমার বিশ্বাস রাজস্থানের জনতা এইবারের নির্বাচনে সাম্প্রদায়িক, কর্পোরেট অনুগামী এবং জনবিরোধী নীতির রূপকারদের পরাস্ত করে সিপিআই (এম)–কে প্রকৃত প্রতিনিধি হিসাবে জোরালো এবং বিশ্বস্ত বিকল্প হিসাবে বিধানসভায় আরও বেশি সংখ্যায় পাঠাবেন। 

সমাবেশে সিপিআই (এম) রাজ্য সম্পাদক এবং দাঁতারামগড় কেন্দ্রের প্রার্থী অমরা রাম বলেন, এই কেন্দ্রে স্বাধীনতার পর থেকে ৮ বার কংগ্রেসের এবং ৫ বার বিজেপি’র বিধায়ক হয়েছেন। কিন্তু মানুষ এখনও পানীয় জলের জন্য হাহাকার করছে। তিনি বলেন, কেন্দ্রের জলশক্তি মন্ত্রী গজেন্দ্র সিংও এই অঞ্চলেই জন্মেছেন, কিন্তু পানীয় জলের ব্যবস্থা বিজেপিও করছে না। ২০০৮ সালে আপনারা আমাকে বিধায়ক নির্বাচিত করার পরে আমি কোটি টাকার প্রকল্প মঞ্জুর করিয়ে জলের সমস্যা দূর করার চেষ্টা করেছিলাম। পরপর একেবারে স্থানীয় সমস্যাগুলি তুলে ধরেন তিনি। 

অমরা রাম বলেন, এখন দাঁতা এবং পলসানা বড় এলাকা, কিন্তু কলেজ না থাকায় এখানের ছেলেমেয়েরা উচ্চশিক্ষা লাভ করতে পারছে না। তিনি দাঁতারামগড়ের জনতার স্বপ্নের সঙ্গে ছিনিমিনি যারা খেলেছে, তাঁদের শাস্তি দিতে বলেন এই নির্বাচনে। 

পাশের ধোদ কেন্দ্রের প্রাক্তন বিধায়ক পেমারাম সমাবেশে বলেন, আমাদের রাজ্যে তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ইন্দ্র মেঘওয়ালকে তথাকথিত উঁচু জাতের কলসী থেকে জল পান করায় মেরে ফেলা হয়েছে। তাই আমজনতা, দলিত, শোষিতদের প্রতিনিধি হিসাবে অমরা রামকে বিধানসভায় নির্বাচিত করে পাঠান। রাজ্যে কংগ্রেস সরকারের সময়ে নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের, কৃষকদের ঋণ মকুব না করা এবং দুর্নীতির যেসব অভিযোগ উঠেছে, তা নিয়ে সরব হন স্থানীয় পার্টিনেতারা। 

এদিনই বিকানীর জেলার শ্রীডুঙ্গারপুর কেন্দ্রে বিশাল নির্বাচনী জনসমাবেশ হয়। এখানে বর্তমান বিধায়ক গিরিধারীলাল মাহিয়াই এবারেও সিপিআই (এম) প্রার্থী। শ্রীডুঙ্গারপুর কেন্দ্রের সবথেকে বড় ময়দান দশেরা ময়দানে এদিন সমাবেশে ডাক দেওয়া হয়েছিল। সেই সমাবেশের জেরে কার্যত জনতার স্রোতে ভেসে যায় শ্রীডুঙ্গারপুর। সমাবেশে প্রধান বক্তা ছিলেন সিপিআই (এম) পলিট ব্যুরো সদস্য এবং সারা ভারত কিষান সভার সর্বভারতীয় সভাপতি অশোক ধাওয়ালে। মহিলা নেত্রী জগমতী সাঙ্গওয়ান, প্রার্থী গিরিধারী লাল মাহিয়া প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। সমাবেশ শেষে বিশাল মিছিল শ্রীডুঙ্গারপুর শহর পরিক্রমা করে। উত্তাল, উদ্দীপনাময় মিছিলের লালস্রোত যেন শহরের মানুষকে ভাসিয়ে নিয়ে যায়। 

Comments :0

Login to leave a comment