দেবদূত ঘোষ
আমার খুব ইচ্ছে ছিল কোচবিহার থেকেই হাঁটবো যৌবনের এই মিছিলে। কাজের চাপে হয়ে ওঠেনি, কিন্তু মুর্শিদাবাদ, নদীয়ায় পথ চলতে গিয়ে দেখেছি আলু চাষের কি অবর্ণনীয় অবস্থা। অনেক আলুচাষি আত্মহত্যা করেছেন। যাঁরা আবার চাষ করার নতুন আশায় বুক বাঁধছেন, সেই কৃষক, খেতমজুররা খেত থেকে উঠে এসে ‘ইনসাফ’ যাত্রীদের সংবর্ধিত করছেন, চোখের জল বাঁধ মানছে না, আসছেন, নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলে ‘ইনসাফ’ চাইছেন সরকারের কাছে। এ শুধু হেঁটে যাওয়া নয়, হাঁটতে হাঁটতে মানুষের সঙ্গে কথা বলা। অনেক সময় দেখেছি কারখানা থেকে বেরিয়ে এসে শ্রমিকরা কথা বলছেন, জানাচ্ছেন তাঁদের অভাব অভিযোগ। ১০০ দিনের কর্মীরা আসছেন তাঁরাও জানাচ্ছেন তাঁদের কাজ বন্ধের কথা। টাকা না পাওয়া। তাঁরা ‘ইনসাফ’ চাইছেন। শুধুতো রাস্তায় হাঁটা নয়, তার আশপাশের মানুষ, অলিগলির মানুষ, তাঁরাও আসছেন, জানাচ্ছেন তাঁদের কথা। এতো শুধু মিছিল নয়, এ এক সুদূর প্রসারী ছাপ ফেলে দেওয়া। মানুষ মানে সাধারণ মানুষের বেঁচে থাকাটা এখন একটা চ্যালেঞ্জের মুখে এসে দাঁড়িয়েছে মোদী সরকার বা এরাজ্যে ‘দিদি’র সরকারের আমলে। তাঁরা বেঁচে থাকার ন্যূনতম জিনিসগুলো পাচ্ছেন না, ঢাকঢোল পিটিয়ে চালু হওয়া লক্ষীর ভান্ডার বা অন্য সুযোগ সুবিধাগুলো তাঁরা পাচ্ছেন না। বিদ্যুৎ মাশুল, গ্যাসের দাম, দৈনন্দিন বাজার করতে পারছেন না মানুষ। এই ডোল রাজনীতির বাইরে গিয়ে তাঁরা একটা সম্মানজনক জীবনযাপন করতে চাইছেন। কাজ করে রোজগার করতে চাইছেন, এই পকেটে কিছু টাকা দিয়ে দিল এটা তাঁরা মোটেও চাইছেন না। ছাত্র, যুব মানে সদ্য পড়াশোনা শেষ করা তাঁরাও পা মিলিয়েছেন যৌবনের এই মিছিলে। টেট পাশ করা ছেলেমেয়েরা ধর্মতলায় চা বিক্রি করছেন, চপ ভাজছেন। এ জীবন কি তাঁরা চেয়েছিলেন? তাঁরা তো শিক্ষকতা করে সমাজকে আরও উন্নত করতে চেয়েছিলেন। প্রচুর সিভিক পুলিশ নেওয়া হয়েছে, কিন্তু তাঁদের কোন বিশেষ ট্রেনিং নেই। তাঁদের স্থায়ী নিয়োগ তো দূর অস্ত। সরকারি নিয়োগ বন্ধ। সরকার চালাতে গেলে যে পারদর্শিতা লাগে সেটাই এই রাজ্য সরকারের নেই। ফলে ব্যাহত হচ্ছে সমাজ জীবন। তারই ক্ষোভ বারে বারে আছড়ে পড়ছে মানুষের মনে। যেখানে থেমেছি, সেখানেই মানুষ এসে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন। এক আশ্চর্য ব্যাপার লক্ষ্য করেছি, কি গ্রাম কি শহর, ১৯ থেকে ৩০ বছরের ছাত্র বা যুব, তারা সবাই রাজ্যের বাইরে বা দেশের বাইরে চলে গেছে। কেউ পড়তে আবার কেউ বা চাকরি করতে। কারণ সবাই বুঝতে পারছেন এখানে কিছু নেই। মানুষ কি করবেন তার দিশা খুঁজছেন। ২০১১ সালের আগে শিল্পের বিচারে আমরা তৃতীয় স্থানে ছিলাম বর্তমানে এরাজ্যের স্থান ত্রয়োদশতম। কোষাগার থেকে মেলা খেলা পুজো পাঠে সম্পদ বিলানো হচ্ছে কিন্তু সম্পদ আহরণ করা যাচ্ছে না। সোশাল মিডিয়া বা অন্য সব দৃশ্য মাধ্যমে শৌচাগার উদ্বোধনের ছবি দেখা যায়, কোনও নতুন শিল্পের উদ্বোধন হচ্ছে এমন ছবি দেখা যায় না। এটাইতো বড় ব্যর্থতা। এতো দিশাহীন রাজনীতি। আমাদের এখন দুই সরকারই পরিবর্তন করতেই হবে। ভোট রক্ষা করে, ব্যালট বাক্স পুকুরে না ফেলতে দিয়ে, আগুনে পুড়িয়ে দিতে না দিয়ে এই অবস্থার পরিবর্তন আনতেই হবে। এটা চলতে পারে না। তার প্রত্যক্ষ প্রমাণ মিলেছে এই ‘ইনসাফ যাত্রা’য়। মিছিল শুরুর পর থেকে ক্রমশ মিছিলের দৈর্ঘ্য বেড়েছে, আরও বেশি বেশি মানুষ এসে যোগ দিয়েছেন যৌবনের এই মিছিলে। তাই আশা রাখি পরের বার জনপ্রতিনিধি নির্বাচনে আরও সচেতন, বিচক্ষণ হবেন মানুষ। এই লড়াই চলবে যতক্ষণ না কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের শোষণের প্রক্রিয়া বন্ধ করা যাচ্ছে। দেখেছি রাস্তার দু’ধারের সাধারণ মানুষ ইনসাফ যাত্রীদের কাছে আবেদন জানাচ্ছেন,আমাদের এখন দুই সরকারই পরিবর্তন করতে হবে। কিন্তু রাজ্যের তথাকথিত বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবীদের শীতঘুমের মধ্যে
Comments :0