Panchayat election Malda

মালদহে পুলিশ সুপার ও জেলা শাসককে সরানোর দাবি সিপিআই(এম)’র

জেলা

মালদহে পঞ্চায়েত নির্বাচনে জেলা শাসক নীতিন সিংহানিয়া ও পুলিশ সুপার প্রদীপ কুমার যাদবের নেতৃত্বে গোটা সাধারণ ও পুলিশ প্রশাসন রাজ্যের শাসক দলের হয়ে দলদাসের ভূমিকা পালন করছে। সিপিআই(এম) ও কংগ্রেস দলের নেতা কর্মীদের  মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে জামিন অযোগ্য ধারায় গ্রেপ্তার করছে সঙ্গে হয়রাণ করছে। অন্যদিকে শাসক দলের কর্মীদের এইসব হামলায় মদত দিচ্ছে বা হামলা চালাতে সহযোগিতা করছে। আর এসব কাজে প্রত্যক্ষভাবে মদত দিচ্ছেন জেলা শাসক ও পুলিশ সুপার। তাই দলদাস জেলা শাসক ও পুলিশ সুপারকে অবিলম্বে সারিয়ে দেওয়ার দাবি জানালেন সিপিআই(এম) এর জেলা সম্পাদক অম্বর মিত্র ও কংগ্রেস নেতা ঈশা খান চৌধুরী। তারা বলেন ঐ দুজনকে ঐ পদ থেকে সরাতে রাজ্যপাল, রাজ্য নির্বাচন কমিশন ও অন্যান্যদের কাছে দাবি জানানো হবে। প্রয়োজনে হাইকোর্টে যাওয়া হবে।


অম্বর মিত্র বলেন বৃহষ্পতিবার পঞ্চায়েত নির্বাচন। নির্বাচনে তৃণমূল ও বিক্ষুব্ধ তৃণমূলের মধ্যে সংঘর্ষ হচ্ছে। আর এইসব ঘটনায় পুলিশ সিপিআই(এম) ও কংগ্রেস কর্মীদের জামিন অযোগ্য মিথ্যা মাললায় জড়িয়ে মামলা দিচ্ছে, হয়রানি করছে। মানিকচকে এরিয়া কমিটির সম্পাদক আমিরুল হক ও রাজ্য প্রতিবন্ধী সম্মিলনীর জেলা সম্পাদক সারেক আলির বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হচ্ছে অন্য থানায় মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে। এর কারণ হল ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে ভোট লুট করেও এদেরকে হারাতে পারেনি। একই ভাবে হরিশ্চন্দ্রপুরে সুলতাননগরে পাশের রাজ্য থেকে বহিরাগত সমাজবিরোধী এনে ভোট লুঠের চেষ্টা চলছে। শোনা যাচ্ছে দুপুরের পর এদের ব্যবহার করে বুথ দখল করা হবে। প্রায় প্রতিটি ব্লকে বিরোধী প্রার্থী ও কর্মীদের বিরোধিতা করলে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছে। আসলে পুলিশ ও প্রশাসন শাসক তৃণমূল নেতাদের হয়ে কাজ করছে। শোনা যাচ্ছে হাইকোর্টের নির্দেশ সত্ত্বেও সিভিক ভলান্টিয়ারদের পুলিশের পোষাক পড়িয়ে কাজ করানো হচ্ছে। এমনকি এও ভোটারদের বলা হচ্ছে কাকে ভোট দিচ্ছে তার ছবি তুলে বাইরে এসে তৃণমূলকে দেখাতে হবে। দুটোই নির্বাচন আচরণবিধি ও আদালতের আদেশের পরিপন্থী তাই আমরা আমাদের পোলিং এজেন্টকে ও কর্মীদের এর বিরুদ্ধে সতর্ক থাকতে যেমন বলেছি তেমনি বুথের নির্দিষ্ট সীমানার বাইরে থাকা কর্মীদের বলেছি ঐসব সন্দেহজনক পুলিশ কর্মীদের ছবি তুলে রাখতে যাতে ওদের ছবি আদালতে পেশ করে প্রশাসন ও সিভিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যায়।


কংগ্রেস নেতা ঈশা খান চৌধুরীও পুলিশ ও প্রশাসনের ভূমিকার তীব্র সমালোচনা করে বলেন বিরোধী দলের প্রার্থী, নেতা ও কর্মীদের বিরুদ্ধে, বিশেষতঃ কংগ্রেস ও সিপিআই(এম) দলের প্রার্থী, নেতা কর্মীদের মিথ্যা মামলায় জামিন অযোগ্য শাসক দলের কথা অনুযায়ী কাজ করছে। কালিয়াচক থানার পুলিশ নওদা যদুপুরের কংগ্রেস নেতা জাকির হোসেনকে তৃণমূল নেতা বকুলের কথা মতো মিথ্যা মামলায় জড়িয়েছেন গত ৫ই জুলাই ওখানে মিথ্যা ঘটনার অভিযোগ এনে। অথচ স্থানীয় মানুষ থানায় গিয়ে বলেছে ঐ ঘটনা ঘটেনি। আর অভিযোগকারী জাহিদুর রহমানকে থানা হাজির করাতে পারছে না। থানার আইসিকে্ এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি এই বিষয়ে কিছু বলতে অস্বীকার করেন। মনে করা হচ্ছে অভিযোগকারীকে দিয়ে অভিযোগ করিয়ে তৃণমূলীরা কোথাও আটকে রেখেছে।


ঈশা খান চৌধুরী বলেন মানিকচকের গোপালপুর অঞ্চলে কংগ্রেস প্রার্থী ও কর্মীদের মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে গ্রেপ্তার করতে চেষ্টা করে পুলিশ। এর বিরুদ্ধে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হলে আদালত ১৫ জুলাই পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না বলে আদালত রায় দিলে পুলিশ থেমে যায় এবং আমাদের প্রার্থী কর্মীরা কাজ করতে পারছে।
নেতৃবৃন্দ বলেন ভোট লুট রোধ করতে মানুষ সজাগ ও সতর্ক। পুলিশ ও প্রশাসন শাসক দলকে ভোট লুট করতে সহায়তা করার চেষ্টা করলে কাউকে ছেড়ে কথা বলা হবে না।সাংবাদিক বৈঠকে অম্বর মিত্র ও ঈশা খান চৌধুরী।


৭ই জুলাই রাত পোহালেই রাজ্যে দশম পঞ্চায়েত ভোট। ১৯৭৭ সালে রাজ্য প্রথম বামফ্রন্ট সরকার শপথ গ্রহণের পর পরই জ্যোতি বসু রাইটার্স থেকে ঘোষণা করেন গ্রামের উন্নয়ন রাইটার্স থেকে নয় তা করবেন গ্রামের মানুষ। পঞ্চায়েত নির্বাচনের মাধ্যমে তা গ্রামের মানুষের হাতে তুলে দেওয়া হবে। এরপরই নূতন পঞ্চায়েত আইন তৈরী করে ১৯৭৮ সালে প্রথম পঞ্চায়েত নির্বাচন।গড়ে ওঠে জনগণের পঞ্চায়েত। কিন্তু ২০১১ সালে রাজ্যে বামফ্রন্ট সরকারের পতনের পর যে সরকার ক্ষমতায় এসেছে তা বিগত ১২ বছরে জনগণের পঞ্চায়েতকে লুটেরাদের পঞ্চায়েতে পরিণত  হয়েছে। আর তাই পঞ্চায়েতকে জনগণের পঞ্চায়েতে পরিণত করার লক্ষ্যে শুরু হয়েছে লড়াই। আর ৮ই জুলাই যে নির্বাচন হচ্ছে তা আরও একটি কারণে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই দিনটি জনগণের পঞ্চায়েত গড়ে তোলার রূপকার জ্যোতি বসুর জন্মদিন। তাই  সিপিআই(এম) রাজ্যের প্রতিটি বুথের নির্দিষ্ট সীমানার বাইরে জ্যোতি বসুর প্রতি শ্রদ্ধা জানান হবে।


মালদহ জেলার ১৫টি ব্লকের জেলা পরিষদ আসন  ৪৩, পঞ্চায়েত সমিতি ৪৩৬, গ্রাম পঞ্চায়েতের আসন ৩১৮৬। বুথ সংখ্যা ৩০৩৫ এবং ভোটার সংখ্যা ২৯০২২২৫। সবচেয়ে বেশী ভোটার কালিয়াচক-১ ব্লকে, সংখ্যা ৩০৩৩৯৩। সবচেয়ে কম ভোটার বামনগোলা ব্লকে সংখ্যা ১১৯৭৪৯।

Comments :0

Login to leave a comment