Editorial

আপাত স্বস্তি

সম্পাদকীয় বিভাগ

অন্তর্বর্তীকালীন হলেও দে‍‌শের কোনও মসজিদ-মাজারের নিচে কোনও এক সময় মন্দির ছিল বলে হিড়িক তুলে নিম্ন আদালতের নির্দেশে সমীক্ষা নিষিদ্ধ করার সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অত্যন্ত তাৎপর্যবাহী। হিন্দুত্ববাদী আরএসএস’র ছত্রছায়ায় গড়ে ওঠা বেশ কিছু সংগঠন ও ব্যক্তি দেশজুড়ে সাম্প্রদায়িক অশান্তির আগুন জ্বালাতে জ্ঞানবাপী শাহী ইদগা, আজমের শরিফ সহ অন্তত ১১টি মুসলিম উপাসনাস্থলের নিচে কোনও না কোনও মন্দির ছিল বলে জিগির তুলে অন্তত ১৮টি মামলা দায়ের করেছে বিভিন্ন নিম্ন আদালতে। তার বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট নিম্ন আদালত চটজলদি সমীক্ষার নির্দেশও দিয়ে দিয়েছে। আর তাকে ঘিরেই জ্বলছে অশান্তির আগুন। সম্ভলে তো অশান্তির জেরে পাঁচ জনের মৃত্যুও হয়েছে। আরএসএস’র মদতে তাদের বিভিন্ন সংগঠন নতুন নতুন দাবি তুলে মসজিদ-মাজারকে টার্গেট করে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ও সংঘাত তৈরি করছে। লক্ষ্য ধর্মীয় ও সাম্প্রদায়িক মেরুকরণ করে ধর্মের ভিত্তিতে বিজেপি’র পক্ষে হিন্দু ভোট সংগঠিত করা। এক্ষত্রে সবচেয়ে জঘন্য ও নিকৃষ্টতম নজির বাবরি মসজিদ ভেঙে রাম মন্দির বানানো। বাবরি মসজিদ, রামমন্দিরের ঘটনা ধর্মনিরপেক্ষ ভারতের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ঐতিহ্যের ভিতটাকেই নড়বড়ে করে দিয়েছিল। আর এই কাজটি যার হাত ধরে সম্ভব হয়েছিল সুপ্রিম কোর্টের সেই প্রধান বিচারপতি অবসর নেবার পরই পুরষ্কার হিসাবে মোদী সরকারের কাছ থেকে পেয়েছিলেন সাংসদ পদ। কোনোরকম প্রমাণ ছাড়া শুধুমাত্র যুক্তিহীন ধর্মীয় বিশ্বাসের উপর ভর করে সেদিন বাবরি মসজিদের জমি রামমন্দিরকে হস্তান্তরের নির্দেশ সুপ্রিম কোর্টের যে বেঞ্চ দিয়েছিল তার অন্যতম সদস্য ছিলেন সদ্য প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড়। এই চন্দ্রচূড়ই প্রধান বিচারপতি হয়ে জ্ঞানবাপী মসজিদের সমীক্ষার জন্য নিম্ন আদালত ও উচ্চ আদালতের নির্দেশের ওপর স্থগিতাদেশ দেননি। বরং মসজিদের একাংশে হিন্দুদের পূজার অনুমতি দিয়েছিলেন। প্যান্ডোরার বাক্স খুলে দিয়েছিলেন চন্দ্রচূড়ই। বাবরি মসজিদ মামলার রায়েও স্পষ্ট উল্লেখ ছিল ভবিষ্যতে এধরনের কোনও মামলায় অযোধ্যা রায়কে নজির হিসাবে দেখানো যাবে না। উপাসনাস্থল আইনেও পরিষ্কার করে দেওয়া হয়েছে ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট দে‍‌শের যেখানে যত উপাসনাস্থল ছিল তার কোনোটিরই চরিত্র বদল করা যাবে না। অর্থাৎ এক ধর্মীয়দের থেকে অন্যদের দেওয়া যাবে না। সেই আইনেও স্পষ্ট ছিল একমাত্র অযোধ্যা এই আইনের আওতার বাইরে থাকবে।
অর্থাৎ উপাসনাস্থল আইন এবং অযোধ্যা রায় অনুযায়ী দেশে আর কোনও মসজিদ-দরগা নিয়ে বিতর্ক তোলা যাবে না। আদালতে এমন কোনও মামলায় সমীক্ষার নির্দেশ তো দূরের কথা, মামলা গ্রাহ্য হবার কথা নয়। অথচ নিম্ন আদালতের কিছু কিছু বিচারপতি দেশের আইন ও সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষ মূল্যবোধকে জলাঞ্জলি দিয়ে মামলা গ্রহণ করছেন এবং সমীক্ষার নির্দেশ দিচ্ছেন। এমন এক ভয়ঙ্কর প্রবণতা জোরদার হয়েছে প্রধানবিচারপতি চন্দ্রচূড়ের ভূমিকায়। বিপুল উদ্যমে আরএসএস হইহই করে নেমে পড়ে নতুন নতুন মসজিদ নিয়ে গোলমালে। শেষ পর্যন্ত বর্তমান প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্নার নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ সেই আত্মঘাতী অভিযানের রাশ টেনে দিয়েছেন। দেশবাসীর প্রত্যাশা সর্বোচ্চ আদালত চিরকালের জন্য এমন অসভ্যতা বন্ধ করার ব্যবস্থা করবে।

Comments :0

Login to leave a comment