editorial festival electricity

প্রতারক

রাজ্য সম্পাদকীয় বিভাগ

পুজা মণ্ডপে বিদ্যুতে ঢালাও ছাড় দিয়ে পুজা উদ্যোক্তাদের খুশি করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। বেসরকারি সংস্থা সিইএসসি এবং সরকারি সংস্থা বিদ্যুৎ বণ্টন কোং যথাক্রমে ৫ হাজার ও  ৪৪ হাজার পুজা কমিটিকে ছাড় দিয়ে কার্যত বিনামূল্যে বিদ্যুৎ দিচ্ছে। এরজন্য দুই সংস্থার বেশ কয়েক শত কোটি টাকা লোকসান হবে। এমনটা ভাবার কারণ নেই সংস্থা দুটি তাদের নিজেদের ভাঁড়ার থেকে এই বিপুল টাকা পূজা কমিটিগুলিকে দান করছে। এটাও ভাবার কারণ নেই যে এই ঘাটতি বা লোকসানের টাকার জোগান আসবে কালীঘাটের টালির চালা থেকে বা ভাইপোর রাজপ্রাসাদ থেকে। তবে এবিষয়ে একশোভাগ নিশ্চিত থাকা যায় যে লাগে টাকা দেবে গৌরি সেনের মতো এই বিপুল টাকারও জোগান আসবে জনগণের পকেট কেটে। ইতিমধ্যে সেই প্রক্রিয়াও শুরু হয়ে গেছে।

রান্নার গ্যাস সহ পেট্রোপণ্যের উপর এই রাজ্যের শুল্ক অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় যেমন বেশি তেমনি বিদ্যুৎ গ্রাহকদের কাছ থেকে ইউনিট পিছু মূল্য আদায়ও হয় এই রাজ্যে অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় বেশি। ভোট রাজনীতিতে মমতা ব্যানার্জির চোখে রাজ্যের সংখ্যালঘুরা যেমন দুধেল গাই তেমনি রাজ্যের সাধারণ মানুকেও তাঁর সরকার দুধেল গাই হিসাবে গণ্য করে। তাই সরকারের যাবতীয় অপব্যয়ের বোঝা শেষ পর্যন্ত চাপে সেই সাধারণ মানুষেরই ঘাড়ে। এক্ষেত্রেও তার অন্যথা হয়নি। পূজা কমিটিগুলিকে বিদ্যুতে ছাড় দিতে গিয়ে সরকারি ভাঁড়ার থেকে যে বিপুল টাকা বেরিয়ে যাচ্ছে সেটা পেছনের দরজা দিয়ে তুলে নেওয়া হবে সর্বস্তরের বিদ্যুৎ গ্রাহকদের কাছ থেকে। বিশেষ করে কৃষক, ক্ষুদ্র শিল্প, গার্হস্থ ও বাণিজ্যিক গ্রাহকরাই সেই ঘাটতির দায় বইবেন। তেমন ব্যবস্থাই করেছে মমতা ব্যানার্জির সরকার।

২০২৩-২৪ সালের বিদ্যুৎ মাশুল লাগু করে শুধু পূজা মণ্ডপের বিদ্যুতের দাম তোলা হবে না, সরকারের ভাঁড়ারেও জমা হবে বিপুল অর্থ। বাংলার কৃষকদের কোনোদিন ন্যূনতম চার্জ দিতে হতো না। এখন থেকে তাদের সকলকে ন্যূনতম ৭৫ টাকা দিতে হবে। ক্ষুদ্র শিল্পক্ষেত্রেও উদ্যোগীদের ন্যূনতম চার্জ দিতে হতো না। এখন তাদের প্রতি মাসে ২০০ টাকা করে দিতে হচ্ছে। এই মাসিক ন্যূনতম চার্জ গার্হস্থ গ্রাহকদের আগের ২৮ টাকা থেকে এক লাফে ৭৫ টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। বাণিজ্যিক গ্রাহকদের ক্ষেত্রে সেটা ৪০ টাকা থেকে ১৫০ টাকা। ন্যূনতম চার্জের পাশাপাশি বাড়ানো হয়েছে মাসিক ফিক্সড চার্জও। গার্হস্থ গ্রাহকদের ক্ষেত্রে ১৫ টাকা থেকে ৩০ টাকা হয়েছে। বাণিজ্যিক গ্রাহকদের জন্য ৩০ টাকা থেকে ৬০ টাকা। শিল্প গ্রাহকদের ৭৫ টাকা থেকে ১৫০ টাকা। বিদ্যুৎ সংযোগ কাটা ও নতুন লাগানোর চার্জ আগে ছিল ১০০ টাকা। এখন বেড়ে হয়েছে ৫০০ টাকা। ইউনিট প্রতি বিদ্যুৎ শুল্ক এ যাত্রায় বাড়েনি ঠিকই অন্যান্য খাতে ঘুরপথে অনেক বেশি আদায়ের বন্দোবস্ত করা হয়েছে। মানুষকে উৎসবের আনন্দে মজিয়ে রেখে গোপনে পকেট কাটার ব্যবস্থা করা হয়েছে সুচতুরভাবে। এটা প্রতারণা ছাড়া আর কিছুই নয়।

Comments :0

Login to leave a comment