HIGH COURT

কড়া হাইকোর্ট, সোহমের মারধরে তদন্তের ভার কমিশনারেটকে

রাজ্য কলকাতা

calcutta high court sohm chakraborty tmc bjp cpim bengali news

পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার দু’টি মামলায় কড়া অবস্থান নিলেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিনহা। তৃণমূল বিধায়ক সোহম চক্রবর্তীর মারধরের ঘটনায় তদন্তের ভার টেকনো সিটি থানার কাছ থেকে কেড়ে নিয়ে বিধাননগর কমিশনারেটের গোয়েন্দা বিভাগকে দিয়েছেন তিনি। 
একইসঙ্গে হুগলীর চণ্ডীতলায় এক ছাত্রীর উপর প্রাণঘাতী হামলার ক্ষেত্রেও পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ ওঠে। সেই ক্ষেত্রেও স্থানীয় থানা এবং পুলিশ জেলার থেকে নিয়ে তদন্তভার অন্যত্র হস্তান্তর করেন বিচারপতি সিনহা। 

প্রসঙ্গত, ৭ জুন নিউটাউনের এক রেস্তোরাঁর মালিককে মারধর করেন সোহম। তার ভিডিও বেরিয়ে পড়ে। সোহম নিজেই বলেন যে তাঁর নেতা অভিষেকের নামে কিছু বললে এমন হবে। রেস্তোরাঁর মালিক আনিসুর আলমকে মারধর করেন তিনি। অভিযোগ, বৃহস্পতিবার বারাসত আদালতে এসে আগাম জামিন নেওয়ার সময়েও নিজের প্রভাবও দেখান তিনি। আদালতের সরকারি আইনজীবীর সঙ্গে ‘সৌজন্য সাক্ষাৎ’ সেরে যান অভিযুক্ত বিধায়ক। তদন্ত পুলিশ করলে মামলায় সোহমের বিরুদ্ধে সওয়াল করার কথা সরকারি আইনজীবীর!

৭ জুন থেকেই স্থানীয় টেকনো সিটি থানার বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ করেছিলেন আনিসুর আলম। শুক্রবার সেই সংক্রান্ত মামলার শুনানিতে বিচারপতি সিনহা নির্দেশ দেন, বিধাননগর কমিশনারেটের গোয়েন্দা বিভাগের সহকারী কমিশনার ঘটনার তদন্ত করবেন। টেকনো সিটি থানার কাছ থেকে তদন্ত কেড়ে নেওয়া হয়। একইসঙ্গে আনিসুরকে সুরক্ষা দিতে হবে, যাতে তাঁর সম্পত্তির কোনও ক্ষতি না হয়। 
সরকারের তরফে বলা হয়, পুলিশের তরফে কোনও গাফিলতি ছিল না। পুলিশ ‘এসকর্ট’ করে আনিসুরকে টেকনো সিটি থানায় নিয়ে গিয়েছে। যদিও সিসিটিভি’তে দেখা গিয়েছে, কার্যত দাগী আসামীর মত টেনে হিঁচড়ে আনিসুরকে পুলিশের গাড়িতে তোলা হয়েছে। থানায় নিয়ে গিয়ে প্রাথমিক ভাবে পুলিশ সোহম চক্রবর্তীর নির্দেশে আনিসুরকে হেপাজতেও নিয়ে নেয়। পরবর্তীকালে বিভিন্ন স্তরে প্রতিক্রিয়ার জেরে ছেড়ে দেওয়া হয় তাঁকে। 

বিচারপতি সিনহার বেঞ্চে পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অপর অভিযোগটি জানান হাজরা ল’ কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের এক ছাত্রী। হুগলীর চন্ডীতলা থানা এলাকার আইয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের শ্যামসুন্দরপুর গ্রামের ওই ছাত্রী কলকাতায় পড়াশোনা করেন। ভোট দিতে বাড়িতে যান ওই ছাত্রী। তখন দূর সম্পর্কের কয়েকজন আত্মীয় ছাত্রীর বাবার উপর চাপ তৈরি করে বলে, মেয়ের পড়াশোনা চালিয়ে কী হবে, মেয়ের বিয়ে দিয়ে দিন। ঘটনার প্রতিবাদ করায় ছাত্রীর উপর চড়াও হয় অভিযুক্তরা। ছুরি দিয়ে হাতে গভীর আঘাত করা হয়। 
তারপর শুরু হয় পুলিশি নিষ্ক্রিয়তা। ১৭ মে’র এই ঘটনায় ছাত্রীটি ভয় পেয়ে যায়। তাঁর পরিবর্তে তাঁর বোন চন্ডীতলা থানায় অভিযোগ জানাতে যান। অভিযোগ, পুলিশ অভিযোগকারিণীকে ৬ ঘন্টা থানায় বসিয়ে রেখে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়। এই পরিস্থিতিতে ২০ মে থানায় ই-মেলের মাধ্যমে অভিযোগ জানান আক্রান্ত ছাত্রী। হুগলি গ্রামীণ পুলিশ জেলার এসপি’কেও ই-মেল করে অভিযোগ জানান তিনি। কিন্তু তারপরেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

বৃহস্পতিবার হাইকোর্টে বিচারপতি অমৃতা সিনহার এজলাসে মামলার ‘মেনশনিং’ হয়। শুক্রবার ছিল শুনানি। আদালত রায় দিয়েছে, এই ঘটনায় চণ্ডীতলা থানার ডিউটি অফিসার, থানার ওসি এবং হুগলী গ্রামীণ পুলিশ জেলার এসপি’র বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার মামলা চলবে।

 আইনজীবী মহলের বক্তব্য, ছাত্রীটি ভারতীয় দন্ডবিধির ৩৫৪ ধারা বা শ্লীলতাহানী এবং ৩২৬ ধারা বা প্রাণঘাতী হামলার অভিযোগ দায়ের করেছেন। ভারতীয় দণ্ডবিধিতে স্পষ্ট বলা হয়েছে, ৩৫৪ নম্বর ধারায় মামলা হলে পুলিশ অভিযোগ নিতে বাধ্য। মামলা দায়ের করতে অস্বীকার করলে সংশ্লিষ্ট পুলিশ আধিকারিকের বিরুদ্ধে ‘ক্রিমিনাল অ্যাকশন’ নেওয়া হবে। তারফলেই পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার মামলা চলবে। 
অপরদিকে ১২ দিনের বেশি সময় ধরে পুলিশ নিষ্ক্রিয় থাকলেও, মামলা দায়েরের খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার রাতে হুগলী গ্রামীণ পুলিশের এসপি নিজে ছাত্রীটির বাড়ি এসে বলেছেন, ‘‘এসব তো আমাকে আগে জানাতে পারতেন। কেন শুধু শুধু মামলা করতে যান। আমায় বলুন কী হয়েছে, আমি দেখছি।’’

কিন্তু ছাত্রীটি কলকাতার মেসে চলে আসায় পুলিশ সুপার বিশেষ সুবিধা করতে পারেননি। 

অমৃতা সিনহা এই মামলার ক্ষেত্রে ছাত্রীটির সম্পূর্ণ সুরক্ষার নির্দেশ দিয়েছে। তিনি বলেছেন,  কোনও রকম সালিশি সভা কিংবা পঞ্চায়েতের মাধ্যমে অভিযোগের নিষ্পত্তি করা যাবেনা। একইসঙ্গে তদন্তের ভার হুগলি গ্রামীণ পুলিশের থেকে কেড়ে নিয়ে আদালত জানিয়েছে, চন্দননগর কমিশনারেটের ডেপুটি কমিশনার পদমর্যাদার কোনও মহিলা অফিসার ঘটনার তদন্ত করবেন। 
দুটি মামলার ক্ষেত্রে অভিযোগকারীদের তরফে আইনজীবী ছিলেন শামিম আহমেদ, ইমতিয়াজ আহমেদ, অর্ক ভট্টাচার্য, সালোনি ভট্টাচার্য এবং গুলশন আরা পরভিন।

Comments :0

Login to leave a comment