INDIA VS NEW ZEALAND

কোহলির হুঙ্কার এবং শামির আগুনে বোলিং, সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ড বধ ভারতের

খেলা

cricket world cup pakistan new zealand india indian cricket sports bengali news

শুভঙ্কর দাস

 

ওয়াংখেড়ে যেন বিরাট এবং শামিময়। একদিকে কোহলির হুঙ্কার এবং অন্যদিকে মহম্মদ শামির আগুনে বোলিং। তার সুবাদে বিশ্বকাপের প্রথম সেমিফাইনালে, নিউজিল্যান্ডকে ৭০ রানে হারিয়ে গত বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে হারের বদলা নিল ভারত।        

মুম্বইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে, টসে জিতে প্রথমে ব্যাটিং-এর সিদ্ধান্ত নেন ভারতীয় অধিনায়ক রোহিত শর্মা। শুরুটা ভালোই করেন তিনি এবং শুভমান গিল। কিন্তু চোটের জন্য বাধ্য হয়ে রিটায়ার্ড হার্ট-এর নিয়মানুযায়ী প্যাভিলিয়নে ফিরে আসেন শুভমান। রোহিত আউট হন ৪৭ রানে।

তবে ওয়াংখেড়েতে যেন আজ সত্যিই বিরাট ঝড় অপেক্ষা করছিল। অদম্য, অসাধারণ এবং অনবদ্য এক লড়াই বললেও হয়ত কম বলা হবে। কোহলির ক্যারিশমায় তখন মগ্ন গোটা দেশের ক্রিকেটপ্রেমীরা। এদিন ১১৭ রানের দায়িত্বপূর্ণ ইনিংস খেললেন বিরাট। কুর্নিশ জানাল গোটা ওয়াংখেড়ে। নিজের একদিনের ক্রিকেট ক্যারিয়ারের ৫০ তম শতরানটি করে ফেললেন কিং কোহলি এবং উচ্ছ্বাসে হাততালি দিতে শুরু করলেন মাষ্টার ব্লাস্টার শচিন তেন্ডুলকার। এ যেন এক মায়াবী অধ্যায়। বিশ্বের অন্যতম দুই সেরা ব্যাটসম্যানের গগনচুম্বী রেকর্ড।    

আর এই সেঞ্চুরির পরই, শচিনকে উদ্দ্যেশ্য করে সম্মান প্রদর্শন বিরাটের। বলা যেতে পারে গুরুদক্ষিণা। সেই চেনা বিরাট কোহলি, উত্তেজনায় ভরপুর। গ্যালারিতে বসে স্ত্রী অনুষ্কা শর্মা ছুঁড়ে দিলেন ফ্লাইং কিস এবং অবশ্যই তৃপ্তির হাসি নিয়েই হাততালি। ইনিংস বিরতিতে কিং কোহলি জানালেন, “আমার জীবনসঙ্গিনী মাঠে উপস্থিত, আমার হিরো বসে খেলা দেখছেন। আমি অভিভূত, এই ইমোশন মুখে বলে বোঝানো সম্ভব নয়।“

শচীন এদিন সোশ্যাল মিডিয়া এক্সের পোস্টে লিখেছেন, “জাতীয় দলের ড্রেসিংরুমে প্রথম যেদিন তোমায় দেখেছিলাম, মনে আছে, সেদিন বাকি সতীর্থরা প্র‍্যাঙ্ক করে তোমায় আমার পা ছুঁইয়েছিল। সেদিন আমি হাঁসি থামাতে পারিনি। কিন্তু খুব দ্রুত আবেগ এবং ক্রীকেটীয় নৈপুণ্যে দিয়ে আমার হৃদয় স্পর্শ করেছিলে তুমি। আমি খুব খুশি, যে সেদিনের সেই তরুণ ক্রিকেটার আজ একজন বিরাট খেলোয়াড়ে পরিণত হয়েছে।”

নিজের পোস্টে মাস্টার ব্লাস্টার আরও লিখেছেন, “আমি আরও তৃপ্ত, যে একজন ভারতীয় আমার রেকর্ড স্পর্শ করেছে। এবং সেটাও ক্রিকেট বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে মত বিশাল একটা মঞ্চে। তাও আবার আমার ঘরের মাঠে( ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে)। এর থেকে খুশির আর কিছুই হতে পারে না।”

প্রসঙ্গত, এদিন ম্যাচ দেখতে ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ব ফুটবলের অন্যতম নক্ষত্র ডেভিড বেকহ্যাম। 

কোহলিকে এদিন যোগ্য সঙ্গত দিলেন শ্রেয়স আইয়ার। বিরাট যখন ক্রিজে পড়ে থেকে লড়াই চালাচ্ছেন, তখন চালিয়ে খেলতে শুরু করেন শ্রেয়স। রানিং বিটউইন দ্যা উইকেট বজায় রেখে খেলা চালিয়ে যান দুজনই। শ্রেয়স আইয়ারও শতরান পান, তিনি করেন ১০৫ রান। তারপর ফের মাঠে নামেন শুভমান গিল। তিনি ৮০ রানে এবং কে এল রাহুল ৩৯ রানে অপরাজিত ছিলেন শেষপর্যন্ত।

নির্ধারিত ৫০ ওভারে, মাত্র ৪ উইকেট হারিয়ে ৩৯৭ রান করে ভারত। ব্ল্যাকক্যাপসদের হয়ে ৩টি উইকেট পান টিম সাউদি এবং ১টি উইকেট পান ট্রেন্ট বোল্ট।

জবাবে ব্যাট করতে নেমে আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতেই শুরু করেন নিউজিল্যান্ডের দুই ওপেনার ডেভন কনওয়ে এবং রাচিন রবীন্দ্র। কিন্তু প্রথম ব্রেক থ্রু আসে ঠিক ৬ ওভারের মাথায়। কনওয়েকে ১৩ রানে প্যাভিলিয়নে ফেরান মহম্মদ শামি, শরীর ছুঁড়ে ক্যাচ নেন কে এল রাহুল। সেখানেই শেষ নয়, ঠিক ৭.৩ ওভারে আবার শামি ঝলক। এবার শিকার হলেন রাচিন রবীন্দ্র। তাঁর সংগ্রহে ১৩ রান এবং ক্যাচ নিলেন সেই কে এল রাহুল।  

এরপর হাল ধরার চেষ্টা করেন নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন এবং ড্যারিল মিচেল। দুজন মিলে শক্তিশালী পার্টনারশিপ গড়ে তোলেন। দুর্দান্ত একটি সেঞ্চুরি করেন ড্যারিল মিচেল, তাঁর সংগ্রহে ১৩৪ রান। সেইসঙ্গে, টিম ইন্ডিয়ার ফিল্ডিং-এ কিছু গলদ ধরা পড়ল, ক্যাচ মিস নিয়ে ভাবতে হবে এখনই।

পার্টনারশিপ ভাঙতে হবে এবং উইকেট নিতে হবে, এই আগ্রাসী মনোভাব নিয়ে ঝাঁপায় ভারত। শেষমেষ ত্রাতার ভূমিকায় সেই মহম্মদ শামি। কেন উইলিয়ামসনকে ৬৯ রানে ফেরান তিনি, বাউন্ডারি লাইনের কাছে অসাধারণ ক্যাচ নেন সূর্যকুমার যাদব। তারপর মাঠে আসেন টম ল্যাথাম। ক্রিজে থিতু হওয়ার আগেই ফের শামির স্পেল। এলবিডব্লিউ হয়ে ০ রানে প্যাভিলিয়নে ফেরেন ল্যাথাম।

এরপর রবীন্দ্র জাদেজার বলে লড়াকু ৪১ রান করে প্যাভিলিয়নে ফিরে যান গ্লেন ফিলিপস। মার্ক চ্যাপম্যান করেন ২ রান। ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট বলা যেতে পারে উইলিয়ামসনের আউট। তারপর থেকে আসতে আসতে নিউজিল্যান্ড ম্যাচ থেকে হারিয়ে যায়। মিচেল স্যান্টনার ফিরে যান মাত্র ৯ রানে। অন্যদিকে টিম সাউদি ৯ রানে এবং লকি ফার্গুসন ৬ রানে আউট হন।

বোলিং বিভাগে অনবদ্য পারফর্ম করলেন মহম্মদ শামি। গুরুত্বপূর্ণ সময়ে জ্বলে উঠলেন তিনি। ফলে, সহজেই ম্যাচ বের করে নিয়ে গেল ভারত।

নিউজিল্যান্ডের ইনিংস শেষ হয় ৩২৭ রানে। ভারত জয়ী ৭০ রানে। ভারতের হয়ে ৭ উইকেট নেন মহম্মদ শামি। অন্যদিকে ১টি করে উইকেট পান যশপ্রীত বুমরা, কুলদীপ যাদব এবং মহম্মদ সিরাজ।

এদিন ম্যাচের সেরা নির্বাচিত হন মহম্মদ শামি।

Comments :0

Login to leave a comment