Economy

ধোঁয়াশায় অর্থনীতি

সম্পাদকীয় বিভাগ

খোদ অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন ও শিল্প-বাণিজ্য মন্ত্রী পীযূষ গোয়েল সহ সরকারের বিভিন্ন স্তর থেকে ক্রমাগত চাপ সৃষ্টি করা হলেও এবং শিল্প-বাণিজ্য মহল থেকে লাগাতার সওয়াল করা হলেও রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সুদের হার না কমিয়ে অপরিবর্তিত রাখার সিদ্ধান্তে অবিচল থাকল। অর্থাৎ রেপো রেট গত প্রায় দু’বছর ৬.৫ শতাংশে রেখে দেওয়া হয়েছে। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক স্পষ্ট করে দিয়েছে মূল্যবৃদ্ধির হারে লাগাম টানা না গেলে সুদের হার কমানো অত্যন্ত ঝুঁকির। তাতে বাজারে সস্তার নগদ জোগান বেড়ে গেলে মূল্যবৃদ্ধি আরও চওড়া হয়ে যাবার আশঙ্কা থাকে। তাই সরকার বা বণিক মহল থেকে সুদের হার কমানোর চাপ যতই বাড়ুক রিজার্ভ ব্যাঙ্ক কোনও মতেই ঝুঁকি নিতে চাইছে না। সুদের হার অপরিবর্তিত রাখলেও বাজারে যাতে নগদের জোগান বাড়ে তার জন্য সিআরআর (রিজার্ভ ব্যাঙ্কে ব্যাঙ্কগুলির বাধ্যতামূলক নগদ মজুতের অনুপাত) .৫ শতাংশ কমিয়ে ৪ শতাংশ করেছে। তেমনি চলতি অর্থবর্ষে অর্থনৈতিক বৃদ্ধির (জিডিপি) পূর্বাভাস আগের ৭.২ শতাংশ থে‍কে কমিয়ে ৬.৬ শতাংশ করেছে। পরবর্তী বৈঠকে সুদের হার কমানোর প্রত্যাশাকে ফিকে করে চলতি অর্থবর্ষে মূল্যবৃদ্ধির পূর্বাভাস বর্তমান ৪.৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৪.৮ শতাংশ করেছে।
অক্টোবরে গত বৈঠকেও সুদের হার বৃদ্ধির দাবি জোরদার ছিল। কিন্তু রিজার্ভ ব্যাঙ্ক তাতে সায় দেয় মূল্যবৃদ্ধি থিতু না হওয়ায়। তখন মূল্যবৃদ্ধির হার ছিল ৪ শতাংশের বেশি। ভাবা হয়েছিল মূল্যবৃদ্ধির হার অক্টোবরে কমবে। তখন ডিসেম্বরের বৈঠকের সুদের হার কমানোর বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে ভাবা হবে। কিন্তু বাস্তবে অক্টোবরে মূল্যবৃদ্ধির হার অনেকটা বেড়ে ৬.২ শতাংশ হয়েছে। এটা সর্বোচ্চ সহনশীলতার থেকেও বেশি। ফলে সুদের হার বাড়ানোর কোনও রাস্তা রিজার্ভ ব্যাঙ্কের হাতে খোলা ছিল না।
উচ্চ মূল্যবৃদ্ধি সত্ত্বেও সরকার ও বণিক মহল থেকে সুদের হার কমানোর চাপ প্রবল করা হয়েছিল জুলাই-সেপ্টম্বর ত্রৈমাসিকে জিডিপি বৃদ্ধির হার উদ্বেগজনকভাবে কমে ৫.৪ শতাংশ হয়ে যাওয়ায়। স্বাভাবিকভাবেই মাথায় হাত পড়ে মোদী সরকারের। মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণের চরম ব্যর্থতাকে আড়াল করে শিল্পমহলের স্বার্থে সরকার সুদের হার কমানোর জন্য ছেলেমানুষী চাপাচাপি শুরু করে। কিন্তু রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সেই চাপের কাছে এযাত্রায়ও মাথা নোয়ায়নি। এতে রিজার্ভ ব্যাঙ্ককে আত্মসমর্পণ করতে হতে পারে।
ভারতীয় বাস্তবতায় মূল্যবৃদ্ধির সহনশীলতার সীমা সর্বনিম্ন ২ শতাংশ এবং সর্বোচ্চ ৬ শতাংশ। অর্থনীতির মসৃণ বিকাশের স্বার্থে মূল্যবৃদ্ধির হার ৪ শতাংশের আশপাশে স্থির রাখা বাঞ্ছনীয়। সেই দায় মূলত সরকারের। সরকার ব্যর্থ হলেও কঠোর হতে হয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ককে। উচ্চ মূল্যবৃদ্ধির মধ্যে সুদের হার কমালে বাজারে সস্তার নগদ জোগান বাড়বে এবং তাতে মূল্যবৃদ্ধি আরও চওড়া হবে। টানা উচ্চমূল্যবৃদ্ধি মানুষের ক্রয় ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। বাজারে পণ্যের চাহিদা কমে যায়। তাতে ভোগ ব্যয়ের পাশাপাশি কমে বিনিয়োগ। শেষ বিচারে তাতে অর্থনীতি বৃদ্ধির বদলে সঙ্কুচিত হতে থাকে।

Comments :0

Login to leave a comment