Editorial

এ কেমন বিচারপতি

সম্পাদকীয় বিভাগ

ধর্ম‍‌নিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক ভারতের উচ্চ আদালতের এক বিচারপতি একটি হিন্দুত্ববাদী‍‌ উগ্র সাম্প্রদায়িক সংগঠন আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রকা‍‌শ্যে দেশের সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষমূলক ঘৃণ্য ভাষণ দিয়ে আপন গৌরবে অহংবোধ করছেন, সংশ্লিষ্ট ও অপরাপর হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের নেতা-সমর্থকরা তার জন্য ধন্য ধন্য করছেন। আর দেশের সরকারের এবং শাসক দলের নেতারা মুখে কুলুপ এঁটে বসে আছেন। নতুন করে বুঝিয়ে দিতে চাইছেন নীরবতাই তাদের সমর্থনের প্রচ্ছন্ন বার্তা। অবশ্য আরএসএস’র ছত্রছায়ায়  পুষ্ট ও উজ্জীবিত সংগঠনগুলির রাখঢাকের তেমন বালাই নেই। তারা বেশ জোরের সঙ্গেই বিচারপতির পক্ষ নিয়েছে। এরপরও বলতে হবে বর্তমান শাসক দল এবং তাদের ঘিরে আগাছার মতো বেড়ে ওঠা সংগঠনগুলির সংবিধানের প্রতি কোনও শ্রদ্ধা আছে? দেশের বহুত্ববাদী সংস্কৃতি-সমাজের নিবিড় বন্ধন সংবিধানের মর্মবস্তু হয়ে উঠেছে তাকে রক্ষা করার, বিকশিত করার দায় তারা অনুভব করে?
যেখানে একজন বিচারপতি সংবিধানকে সামনে রেখে শপথ নিয়ে বিচারকের আসনে বসেন, সংবিধানের মৌল ভিত্তি ও মর্মবস্তুকে রক্ষা করার অঙ্গীকার সেখানে সেই বিচারক যদি বিচারবিভাগীয় নিরপেক্ষতাকে জলাঞ্জলি দিয়ে সংবিধানের মূল্যবোধকে লঙ্ঘন করেন তখন সেই বিচারকের বিচারাসনে বসার কোনও অধিকার থাকে কি? তিনি কি নিরপেক্ষ অবস্থান থেকে সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষ মূল্যবোধকে উর্ধ্বে তুলে ধরবেন নাকি আদালতকে ও আদালতের বাইরের পরিসরকে মুসলিম বিদ্বেষ ছড়িয়ে হিন্দুত্ববাদীদের আখড়া বানাবেন? ভারতের বিচার ব্যবস্থায় কি এহেন বিচারকের কোনও ঠাঁই হতে পারে?
বিচারক হিসাবে তাঁর অধিষ্ঠান যেখানেই হোক, তিনি ব্যক্তিগতভাবে মনে প্রাণে যে রাজনৈতিক মতাদর্শের লোকই হোন, তিনি কোনও অবস্থাতেই ধর্মনিরপেক্ষ ভারতের কোনও সাম্প্রদায়িক সংগঠনের সভায় গিয়ে মুসলিম বিদ্বেষ ছড়িয়ে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের প্রচারে অংশীদার হতে পারেন না। প্রকাশ্য সভায় ভাষণ দিতে গিয়ে বিচারপতি যেভাবে যা যা বলেছেন, সেটা বোধ হয় কোনও আগ মার্কা হিন্দুত্ববাদীও গুছিয়ে বলতে পারবে না।
এই অবস্থায় ধর্মনিরপেক্ষ বিচার ব্যবস্থার মর্যাদা রক্ষায়, বিচার ব্যবস্থার উপর ভারতীয় জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস রক্ষায় সর্বোচ্চ আদালতের এখনই হস্তক্ষেপ জরুরি। পাশাপাশি নীতি নির্ধারণের সর্বোচ্চ মঞ্চ দে‍‌শের আইন সভার উচিত সব দিক বিবেচনা করে বিশ্বের দরবারে ভারতের বিচার ব্যবস্থার সুনাম ও গৌরব রক্ষায় কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া। বিরোধীরা ইতিমধ্যে সেই বিচারপতির ইমপিচমেন্টের ব্যাপারে সক্রিয় উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। সরকার যখন এহেন বিচারপতির সম্পর্কে নীরব থাকে তখন বিরোধীদের দায় সংবিধান ও বিচার ব্যবস্থাকে কলঙ্কিত হওয়া থেকে রক্ষা করা।

Comments :0

Login to leave a comment