বন্যপ্রাণীদের তাড়াতে আরও এক অমানবিক ঘটনা পশ্চিম মেদিনীপুরে। জঙ্গলমহলে হাতির সংখ্যা সাড়ে চারশোর বেশি। খাদ্যের সঙ্কটের কারণে লোকালয়ে হাতির পাল তান্ডব চালায়।  হাতির পালকে তাড়াতে ছোঁড়া হচ্ছে একের পর এক জ্বলন্ত আগুনের গোলা। আগুন লাগানো সেই মশাল গিয়ে পড়ছে হাতির শরীরে। আগুন লাগার কারণে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে হাতি। এমন দৃশ্য উঠে পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রাম জেলায়। গভীর রাতে খড়্গপুর বন বিভাগের অন্তর্গত হাড়িভাঙা গ্রামে হাতির পালের দিকে একের পর এক জ্বলন্ত আগুনের গোলা ছোড়া হয়। আর সেই আগুন পড়ে হাতির ওপর। এক শাবক দগ্ধ হয়েছে বলে অভিযোগ। বন কর্মী এবং হুলা পার্টির সদস্যদের সামনেই হাতির পালকে লক্ষ্য করে ছোঁড়া হয় আগুনের গোলা। এর আগেও ঝাড়গ্রাম শহরে ১২ টি হাতির একটি দল লোকালয়ে ডুকে পড়লে, হাতি তাড়াতে গেলে হাতির পাল হুলা পার্টিকে তাড়া করে। তখন জ্বলন্ত আগুনের হুলা ছুঁড়ে মারায় এক প্রসূতি হাতির শরীরে সেই হুলা ঢুকে যায়। সেই হাতি ভোর রাত থেকে সারাদিন কাতরাতে কাতরাতে মারা যায়। সেই ঘটনার পরেও বন দপ্তরের শিক্ষা নেয়নি। এসদিনের এই ঘটনার ভিডিয়ো সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তেই তীব্র প্রতিক্রিয়া শুরু হয়েছে। ছড়িয়ে পড়া ভিডিয়োতে দেখা যাচ্ছে, পিছন থেকে হাতির দিকে ছোড়া হচ্ছে আগুনের জ্বলন্ত গোলা। দাউদাউ করে জ্বলছে। আর প্রাণভয়ে ছুটছে হাতির পাল। ভিডিয়োতে আরও দেখা গিয়েছে, একটি শাবক আগুনে দগ্ধ হয়ে যাওয়ার মা হস্তিনী উন্মত্ত চিৎকার করছে আর ছোটাছুটি করছে। (যদিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও যাচাই করেনি গণশক্তি ডিজিটাল) তবে বনদপ্তর সূত্রে জানা গেছে এই ঘটনা ঘটেছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার খড়্গপুর বনবিভাগের কলাইকুন্ডা রেঞ্জের সাঁকরাইল বিটের হাড়িভাঙ্গা এলাকায়। বিষয়টি নিয়ে নিন্দার ঝড় উঠেছে। পশু প্রেমীদের সমালোচনার মুখে পড়ে এই ঘটনায় উপযুক্ত পদক্ষেপ নেবার আশ্বাস দিয়েছেন খড়্গপুরের বিভাগীয় বন আধিকারিক (ডিএফও) মণিশ কুমার যাদব।   
জানা গিয়েছে, প্রায় ২০টি হাতির একটি দল ঢুকে পড়েছিল হাড়িভাঙ্গা এলাকায়। তাতেই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন এলাকার সাধারণ মানুষ। বৃহস্পতিবার রাতেই ওই এলাকা থেকে হাতির পালকে সরিয়ে দিতে অভিযান চালায় বনকর্মী এবং হুলা পার্টির সদস্যরা। হাতিগুলিকে সাঁকরাইল থেকে চাঁদাবিলার দিকে পাঠানো হচ্ছিল। সেই সময়ই হাতির দিকে তাক করে একদল যুবক জ্বলন্ত হুলা ছুঁড়তে শুরু করেন। আতঙ্কে ও যন্ত্রণায় ছোট-বড় হাতিগুলি কাতরাতে থাকে। হাতির যন্ত্রণা দেখেই অনেকেই উল্লাস করতে শুরু করে এমন দৃশ্যও উঠে আসে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে। ঘটনার প্রতিবাদ জানান পশুপ্রেমীরা। খড়্গপুরের বাসিন্দা কমলজিৎ সিং-য়ের অভিযোগ, বনকর্মীদের উপস্থিতিতেই হাতিকে তাক করে আগুন ছোঁড়া হয়েছে। সেখানে হুলা ছোঁড়া হলেও বন দপ্তর কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। এই অমানবিক ঘটনায় একাধিক হাতি আহত হয়েছে বলেও দাবি পশুপ্রেমীদের। যদিও বন বিভাগের দাবি, কোনও হাতিই আহত হয়নি। খড়্গপুরের ডিএফও সাংবাদিকদের জানান,  হাড়িভাঙ্গা এলাকায় যখন হাতির দল রাস্তা পার হচ্ছিল তখনই গ্রামবাসীদের কেউ তাঁদের লক্ষ্য করে আগুন ছুঁড়েছে বলে জানতে পেরেছেন তাঁরা। সোশ্যাল মিডিয়ার ছবি দেখে কারা এই আগুনের গোলা ছুঁড়েছিল তাদের খুঁজে বার করার চেষ্টা করা হচ্ছে। যারা হাতিকে লক্ষ্য করে হুলা ছুঁড়েছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।