প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ঘনিষ্ঠ বন্ধু আদানি এবং অন্যদের বিপুল মুনাফার মাধ্যমে সম্পদ তাক লাগানো হারে বেড়ে চললেও ভারতের অর্থনীতির শ্লথ গতি আটকানো যাচ্ছে না। মোদীরা দেশের অর্থনীতি নিয়ে যতই আকাশ-কুসুম গল্প ফাঁদুক না কেন, বৃদ্ধির হারের অধোগতি ঠেকানো যাচ্ছে না। বিশ্বের সর্বাধিক উচ্চ হারে বৃদ্ধির অর্থনীতি, বিনিয়োগের সেরা গন্তব্য ইত্যাদি মন ভোলানো ভাষণেও চিড়ে ভিজছে না। জাতীয় পরিসংখ্যান অফিসের প্রকাশ করা তথ্য জানান দিচ্ছে অর্থনীতির হাল মোটেই ভালো নেই। ত্রৈমাসিক বৃদ্ধির হারের বিচারে গত দু’বছরের মধ্যে এখন সবচেয়ে কমে ঠেকেছে। সদ্য প্রকাশিত সরকারি তথ্য অনুযায়ী চলতি অর্থবর্ষের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর’২৪) বৃদ্ধির হার কমতে কমতে ৫.৪ শতাংশে এসে ঠেকেছে। যদিও সরকার ও রিজার্ভ ব্যাঙ্ক আশা করে বসেছিল বৃদ্ধি হবে ৭ শতাংশ। গত অর্থবর্ষের তৃতীয় ত্রৈমাসিকে (অক্টোবর’২৩-ডিসেম্বর’২৩) বৃদ্ধির হার ছিল ৮.৬ শতাংশ। তারপর থেকে ধারাবাহিক কমছে। আগের ত্রৈমাসিক (এপ্রিল-জুন) বৃদ্ধির হার প্রত্যাশা থেকে অনেক কমে যখন ৬.৭ শতাংশ হয় তখন বলা হয়েছিল লোকসভা ভোট থাকার ফলে সরকারি থমকে যায়। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ঝিমিয়ে পড়ে। তবে আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে। নতুন গতি সঞ্চারিত হবে। উৎসবের মরশুমে বাজারে চাহিদা বেড়ে বৃদ্ধির হার বাড়িয়ে দেবে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে বৃদ্ধির হার আরও কমেছে। অর্থাৎ উৎসবের প্রভাব পড়েনি। মানুষের কেনার উৎসাহ বাড়েনি। এই প্রবণতা যদি বজায় থাকে তাহলে তৃতীয় ত্রৈমাসিকেও বৃদ্ধির হার সুখকর হবে বলে মনে হয় না।
সরকারি তথ্য থেকে দেখা যাচ্ছে খনি উৎপাদন হ্রাস পেয়েছে। কারখানায় উৎপাদন তলানিতে। বোঝাই যাচ্ছে বাজারে পণ্যের চাহিদা নেই। করোনার পর ক্রয় মানসিকতা বাড়লেও ফের তা কমতে শুরু করেছে। মানুষ কিনতে চাইছে না। পাশাপাশি মূল্যবৃদ্ধি কিন্তু নিয়ন্ত্রণে নেই দীর্ঘদিন ধরে। উচ্চমূল্যের কারণেও মানুষ জিনিস কিনছে না। করোনার পর মানুষ কেনায় উৎসাহ দেখালেও জোগান পর্যাপ্ত ছিল না তাই মূল্যবৃদ্ধি ছিল উচ্চ। এখন জোগান বাড়লেও মূল্য কিন্তু কমছে না। ফলে মানুষ কেনার আগ্রহ দেখাচ্ছে না। উচ্চ মূল্যবৃদ্ধির জন্য সুদের হার কমানোর ঝুঁকি নিচ্ছে না রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। ফলে সাঁড়াশি সঙ্কটে অর্থনীতি। বৃদ্ধির হার কমছে। আবার মূল্যবৃদ্ধির হারও বেশি। অর্থনীতির ভাষায় এটা স্ট্যাগফ্লেশন বা মন্দাস্ফীতি। এই চক্করে পড়ে বিনিয়োগ হচ্ছে। বেসরকারি বিনিয়োগ তো বহুদিন ধরে বন্ধ। সরকারি বিনিয়োগের জেরে ধুঁকতে ধুঁকতে চলছে। আসলে কর্মসংস্থান যদি না বাড়ে বেকাররা যদি কাজ না পায়, মানুষের আয় যদি না বাড়ে তাহলে ক্রয় ক্ষমতা বাড়ার সুযোগ নেই। এই অবস্থায় অর্থনীতির শঙ্কা কিন্তু বাড়ছে। হিন্দুত্ব দিয়ে তাকে বেশিদিন আড়াল করা যাবে না।
Editorial
অর্থনীতি ধুঁকছে
×
Comments :0