দীর্ঘ লড়াইয়ের ফলে ৫ মাস ৯ দিন পর কাজ ফিরে পেলেন ৩৯ জন ঠিকা শ্রমিক। গঙ্গা তীরবর্তী মিলেনিয়াম পার্কে দীর্ঘদিন ধরে কর্মরত ৩৯ জন মালি, নিরাপত্তা কর্মী ও সাফাই কর্মীরা গত বছর ২৩শে ডিসেম্বর আচমকা চাকরি হারিয়েছিলেন। মুখ্যমন্ত্রীর খামখেয়ালে সেইদিনই কলকাতা মিউনিসিপাল ডেভলপমেন্ট অথরিটি (কেএমডিএ)-র কাছ থেকে মিলেনিয়াম পার্ক পরিচালনার দায়িত্ব হস্তান্তরিত হয় কলকাতা কর্পোরেশনের হাতে।
কেএমডিএ পার্ক হস্তান্তর করার সাথে সাথেই পার্কে দীর্ঘদিন কর্মরত শ্রমিকদের দায়দায়িত্ব ঝেড়ে ফেলে নিজের ঘাড় থেকে। অন্যদিকে কলকাতা পৌরসভা পার্কের দায়িত্ব নিলেও পার্কের কর্মীদের দায়িত্ব নেয়নি। যার ফলে ২৩শে ডিসেম্বর থেকে কাজ হারান এই ঠিকা শ্রমিকরা। পার্কের মালিকানা হস্তান্তরিত হলেও শ্রমিকদের ছাঁটাই করা চলবে না, আগাগোড়া এটাই ছিল সিআইটিইউ-এর দাবি। এই দাবিকে সামনে রেখে লাগাতার আন্দোলন চালিয়ে গিয়েছে সিআইটিইউ। পৌরসভাকে কাজ হারানো শ্রমিকদের নিয়োগ করতে হবে এই দাবিতে ডিসেম্বরেই লড়াইতে নামে সিআইটিইউ অনুমোদিত কলকাতা কন্ট্রাক্টর্স ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন।
কর্পোরেশন ও কেএমডিএ কর্তৃপক্ষের কাছে বারংবার দাবিপত্র পেশ করা হয়, আলোচনায় বসা হয় মেয়র পারিষদ (উদ্যান) এবং মিউনিসিপাল কমিশনারের সাথেও। প্রথম থেকেই সর্বাত্মক সহযোগিতা করেন কর্পোরেশনের স্থায়ী শ্রমিকদের সিআইটিইউ অনুমোদিত ইউনিয়নের নেতৃত্ব। গত ২০শে মার্চ কলকাতা কর্পোরেশনের বাজেট অধিবেশনের সময় ঠিকা শ্রমিকদের বৃহত্তর বিক্ষোভ কর্মসূচীতেও মিলেনিয়াম পার্কের কাজ হারানো শ্রমিকদের দাবি উত্থাপিত করেন ইউনিয়ন নেতৃবৃন্দ।
অবশেষে গত ৩০ ও ৩১শে মে পার্কের ৩৯জন ঠিকা শ্রমিককে নতুন এজেন্সীর অধীনে নিয়োগ করা হয়, চাকরি ফিরে পান তাঁরা। দীর্ঘ ৫ মাস কোন রোজগার ছাড়া সংসার প্রতিপালনের কষ্ট সত্বেও দাঁতে দাঁত চেপে যেভাবে শ্রমিকররা ইউনিয়নের নেতৃত্বে লড়াইতে ছিলেন তার জন্য তাঁদের অভিনন্দন জানিয়েছেন কলকাতা কন্ট্রাক্টর্স ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক খোকন মজুমদার। ইউনিয়নের অন্যতম নেতা সৌম্যজিৎ রজক এদিন বলেন, ‘‘এক বছরের মধ্যে আমাদের ইউনিয়নের নেতৃত্বে দু'টি গুরুত্বপূর্ণ খণ্ড সংগ্রামে জিতলাম। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঠিকা শ্রমিকদের ২১ মাসের বকেয়া মজুরি আদায় এবং তারপর মিলেনিয়াম পার্কের ঠিকা শ্রমিকদের রুটিরুজি রক্ষা। এই দুটি সাফল্য অন্যান্য ক্ষেত্রের ঠিকা শ্রমিকদেরও ইউনিয়নবদ্ধ হতে এবং আন্দোলন করতে অনুপ্রাণিত করবে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে স্থায়ী কর্মচারিদের সংগঠন এবং কর্পোরেশনের ক্ষেত্রে স্থায়ী শ্রমিকদের ইউনিয়ন নেতৃত্ব যেভাবে ঠিকা শ্রমিকদের লড়াইকে প্রতি পদে সাহায্য করেছেন সেটাও অন্যত্র অনুকরণযোগ্য। এই সংগ্রামের অভিজ্ঞতা থেকে ভবিষ্যতের বহু রসদ সংগ্রহ করার আছে।’’
Comments :0