RUSSIA UKRAINE CONFLICT

গোপন আর গোপন নেই

সম্পাদকীয় বিভাগ

russiausa ukraine nato bengali news

সাম্রাজ্যবাদী আমেরিকা তাদের ক্রমহ্রাসমান বিশ্ব আধিপত্য বজায় রাখতে কতোটা মরীয়া তা আর একবার দুনিয়ার সামনে উন্মুক্ত হয়ে গেছে তাদের সামরিক-স্ট্র্যাটেজিক  গোপন তথ্য ফাঁস হয়ে যাবার ফলে। 

ফেব্রুয়ারি শেষ থেকে মার্চের গোড়া পর্যন্ত সিআইএ-সহ অন্তত পাঁচটি গুপ্তচর সংস্থার সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে পেন্টাগন সহ শীর্ষ স্তরে কর্তাব্যক্তিদের জন্য তৈরি গোপন রিপোর্ট সম্প্রতি ফাঁস হয়ে গেছে সোশাল মিডিয়ায়। অন্তত ১০০ পাতার এই গোপন রিপোর্ট থেকে পরিষ্কার ইউক্রেন যুদ্ধটা আসলে ইউক্রেনের সঙ্গে রাশিয়ার হচ্ছে না, হচ্ছে আমেরিকার সঙ্গে রাশিয়ার।

আর এই যুদ্ধকে সামনে রেখে আমেরিকা গোটা ইউরোপকে আমেরিকার পেছনে ঐক্যবদ্ধভাবে দাঁড় করাতে চাইছে। চাইছে  অন্যান্য মার্কিন সহযোগী দেশগুলিকেও ইউক্রেনকে অস্ত্র ও অন্যান্য উপকরণ সরবরাহে আমেরিকার সহযোগী হতে।


ফাঁস হওয়া রিপোর্ট থেকে পরিষ্কার মার্কিন গুপ্তচর বাহিনী শুধু রাশিয়ার সামরিক অন্দরমহলে ঢুকে যুদ্ধ কৌশলের তথ্য সংগ্রহ করছে না, গুপ্তচরবৃত্তি চালাচ্ছে ইউক্রেন, এমনকি সহযোগী‍‌ দেশগুলিতেও। গুপ্তচর লাগিয়ে কবে, কখন, কোথায় কি ধরনের আক্রমণের পরিকল্পনা রাশিয়া করছে তার আগাম খবর আমেরিকা পাঠিয়ে দিচ্ছে ইউক্রেনকে যাতে তারা রুশ আক্রমণের মোকাবিলায় আগাম প্রস্তুতি নিতে পারে। তেমনি  ইউক্রেনের প্রকৃত অবস্থা যাচাইয়েও সেখানে গুপ্তচর লাগিয়েছে আমেরিকা। 

ইউক্রেনের সরকারি রি‍‌পোর্টে আমেরিকার আস্থা নেই। সেই গোপন তথ্য থেকেই স্পষ্ট ইউক্রেনের প্রতিরোধ ক্ষমতা কার্যত ভেঙে পড়ার মুখে। ইউক্রেনের সামরিক পরিকাঠামো এবং যুদ্ধাস্ত্র মূলত সোভিয়েত জমানার। তাদের মজুত ভাণ্ডার প্রায় নিঃশেষিত। এখন আমেরিকা ও ইউরোপের দেশগুলির পাঠানো অস্ত্র ও গোলাবারুদই তাদের একমাত্র ভরসা। নেটো ভুক্ত দেশগুলির  অস্ত্র ব্যবহারে ইউক্রেনের সেনাবাহিনী অভ্যস্ত নয়। 

তাই বিভিন্ন দেশ থেকে ট্যাঙ্ক, ড্রোন, ক্ষেপণাস্ত্র ইত্যাদি যেসব পাঠানো হচ্ছে  সেগুলি ব্যবহারের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হচ্ছে। যুদ্ধ চলাকালীন এইভাবে প্রতিনিয়ত প্রশিক্ষণ রণাঙ্গণকে দুর্বল করে দেয়।


ফাঁস হওয়া গোপন রিপোর্টে দেখা গেছে ইউজরায়েল ও দক্ষিণ কোরিয়ার ওপর নানা কৌশলে প্রবল চাপ দিচ্ছে আমেরিকা। সহযোগী দেশগুলিকে রাজি করাতে চাইছে তাদের বিদেশ নীতি বদলে ইউক্রেনকে  অস্ত্রশস্ত্র পাঠাতে। 

যেমন দক্ষিণ কোরিয়াকে  বলা হয়েছে পোল্যান্ডের মাধ্যমে অস্ত্র সরবরাহ করতে। ইজরায়েলের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতাকে কাজে লাগিয়ে তাদেরও অস্ত্র সরবরাহে বাধ্য করতে চাইছে।


সমর বিশেষজ্ঞদের  ধারণা এই গোপন তথ্য ফাঁস আখেরে ইউক্রেনের বিপদ বাড়াবে। রাশিয়ার সুবিধা হবে। আমেরিকার লক্ষ্যপূরণ জটিল হবে। রাশিয়া তাদের সামরিক গোপনীয়তা রক্ষায় সতর্ক হবে। ফলে ইউক্রেনের পক্ষে আগাম  বার্তা মিলবে না। তেমনি মার্কিন সহযোগী দেশগুলির সঙ্গে আমেরিকার  সম্পর্কে অবনতি ঘটতে পারে। আমেরিকাকে খানিকটা হলেও সন্দেহের চোখে দেখবে। 

ইতিমধ্যে ইউক্রেনের অস্বস্তি পরোক্ষে সামনে এসেছে। চীন সফর শেষে ফ্রান্সের রাষ্ট্রপ‍‌তির  তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য পশ্চিমী জোটে ফাটল ধরার অশনি সংকেত দেখা  গেছে। এতদিন রাশিয়ার  পক্ষ থেকে যেটা বার বার বলার চেষ্টা হয়েছে যে ইউক্রেনকে সামনে রেখে রাশিয়ার বিরুদ্ধে আসলে যুদ্ধ করছে আমেরিকা ও সহযোগীরা। রাশিয়াকে ধ্বংস করাই আমেরিকার লক্ষ্য। ফাঁস হওয়া তথ্য  থেকেও স্পষ্ট কীভাবে ইউক্রেন যুদ্ধকে আমেরিকা  রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিজের ও পশ্চিমী দুনিয়ার যুদ্ধ  হিসেবে গণ্য করছে।
 

Comments :0

Login to leave a comment